প্রবাসী মৌ মধুবন্তির কবিতার সংগে আমার পরিচয় প্রাথমিক দিকে একেবারেই ছিলোনা। পরে ফেইসবুকের কল্যাণে,ভারচুয়াল যোগাযোগের মধ্য দিয়ে এবং আরো পরে ও যখন ঢাকায় আসে তখন তার ও তার কবিতার সংগে আমার পরিচয়য়টি বিস্তৃত হতে থাকে। তখন তার কিছু কবিতা পড়ে আমার ভালো লেগেছিলো এই জন্যে, যে আমি বোধ করেছিলাম মৌ-এর কবিতায় একটি প্রতিশ্রুতি ও সম্ভবনাময়তার গুনগুন রয়েছে। মৌ শুধু কবিতা লেখেন না, তিনিএকজন গল্পকার,গীতিকার, নাট্যাভিনেত্রী, অ-নারীবাদে বিশ্বাসী কমিউনিটি এক্টিভিস্ট ও গ্লোবাল সিটিজেনশিপে বিশ্বাসী গৈরিক মানবতাবাদী হিসাবেও নিজের জীবনকে যাপন করেন। গল্পকার আর গীতিকার কবিতার পক্ষেরই জিনিষ। সেটা ঠিক আছে। কিন্তু অন্য পরিচয়গুলো খারাপ না হয়েও কতোটা কবিতার জন্য অনূকূল তা কবিকে ভেবে দেখতে হয়। কবিতা কবিকে পুরোপুরি চায়,পারটাইম নিতে চায়না। উপরন্তু ভিন্ন একটি ভাষায়, তার চাইতে দুস্তর ভিন্ন একটি সংস্কৃতিতে বাস করে কবিতা লিখতে হলে কবিকে নিজেরটার পাশাপাশি যাপন করা বরতমান সংস্কৃতির ভেতরেও ডুব মারতে জানতে হয় এবং এবং তার থেকে নিজের কবিতার জন্য প্রযোজনীয় মাল-মশলা সংগ্রহ করার কৌশলটিও জেনে নিতে হয়। একজন জার্মান হাইনে কি রিলকের পক্ষে প্যারিসে, একজন লোরকার পক্ষে নুইয়রকে, একজন ইয়েটস কি এলিয়টের পক্ষে ইংল্যান্ডে বা একজন স্পেনিস পিকাসোর পক্ষে প্যারিসে বসে শিল্প যাপন করা খুব সম্ভব -- তাদের ভাষা ভিন্ন হওয়া স্বত্বেও৷ -- ধরম ও সংস্কৃতি এক বলে, যা আমাদের বাংলালী প্রবাসীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। ঝামেলাটা এখানে। মৌ মধুবন্তীর সংগে শেয়ার করতে গিয়ে বিষয়টিকে আমি সকল বাংলাদেশি প্রবাসী লেখকদের সংগে শেয়ার করলাম। মৌ-এর 'অক্ষরবৃত্তের পদাবলী' কবিতার বইটির প্রতি আমি প্রথমে আকর্ষণ বোধ করি নামের জন্য এবং পরে ছন্দে কবিতা লিখবার প্রয়াসের জন্যে। কারন, আমি ছন্দে বিশ্বাসী। বিশেষ করে বাংলা কবিতা ছন্দ ছাড়া হতেই পারে না। আমাদের সাম্প্রতিক প্রায় সকল কবিই যারা গদ্যে -- ফ্রি ভারসে লিখছেন, তারা বলেন গদ্যেও ছন্দ আছে। কিন্তু তারা তাদের ছন্দের রূপটি কী, তা দেখিয়ে দিতে পারেন না। আমরা তো আমাদের প্রতিটি ছন্দের রূপটি কী তা জানি এবং সেটাকে দেখিয়েও দিতে পারি ! না, ছন্দই কবিতা নয়, কিন্তু কবিতার জন্য ছন্দ লাগবেই এবং উপমা, প্রতীক, চিত্রকল্প, এলিউশন সহ অন্য অলংকারগুলোও। মৌ মধুবন্তীর 'অক্ষরবৃত্তের পদাবলী' আমাদের কবিদের এই পটভুমিতে দৃষ্টি দিতে উদ্বুদ্ধ করবে। আমি মৌ কে স্বাগত করি ছন্দে কবিতা লেখার এক সুদর যাত্রায়। মৌ এর কবিতায় রয়েছে প্রেম, দেশপ্রেম,ঘাম আর একটি ঘরোয়া গুনগুনানির সুর। ছন্দে কবিতা লেখার আরেকটা লাভ হচ্ছে সে পদ্য আর কবিতার মধ্যকার ব্যবধানও দখিয়ে দেয়। তখন কবির জন্য পদ্য থেকে কবিতার দিকে যাওয়ার পথটি খুজে নিতে সুবিধা হয়,সুবিধা হয় ছন্দের, মাত্রার, পংক্তির আর অন্তমিলের প্রয়োগগুলো ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা সে বিষয়েও সচেতন হওয়ার -- সন্দেহ নেই। মৌ-এর 'অক্ষরবৃত্তের পদাবলি ' অন্য বৃত্তেও পল্লবিত হোক এই আমার কামনা! --- কবি জাহিদুল হক