বটচান- যে ছেলেটা সৎ থাকতে চেয়েছিল। ছোটবেলা থেকে বেশ দুরন্ত ছিল মাস্টার ডার্লিং বা বটচান। যেমন কেউ যদি বলত ছাদ থেকে লাফ দিয়ে দেখাও, আগে পরে না ভেবে সে লাফ দিত, ছুরির ধার পরীক্ষা করতে হাত... See more
বটচান- যে ছেলেটা সৎ থাকতে চেয়েছিল। ছোটবেলা থেকে বেশ দুরন্ত ছিল মাস্টার ডার্লিং বা বটচান। যেমন কেউ যদি বলত ছাদ থেকে লাফ দিয়ে দেখাও, আগে পরে না ভেবে সে লাফ দিত, ছুরির ধার পরীক্ষা করতে হাত কেটে দেখাতেও দু’বার ভাবেনি। পড়া শেষ করে সে এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষকতার চাকরী নিয়ে চলে যায়। যেখানে তাঁর প্রিয় নুডলস-ড্যাঙ্গো খেতে নিষেদ্ধাজ্ঞা জারি করে স্কুলের প্রধান শিক্ষক রেড শার্ট এবং প্রিন্সিপাল ব্যাজার এবং ক্লাউন নামের আর এক শিক্ষক। চিরজীবন অন্যায়ের প্রতিবাদ করা “ইয়েডো কিংবা টোকিও কিড” বটচান কীভাবে এই অত্যাচারের সমাধা করবে? আদৌ কি পারবে? কেউ কি তাকে সাহায্য করবে আদৌ? এই অন্ধকার অঞ্চল থেকে আসবে কি আলোয়? ১৯০৬ সালে লেখা এই বইটি। মজার ছলে, বাস্তবতা লেখক তুলে এনেছেন, এই ঘটনা ১০০ বছরের পরেও এখন ও বাস্তব। এসে গেছে!!!!
নিজেকে প্রমাণ করতে আপনি কী কী করতে পারেন? ছাদ থেকে লাফ দিতে বললে দিবেন? ছু রির ধার পরীক্ষা করতে গিয়ে নিজের আঙুল কেটে ফেলবেন? বটচান করেছিল এই কাজগুলো। বাবা-মায়ের ছোটো সন্তান বটচান। কিন্তু শৈশবে বাবা-মা কিংবা বড়ো ভাইয়ের থেকে সেরকম ভালোবাসা পায়নি। বটচানকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা, উৎসাহ দিয়েছিলেন একজন, তাদের গৃহপরিচারিকা কিয়ো। বাবা-মাকে হারানো ছোট্ট বটচান জীবনের বাস্তবতা খুব অল্প বয়সেই টের পেয়েছিল। শৈশব-কৈশোর পার করে তরুন বটচান শিক্ষকতার চাকরি নিয়ে প্রত্যন্ত এক অঞ্চলে যায়। তবে ঝামেলা যেন বটের পিছু ছাড়ে না। এমন এক মিডল স্কুলের শিক্ষক হয় সে, যেখানে নিয়ম-শৃঙ্খলার বালাই নেই। ছাত্ররা তাকে নিয়ে নানা উপহাস করে। কখনও বোর্ডে তার নামে হাস্যকর মন্তব্য লিখে কিংবা নাইট ডিউটিতে তার বিছানায় ঘাসফড়িং ছেড়ে দিয়ে। চাকরি শুরুর কিছুদিনেই বটচান বিরক্ত হয়ে যায়। এমন স্কুল যেখানে উচ্চ পর্যায়ের লোকেরা অসৎ, নীতিহীন। এমন এক জায়গা যেখানে তার প্রিয় নুডুলস কিংবা ড্যাঙ্গো খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। যেখানে প্রতিবাদ করতে গেলে সকলেই বিপক্ষে চলে যায়। সহজ এবং সৎ ভাবে থাকতে চাওয়া বটচান সকলের বিপক্ষে চলে যেতে এক মুহুর্ত দ্বিধা করে না। এতে যদি কোগার মতো তাকে বদলি হতে হয় কিংবা সজারুর মতো তাকে পদত্যাগ করতে হয়, হোক। তবুও লাল শার্ট, ব্যাজার কিংবা ক্লাউনের মতো ছলচাতুর করা লোকের সাথে আপোস করবে না। প্রতিকূল এই পরিবেশে বটচান তথা ❛টোকিও কিংবা ইয়েডো কিড❜ কি পারবে এসব অ ত্যা চারের সমাধান করতে? বা কোন বন্ধুসুলভ কাউকে পাবে কি? পাঠ প্রতিক্রিয়া: ❛বটচান- যে ছেলেটা সৎ থাকতে চেয়েছিল❜ নাতসুমি সোসেকির লেখা জাপানিজ বই। বইটি ১৯০৬ সালে প্রকাশ হয়েছিল। বইটি ১৫-২৫ বছর বয়েসীদের জন্য সুখপাঠ্য। লেখক আজ থেকে ১০০ বছরেরও বেশি আগে লেখা বইতে গল্পের আকারে সমাজের অসংগতি, সমস্যা, খারাপ লোকের সমাজে টিকে থাকার ব্যাপারগুলো খুব সুন্দর করে প্রকাশ করেছেন। এই সমস্যাগুলো শতবছর পরের এই বর্তমানেও দৃশ্যমান। কেউ ভালো থাকতে চাইলে, সৎ পথে থাকতে চাইলে তার বিরুদ্ধচারণ করার লোকের অভাব হয় না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে লোকে আপনাকে কোণঠাসা করে দিবে এটাই অলিখিত নিয়ম। আপনার দৃঢ়তা, সততা দিয়ে এসব মোকাবিলা করতে হবে। যেমনটা প্রতিনিয়ত বটচান করে গেছে। সমাজে তেল দিয়ে চলা, অন্যায়ের সাথে আপোষ করা লোকেরা হাসিমুখে কথা বলে আপনার বিপদ ঘটাবে আবার উপরে উপরে সস্তা সহমর্মিতা দেখাবে। বটচান বইতে লেখক লাল শার্ট, ক্লাউন বা ব্যাজারের মতো চরিত্রগুলোর মাঝে তা ফুটিয়ে তুলেছেন। এই চরিত্রগুলো শুধু কল্পনা তথ্যা ফিকশনেই না বরং ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আমাদের আশেপাশেই। বটচানের ছাত্রদের করা আচরণ একটা বড়ো শিক্ষা দেয়। শিক্ষক আমাদের পরম শ্রদ্ধার পাত্র। কিন্তু আমরা অনেকসময়ে-ই শিক্ষকদের প্রাপ্য সম্মান দিই না। তাদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করি। কিন্তু আমাদের করা হাসি-ঠাট্টা পরম শ্রদ্ধার শিক্ষকের উপর কেমন প্রভাব ফেলে তা ভেবে দেখি না। শিক্ষকের নিজস্ব জীবন রয়েছে, রয়েছে আবেগ অনুভূতি। সেসবে আঘাত করার আগে আমাদের ভাবা উচিত তাদের দ্বারা-ই আমরা জ্ঞানের আলোতে আলোকিত হতে পারি। বইটা গল্প হলেও শিক্ষণীয়। অনুবাদ, সম্পাদনা: বাংলা ভাষায় বটচান বইটির অনুবাদ করেছেন তাসফিয়া প্রমি আপু। এর আগে আপুর ই-বুক অনুবাদ এবং মেলায় প্রকাশিত জেন বইটির অনুবাদ পড়েছি। ভালো ছিল। উন্নতি করেছেন ই-বুকের থেকে জেন এর অনুবাদ আমার বেশ ভালো লেগেছিল। ঝরঝরে অনুবাদ ছিল। বটচান বইয়ের অনুবাদ সাবলীল ছিল। তবে আমার মনে হয়েছে অনুবাদে বা বাক্য গঠনে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। এক প্যারাতে একই শব্দের বহুল ব্যবহার না করে কমা বা অন্যভাবেও লেখা যেত। একটা প্যারায় ❛আমরা❜ শব্দের ব্যবহার হয়েছিল চার থেকে পাঁচবারের মতো। স্বাভাবিকভাবেই পড়তে একটু অসুবিধা হচ্ছিল। একই লাইনে পাশাপাশি একই শব্দের ডাবল ব্যবহার ছিল। এটাকে টাইপো ধরে নেয়া যায়। এছাড়াও, ই/য় এর ব্যবহারে সমস্যা ছিল। এটা আপুর আগের অনুবাদের সফট কপি পড়ার সময়ে বলেছিলাম। ❛এটায়, যেটায়, সেটায়, ইচ্ছায়, চায়, এমনটায়❜- এই শব্দগুলো পড়তে অস্বস্তি হচ্ছিল। এগুলো অনুবাদক ছাড়াও সম্পাদকের কিছুটা দায়িত্ব ছিল শুধরে দেওয়ার। বানানেও মোটামুটি সম্পাদনার ঘাটতি ছিল। আপু সামনে আরো অনুবাদ করবেন এবং ভুলগুলো থেকে উন্নতি করবেন আশা করি। টুকটাক এসব সমস্যা ছাড়া অনুবাদ আমার কাছে সাবলীল লেগেছে। আপুর নতুন অনুবাদ কোনটা আসবে সে অপেক্ষায় থাকবো। উৎসর্গপত্রটা আমার খুব খুব ভালো লেগেছে। প্রচ্ছদ, প্রোডাকশন: বইটার প্রচ্ছদ আমার খুব পছন্দ হয়েছে। নামলিপিটাও নজরকাড়া। তবে বই নিয়ে কিছু মন্তব্য না করলেই নয়। বইয়ের যে পাতায় বিভিন্ন তথ্য দেয়া থাকে, যেমন- প্রকাশনীর নাম, মূল লেখকের নাম, আইএসবিএন, প্রকাশকের নাম, প্রকাশনীর ঠিকানা, মূল্য, প্রচ্ছদকারের নাম ইত্যাদি ইত্যাদি সেখানে কি অনুবাদকের নামটা দেওয়া যেত না? বটচান বইয়ের অনুবাদকের নাম বইয়ের তথ্য সম্বলিত অংশে নেই। ব্যাপারটা আমার কাছে দৃষ্টিকটু লেগেছে। আশা করি পরবর্তী মুদ্রণে প্রকাশক ব্যাপারটা নজর দিবেন। এত সুন্দর প্রচ্ছদ, এত সুন্দর চকচকে জ্যাকেট কভারের বইয়ের ভেতরে গেলে মন খারাপ লাগে। কেন? পৃষ্ঠার মান আমার কাছে নিম্নমানের লেগেছে। পাতলা কাগজ, এপাশ-ওপাশের লেখা দেখা যায়। ১৪৪ পেইজের বই ৩৫০ টাকা মুদ্রিত মূল্যে এর চেয়ে উন্নতমানের পেইজ দেয়া যেত না? দামের ফিরিস্তি জানি। তবে এই দামে এইরকম পৃষ্ঠা সংখ্যায় উন্নতমানের পেইজের বই আছে কিন্তু।