উপন্যাসটির নাম মা রাখা হয়েছে এজন্য যে, উপন্যাসের মা চরিত্রটি শুধু পাভেলেরই মা নন বরং আগ্র নাখোদকা, নিকোলাই ইভানোভিচ, ফিওদর মাজিন, নিকোলাই ভেশভরচিকভ, নাতাশা, সোফিয়া, শাসা, রীবিন ও ইয়েফিম- সকলেই তাকে মন থেকেই মা হিসেবে মেনে নিয়েছেন। উপন্যাসের আলোচনায় প্রবেশের আগে লেখক- মাক্সিম গোর্কি প্রসঙ্গে কিছুটা আলোকপাত করা প্রয়োজন। মাক্সিম গোর্কির জন্ম মধ্য রাশিয়ার ভোলগা নদীতীরবর্তী নিজনি নোভগরদ শহরে, ১৮৬৮ সালের ১৬ মার্চ। তারিখটি বর্তমান ক্যালেন্ডারের হিসাবে দাঁড়াবে ২৮ মার্চ। (সেকালে রুশ দেশে ব্যবহৃত জুলিয়ান পঞ্জিকা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা থেকে ১২ দিন পিছিয়ে ছিল )। তার নাম রাখা হয়েছিল আলেক্সিয়েই মাক্সিমোভিচ পেশকভ। মাক্সিম গোর্কি তাঁর নিজের গ্রহণ করা ছদ্মনাম। লেখকজীবনের শুরু থেকেই তিনি এই নাম ব্যবহার করেছেন। ফলে বিশ্ববাসী তাঁকে এই নামেই চেনে। পিতা মাক্সিম সাভভাতেভিচ পেশকভ ছিলেন আস্ত্রাখান শহরের স্টিমশিপ কারখানার ছুতারমিস্ত্রি। মা ভার্ভারা ভাসিলিয়েভনা পেশকভা। লেখকের চার বছর বয়সের সময় কলেরায় আক্রান্ত হয়ে পিতার মৃত্যু ঘটে। সহায়সম্বলহীন মা তাঁদের দুই ভাইকে সঙ্গে নিয়ে নিজ পিত্রালয়ে চলে আসতে বাধ্য হন। পথের মধ্যে স্টিমারে মৃত্যু ঘটে ছোট ভাইটির। একমাত্র জীবিত সস্তান গোর্কিকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর মা আশ্রয় নেন পিতা-ভ্রাতাদের কাছে। গোর্কির কৈশোরের একটি পর্যায় কেটেছে নানাবাড়িতে। অন্ধকারময় একটি কৈশোর। এখানে কিশোরের জন্য একমাত্র মানসিক আশ্রয় ও শান্তির জায়গা ছিলেন তার দিদিমা। কুরুশ-কাঁটায় সুতার কাজে খুবই দক্ষ ছিলেন দিদিমা। সেই সাথে রুশ লোককথা, লোককাহিনি, রূপকথা আর লোকসংগীতের এক অফুরন্ত স্মৃতিভাণ্ডার ছিলেন তিনি। কুরুশ বুনতে বুনতেই তিনি কিশোর নাতিকে শোনাতেন সেসব লোকজ গল্প-গাথা সংগীত। দিদিমার মুখে শোনা ছড়া, লোককথা, রূপকথা, লোককাহিনির কারণেই সম্ভবত গোর্কির সাহিত্যের এক বিরাট অংশজুড়ে রূপকথা ও লৌকিক উপাদানের এত প্রাচুর্য।
(মার্চ ২৮, ১৮৬৮ – জুন ১৮, ১৯৩৬) বিখ্যাত রুশ সাহিত্যক। তিনি নিজেই তার সাহিত্যক ছদ্মনাম হেসেবে বেছে নেন 'গোর্কি' অর্থাৎ 'তেতো' নামকে। তার অনেক বিখ্যাত রচনার মধ্যে মা একটি কালজয়ী উপন্যাস। প্রথম জীবন মাক্সিম গোর্কি নিঞ্জি নভগরদ এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ৯ বছর বয়সে পিতৃমাতৃহীন হন। ১৮৮০ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি তার দাদীমাকে খুঁজতে গৃহ ত্যাগ করেন। ১৮৮৭ সালে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যান এবং দীর্ঘ ৫ বছর ধরে পায়ে হেঁটে সমগ্র রাশিয়া ভ্রমন করেন। তিনি ১৮ জুন ১৯৩৬ (৬৮ বছর) সালে মৃত্যু বরণ করেন।