‘লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী’ বইয়ের সামারি: বইটিতে মূলত আমাদের বাঙলা সাহিত্যের শুরু ৯৫০ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ৩ যুগের কথা বলা হয়েছে। চর্যাপদ থেকে বাঙলা সাহিত্যের আগমন, মাঝখানের অন্ধকার যুগ, তারপর মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণব পদাবলী, মুসলিম কবিদের যুগ, আধুনিক যুগ এমন করে একের পর এক সিঁড়ির ধাপ পার করে আপনাকে নিয়ে আসবে বাঙলা সাহিত্যের বর্তমান যুগে। সাহিত্যের প্রতি যাদের টান আছে তাদের জন্য নিঃসন্দেহে বইটি বাধ্যতামূলক পড়া উচিত। যদিও বইটি সাহিত্যের জীবনী কিন্তু সেই সাহিত্য আলোচনা করতে গিয়ে মূলত সাহিত্যের সাহিত্যিকগণ দের কথাই ফুটে উঠেছে। ফলে আপনি একটা গভীর জীবনীর স্বাদ পাবেন। বইটিতে লেখক বাঙলা শব্দটার ব্যাখায় গল্পটা দিয়েছেন এইভাবেঃ "এ দেশের নামের কাহিনী বলেছেন সম্রাট আকবারের সভার এক রত্ন আবুল ফজল।তিনি বলেছেন 'বঙ্গ' শব্দের সাথে 'আল্' মিলিত হয়ে এদেশের নাম হয়েছে 'বাঙ্গাল'।এদেশে আছে খেতের পর খেত, এক খেতের সাথে অপর খেত মিলে না যায়,তার জন্এয থাকে আল।দেশে আল আ বাঁধ বেশি ছিল বলেই এদেশের নাম হয়েছে বাঙ্গালা বা বাঙলা।" নিজের মাতৃভাষার ইতিহাস জানতে পড়তে হবে এই বই।
‘লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী’ বইয়ের সূচিপত্ৰ: * লাল নীল দীপাবলি ৭ * বাঙালি বাঙলা বাঙলাদেশ ৯ * বাঙলা সাহিত্যের তিন যুগ ১২ * প্রথম প্ৰদীপ : চর্যাপদ ১৪ * অন্ধকারে দেড় শো বছর ১৭ * প্ৰদীপ জ্বললো আবার : মঙ্গলকাব্য ১৮ * চণ্ডীমঙ্গলের সোনালি গল্প ২১ * মনসামঙ্গলের নীল দুঃখ ২৪ * কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী ২৭ * রায়গুণাকর ভারতচন্দ্ৰ ৩০ * উজ্জ্বলতম আলো : বৈষ্ণব পদাবলি ৩২ * বিদ্যাপতি ৩৭ * চণ্ডীদাস ৩৮ * চৈতন্য ও বৈষ্ণবজীবনী ৪০ * দেবতার মতো দুজন এবং কয়েকজন অনুবাদক ৪২ * ভিন্ন প্ৰদীপ : মুসলমান কবিরা ৪৭ * আলাওল ৫২ * লোকসাহিত্য : বুকের বাঁশরি ৫৫ * দ্বিতীয় অন্ধকার ৫৯ * অভিনব আলোর ঝলক ৬২ * গদ্য : নতুন সম্রাট ৬৪ * গদ্যের জনক ও প্রধান পুরুষেরা ৬৮ * কবিতা : অন্তর হ’তে আহরি বচন ৭৩ * উপন্যাস : মানুষের মহাকাব্য ৭৯ * নাটক : জীবনের দ্বন্দ্ব ৮১ * রবীন্দ্রনাথ : প্রতিদিনের সূর্য ৮৬ * বিশশতকের আলো : আধুনিকতা ৯১
হাজার বছর আগে আমাদের প্রথম প্রধান কবি, কাহ্নপাদ, বলেছিলেন : নগর বাহিরে ডোম্বি তোহোরি কুড়িআ। তাঁর মতো কবিতা লিখেছিলেন আরো অনেক কবি। তাঁদের নামগুলো আজ রহস্যের মতো লাগে : লুইপা, কুক্কুরীপা, বিরুআপা, ভুসুকুপা, শবরপার মতো সুদূর রহস্যময় ওই কবিদের নাম। তারপর কেটে গেছে হাজার বছর, দেখা দিয়েছেন অজস্র কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, গল্পকার। তাঁরা সবাই মিলে সৃষ্টি করেছেন আমাদের অসাধারণ বাঙলা সাহিত্য। বাঙলা সাহিত্য চিরকাল একরকম থাকে নি, কালে কালে বদল ঘটেছে তার রূপের, তার হৃদয়ের। সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন সৌন্দর্য। মধ্যযুগে কবিরা লিখেছেন পদাবলি, লিখেছেন মঙ্গলকাব্য। উনিশশতকে বাঙলা সাহিত্য হয়ে ওঠে অপরূপ অভিনব। তখন কবিতায় ভরপুর বাঙলা সাহিত্যে দেখা দেয়। গদ্য, বাঙলা সাহিত্য হয়ে ওঠে ব্যাপক ও বিশ্বসাহিত্য। বিশশতকের বাঙলা সাহিত্যের শোভার কোনো শেষ নেই। বাঙলা সাহিত্যের অনেক ইতিহাস লেখা হয়েছে, আর কবি হুমায়ুন আজাদ বাঙলা সাহিত্য নিয়ে লিখেছেন লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী, যা শুধু বাঙলা সাহিত্যের ইতিহাস নয়, এটি নিজেই এক সাহিত্য সৃষ্টি। কবি হুমায়ুন আজাদ হাজার বছরের বাঙলা সাহিত্যকে তুলে ধরেছেন কবিতার মতো, জ্বেলে দিয়েছেন বাঙলা সাহিত্যের নানান রঙের দীপাবলি। এ-বই কিশোরকিশোরীদের তরুণতরুণীদের জন্যে লেখা, তারা সুখ পেয়ে আসছে এ-বই পড়ে, জানতে পারছে তাদের সাহিত্যের ইতিহাস; এবং এ-বই সুখ দিয়ে আসছে বড়োদেরও। লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী এমন বই, যার সঙ্গী হ’তে পারে ছোটোরা, বড়োরা, যারা ভালোবাসে বাঙলা সাহিত্যকে। বাঙলার প্রতিটি ঘরে আলো দিতে পারে। এ-বই।
Title
লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী - পেপারব্যাক
প্রচলিত ধ্যানধারণার বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগত অভীষ্ট এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার মাধ্যমে ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারের বিরুদ্ধে কলম তুলে নিয়ে বিশেষভাবে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ। প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক এই লেখক একাধারে ছিলেন কবি, ঔপন্যাসিক, সমালোচক, গবেষক, রাজনৈতিক ভাষ্যকার, ভাষাবিজ্ঞানী এবং অধ্যাপক। বাবা-মায়ের বড় সন্তান হুমায়ুন আজাদ ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব ও কৈশোর কাটে রাঢ়িখাল গ্রামে, যার কথা পরবর্তীতে তাঁর বিভিন্ন সাহিত্যকর্মে উঠে এসেছে। ম্যাট্রিকুলেশন ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। এখান থেকেই তিনি বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। হুমায়ুন আজাদ এর বই সমূহ নারীবাদকে তুলে ধরেছে ও ধর্মীয় মৌলবাদের প্রবল বিরোধিতা করেছে, যার ফলে তিনি একশ্রেণীর মানুষের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিলেন। হুমায়ুন আজাদ এর বই এর মধ্যে 'পাক সার জমিন সাদ বাদ', 'সব কিছু ভেঙে পড়ে', 'ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল' ইত্যাদি উপন্যাস ও 'অলৌকিক স্টিমার', 'জ্বলো চিতাবাঘ', 'কাফনে মোড়া অশ্রুবিন্দু' ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ উল্লেখযোগ্য। হুমায়ুন আজাদ এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'নারী' প্রবন্ধটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা একসময় নিষিদ্ধ হয়েছিল এই দেশে। প্রতিভাবান এই সাহিত্যিক ২০০৪ সালের ১১ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে 'বাংলা একাডেমি পুরস্কার', 'একুশে পদক' সহ আরো অনেক পুরস্কারে ভূষিত হন হুমায়ুন আজাদ।