সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ কথাসাহিত্যে নতুন স্বর ও ভাষাশৈলী সৃষ্টির প্রয়াসে স্বাতন্ত্র্য অর্জন করেছেন। বাংলা ছোটগল্প, উপন্যাস এবং নাট্য রচনায় তিনি কাহিনি বর্ণনার প্রচল প্রথা এড়িয়ে নির্মাণ করেন মানবমনস্তত্ত্বের অন্তর্নিহিত জটিল চিন্তার আখ্যান। পরিস্থিতি ও চরিত্রের মনোজগৎ উন্মোচনে অবলীলায় তিনি গ্রহণ করেছেন দর্শন ও শিল্পান্দোলনের নানান রূপরীতি। তবে তাঁর কথাসাহিত্য কেবল নন্দনতত্ত্বের রূপান্বয়ে সাধিত কোনো উচ্চাভিলাষী চিন্তার বহিঃপ্রকাশ থাকেনি, হয়ে উঠেছে সমাজ-রাষ্ট্র ও মানবসম্পর্কের নানান স্তরের নান্দনিক কথকতা । ২০২২ সালে পূর্ণ হলো সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র জন্মশতবর্ষ। সৃষ্টিশীল এই সাহিত্যব্যক্তিত্বের স্মরণে কবি সাজ্জাদ আরেফিন সংকলনটি সম্পাদনা করে আমাদের দায় ও কর্তব্যের অন্ধকার দূর করলেন। এখানে সংকলিত ৪৬টি প্রবন্ধে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সৃষ্টিকর্ম সম্পর্কে প্রায় পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যাবে বলেই আমাদের মনে হয়। নানান দৃষ্টিকোণ থেকে এই লেখককে মূল্যায়নের প্রয়াস নেওয়া হয়েছে এসব রচনায়। কেবল বাংলা সাহিত্যেই নয়, বিশ্বের অন্যান্য ভাষার কথাশিল্পের সঙ্গে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র রচনার সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্যও কোনো কোনো প্রবন্ধে কিছু মাত্রায় আলোচিত হয়েছে। ফলে তাঁর সৃষ্টিকর্মের বহুমাত্রিকতা উপলব্ধি করতে পাঠকের জন্য সহায়ক হবে। বাংলাদেশে ওয়ালীউল্লাহ্-চর্চায় নিঃসন্দেহে সংকলনটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি কাজ ।
সাজজাদ আরেফিন ১৯৬৫ সালের ২৪সে ডিসেম্বর কিশােরগঞ্জ জেলার ভৈরববাজারের নবীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৭ সাল থেকে লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত। কাব্যগ্রন্থ, গবেষণা, ও সম্পাদনাসহ প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫০টি। কবিতার বই : ছায়া-অনুক্ষণ (১৯৮৪), রাতের দেয়াল সরিয়ে (২০০৪), নিহত হওয়ার অপেক্ষায় জেগে থাকি (২০০৬), বাতাসের পা ছুয়ে বলি (২০১০) পানশালার রঙিন গ্লাস (২০১০), আনন্দের ঘরবাড়ি (২০১৩) ও ডানাকাটা কথা (২০১৭)। কবিতার পাশাপাশি তার প্রিয় বিচরণক্ষেত্র গবেষণা ও সম্পাদনা। এখানেও বিরলপ্রজ তিনি; তবে যে কাজই করেছেন, তার প্রতিটিই তাৎপর্যপূর্ণ ও সারবান। ছােটকাগজ তার ভালােবাসার আরেক ভুবন। তাঁর সম্পাদিত ছােটকাগজ ‘নান্দীপাঠ। এযাবৎ প্রকাশিত এর প্রতিটি সংখ্যাই পরিশ্রমে ঋদ্ধ, উৎকর্ষে অনন্য। জীবিকাসূত্রে আমাদের মননচর্চার প্রতীকপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত তিনি। তার আয়ত্তভূক্ত যে কোনাে সহায়তার জন্য তিনি অবারিতদ্বার।