দুই মনীষীর পর্যালোচনায় সমকালের রাষ্ট্র রাজনীতি ও ইসলাম শরিয়তের দৃষ্টিতে সমকালীন রাজনীতি ও ইসলামি রাজনীতির স্বরূপ বুঝতে এ বই হতে পারে একটি অসাধারণ মাধ্যম। এতে মোট তিনটি অংশ রয়েছে। প্র্রথম অংশটি পাকিস্তানের গ্র্যান্ড মুফতি জগদ্বিখ্যাত আলেম ও গবেষক আল্লামা তকি উসমানি সাহেবের লেখা হাকিমুল উম্মত রহ. কে সিয়াসি আফকার-এর তরজমা। থানবি রহ.-এর রাজনৈতিক দর্শন তিনি মোট তিন ভাগে বিন্যস্ত করে উপস্থাপন করেছেন—১. ইসলামে রাজনীতির অবস্থান। ২. ইসলামের শাসনপদ্ধতি ও সরকারের দায়িত্বসমূহ। ৩. ইসলামের দৃষ্টিতে রাজনৈতিক কর্মপন্থা এবং সেসবের মূল্যায়ন। পাঠক এতে নিজের অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন, পাবেন আলো ও নির্দেশনা। . দ্বিতীয় অংশটি নিকটকালের আরেক বিখ্যাত মনীষী পাকিস্তানের মুফতি রশিদ আহমদ লুধিয়ানবি রহ. রচিত আহসানুল ফাতওয়ার ছোট একটি পুস্তিকা। এটি মূলত একজনের একটি প্রশ্নের বিস্তারিত জবাব। প্রশ্নটি ছিল বর্তমানে ইসলামি রাজনীতিতে হেকমতের দোহাই দিয়ে অনেক নাজায়েজ কাজকে পালন করা হচ্ছে দীনের নামে। এ ব্যাপারে শরিয়তের অবস্থান কী? চলমান পৃথিবী, রাজনৈতিক বাস্তবতা ও তৎসংশ্লিষ্ট উপযুক্ত বিবেচনা মাথায় রেখেই তিনি তাঁর মুফতিসুলভ সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে দেখিয়েছেন শরীয়তের চোখে এমন কাজের বাস্তবতা কী। কুরআন, হাদিস, উসুল ও ফিকহের দলিলের আলোকে, ঐতিহাসিক ঘটনাবলির উদ্ধৃতি দিয়ে। . তৃতীয় অংশে রয়েছে মরক্কোর প্রথিতযশা আলেম, ইসলামি চিন্তক ও গবেষক ড. বশির ইসাম রচিত প্রসিদ্ধ গ্রন্থ আল-আলমানাতু মিনাদ্দাখিল বইয়ের ভূমিকার তরজমা। এতে তিনি অত্যন্ত সংক্ষেপে সহজ ভাষায় ‘সেক্যুলারিজম’ ধারণাটির পরিচয় দিয়ে এটি কেন ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক তা ব্যাখ্যা করেছেন। সেই সাথে দেখিয়েছেন সমকালে এটি কোন আঙ্গিকে ইসলামি রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে সেই সূক্ষ্ম ও গোপন পথটি। পেছনের আলোচনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ও সহায়ক হওয়ার বিবেচনা থেকে সে অংশটুকু এখানে জুড়ে দেওয়া হয়েছে অনেকটা উপসংহারের মতো করে। এখনের এই সময়ে যখন রাজনৈতিক বিষয়াবলিতে মানুষ দিকভ্রান্ত হচ্ছে নানা সূত্রে, তখন এ বই ইনশাআল্লাহ আপনার ভেতরে একটি সুন্দর প্রশান্তি ও স্থিতি তৈরি করবে নিঃসন্দেহে।
প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী শুধু ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে বই রচনা করেননি, তিনি একাধারে ইসলামি ফিকহ, হাদীস, তাসাউফ ও ইসলামি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। আর তা-ই নয়, তিনি একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতে, এমনকি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চেরও বিচারক পদে আসীন ছিলেন। মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে ১৯৪৩ সালের ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হলে তার পরিবার পাকিস্তানে চলে আসে এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ইসলামি নানা বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেখান থেকে অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। আর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি। দারুল উলুম করাচি থেকে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়ার উপর। সর্বোচ্চ স্তরের দাওয়া হাদিসের শিক্ষাও তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি বিষয়, যেমন- ফিকহ, ইসলামি অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্যপদ রয়েছে তাঁর। পাকিস্তানে 'মিজান ব্যাংক' নামক ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে ইসলামি অর্থনীতির প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বইও। তকী উসমানীর বই এর সংখ্যা ৬০ এর অধিক। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমূহ রচিত হয়েছে ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায়। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'Easy Good Deeds', 'Spiritual Discourses', 'What is Christianity?', 'Radiant Prayers' ইত্যাদি ইংরেজি বই, ও 'তাবসেরে', 'দুনিয়া মেরে আগে', 'আসান নেকিয়া' ইত্যাদি উর্দু বই উল্লেখযোগ্য। এসকল বই ইসলাম প্রসারে, এবং বিভিন্ন ইসলামি ব্যাখ্যা প্রদান ও আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।