প্রবন্ধ হবে তত্ত¡ ও তথ্য নির্ভর। প্রবন্ধকার তাঁর রচনার মাধ্যমে কোনো তত্ত¡ বা তথ্য উপস্থাপন করবেন পাঠক সমীপে। অথবা তাঁর নিজস্ব কোনো তত্ত¡ বা বক্তব্যের বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হবে প্রবন্ধ। প্রবন্ধ লেখক ভুল বা অসত্য তথ্যনির্ভর হবেন না। চিন্তা ও মননশীলতা প্রবন্ধের অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। প্রবন্ধ মানেই চিন্তামূলক রচনা। চিন্তা ও মনন বহিভর্‚ত হালকা ও চটুল রচনা উৎকৃষ্ট প্রবন্ধ হতে পারে না, হয়ে ওঠে অন্য কিছু, হতে পারে রসরচনা। রসরচনাকে অনেকে প্রবন্ধের অন্তর্ভুক্ত করতে চান, আসলে রসরচনা রসরচনাই, প্রবন্ধ নয়। চিন্তাশ্রয়ী ও মননশীল যুক্তিনিষ্ঠ রচনাই প্রবন্ধ। লেখক তার মনন ও চিন্তাপ্রসূত যে বক্তব্য তাঁর প্রবন্ধে উপস্থাপন করবেন, তাকে যুক্তি নির্ভর করে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যুক্তিহীন আবেগময় লেখা প্রবন্ধ পর্যায়ভুক্ত হতে পারে না। প্রবন্ধকার তাঁর তত্ত¡পূর্ণ যুক্তিহীন মননশীল রচনাকে এমনভাবে উপস্থাপন করবেন যাতে তাঁর বক্তব্য বিষয় সুসংহত, সুবিন্যস্ত এবং সংক্ষিপ্ত হয়। এজন্য প্রবন্ধের ভাষা হবে গদ্য এবং তার গাঁথুনি হবে সুদৃঢ়। প্রবন্ধে যুক্তির খাতিরে নানা উপমা, উদাহরণ, প্রাসঙ্গিক গল্প-কাহিনি ইত্যাদি থাকতে পারে, তবে এসবকে অবশ্যই সুসংহত হতে হবে। প্রবন্ধের ভাষা হবে সহজবোধ্য ও হৃদয়গ্রাহী। অতিকথন বা বাহুল্য যাতে প্রবন্ধকে নাজুক বা নড়বড়ে করে তুলতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, প্রবন্ধকার তাঁর প্রবন্ধে কোনো একটি বিশেষ দিক বা বিষয়ের প্রতি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। যা পাঠে পাঠকের জ্ঞানবুদ্ধি ও যুক্তিপ্রবণতা তীক্ষè হবে; বিষয়ের প্রতি তাঁর আগ্রহ জাগরুক হবে, সর্বোপরি প্রবন্ধের ভাষা ও রচনাশৈলীর শিল্পসম্মত সৌন্দর্য আস্বাদনে পাঠক হৃদয় আকৃষ্ট হবে। এক কথায় প্রবন্ধ পাঠকের জ্ঞানের সীমা বাড়িয়ে তার ভাবলোককে সমৃদ্ধ করবে।
১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার, অভিনয়শিল্পী, সুরকার ও প্রবন্ধকার। নজরুলের বাল্যকাল কেটেছে দুঃখ-দুর্দশায়। তাই তাঁর ডাকনাম ছিলো দুখু মিয়া। তাঁর বৈচিত্র্যময় শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের মক্তবে। পিতৃহীন হওয়ার পর তিনি পড়ালেখা ছেড়ে যোগ দেন লেটোর দলে, যেখান থেকে তিনি কবিতা ও গান রচনার কৌশল রপ্ত করেন। পরবর্তীতে এক বছর ময়মনসিংহের দরিরামপুর হাই স্কুলে পড়ে পুনরায় চুরুলিয়ায় রানীগঞ্জের শিয়ারসোল রাজ স্কুলে ভর্তি হন, এবং সেখানে তিন বছর অধ্যয়ন করেন। প্রবেশিকা পরীক্ষার আগেই তাকে পড়ালেখা ছাড়তে হয় যুদ্ধে যোগদানের জন্য। যুদ্ধের দিনগুলোতে নানা জায়গায় অবস্থান করলেও তার করাচির সৈনিকজীবনই উল্লেখযোগ্য, কেননা সেসময়েই তার প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় ‘বাউণ্ডেলের আত্মকাহিনী’ নামক গল্প প্রকাশের মাধ্যমে। কাজী নজরুল ইসলাম এর বই সমূহ’র বিষয়বস্তু বিবিধ। তবে কাজী নজরুল ইসলাম এর বই-এ সমকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক যন্ত্রণা এবং সাম্যবাদের ধারণা প্রকটভাবে স্থান করে নিয়েছে। রাবীন্দ্রিক যুগে তার সাহিত্য প্রতিভা উন্মোচিত হলেও তার সৃষ্টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাজী নজরুল ইসলাম এর বই সমগ্র এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ‘রিক্তের বেদন’, ‘দোলনচাঁপা’, ‘বিষের বাঁশি’, ‘সাম্যবাদী’, ‘সর্বহারা’, ‘প্রলয়শিখা’ ইত্যাদি। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী নজরুল ‘সাপ্তাহিক লাঙল’, দ্বিসাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ধূমকেতু’র সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশের জাতীয় কবি এবং বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।