ধার করা সময় , ধার করা জগৎ আর ধার করা চোখ থেকে মুক্তির কথা বলেন মুসা আল হাফিজ। সময়কে নিজের করা, নিজের জগৎকে নিজস্ব করা এবং দেখার দৃষ্টিকে স্বাধীন করা তার অভিপ্রায়। সেই অভিপ্রায় শব্দ-বাক্যের প্রগাঢ় বন্ধনে উপস্থাপিত হয়েছে উত্তরাধুনিক শরাবের পেয়ালায়। লেখকের অনুভবের তীক্ষ্ম ও তীব্র উচ্চারণগুলো রহস্যময় উপস্থাপনে সজ্জিত হয়েছে এ গ্রন্থে। মানুষের একান্ত ভেতরের মানুষকে তিনি যেমন দেখতে চেয়েছেন, তেমনি বাইরের ; নিকট ও সুদূরের আকার , প্রকার ও বিকারসমূহকে দেখেছেন নানাভাবে। এ বই জীবনের ঝড়ের ভেতর অপূর্ণ রাস্তার ভ্রান্তি ও জটিলতার প্রতি যেমন ইঙ্গিত করে, তেমনি বলে দেয় একটি পূর্ণ রাস্তা গন্তব্যে গেছে বলেই আপনি গন্তব্যে যেতে পারবেন না।আপনাকে লক্ষ্যে উপনীত হতে হলে চলতে হবে পথ। সেই পথচলার প্রদীপ ও প্রাণশক্তি জোগান দিতে চায় এই বই! এ গ্রন্থে সমাজ ও বাস্তবতার নানামুখী ব্যবচ্ছেদ রয়েছে। আবার এতে আছে জীবনকে সজ্জিত করার জন্য বিচিত্র রসদে পূর্ণ কথামালার বুনন।দর্শনের উপর নির্ভরশীল উদ্দেশ্যমূলক ক্ষুদ্র গল্প, কাব্যগন্ধী বাক্য, প্রবচন, কাল্পনিক সফরনামা, মানসিক সাক্ষাৎকার, অনুপস্থিত মনীষীর সাথে চিন্তার বিনিময় কিংবা ক্ষুদ্রদেহের কথিকার উপর ভর করে লেখক এই গ্রন্থে নির্মাণ করেছেন জাগতিক চিন্তার এমন এক সড়ক, যা পাঠককে মহাজাগতিক সত্যের অভিযাত্রী বানাতে চায়।
কবি, গবেষক ও আলেম মুসা আল হাফিজ। ১৯৮৪ সালের ৫ অক্টোবর সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের মাখর-গাঁও গ্রামে তাঁর জন্ম। ১৯৯৫ সালে, ১১ বছর বয়সে কুরআন মজিদের হিফজ সম্পন্ন করেন। ২০০৭ সালে কৃতীত্বের সাথে তাকমিল ফিল হাদীস (মাস্টার্স সমমান) সম্পন্ন করেন। জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ তরুণ আলেম প্রতিভা-২০০৮ এ সম্মানীত হন। ২০০৯ সালে কর্মজীবনের শুরু ঐতিহ্যবাহী বিশ্বনাথ জামেয়া মাদানিয়ায় শিক্ষকতা এবং মাসিক আল ফারুকের উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে। ২০১৬ সালে উচ্চতর ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামেয়াতুল খায়র আল ইসলামীয়া সিলেটে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৯ সালে ঢাকায়, যাত্রাবাড়ীতে প্রতিষ্ঠা করেন ইসলামী দা‘ওয়াহ ও গবেষণা কেন্দ্র মা‘হাদুল ফিকরি ওয়াদদিরাসাতিল ইসলামিয়া। বর্তমানে ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালন করছেন। ২০১১ সালে হয় তার কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হয় কবি-সমালোচক মুকুল চৌধুরীর সনাক্তধর্মী আলোচনা ‘মুসা আল হাফিজ: কবিতার নতুন কণ্ঠস্বর’। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. রিজাউল ইসলাম তার সাহিত্যকর্ম নিয়ে লিখেন গবেষণাগ্রন্থ- মুসা আল হাফিজের মননবিশ্ব (২০১৮)। তরুণ কবি এম আসাদ চৌধুরীর সম্পাদনায় ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় তার সাহিত্যকর্ম নিয়ে বিশজন আলোচকের পর্যালোচনাগ্রন্থ ‘মননের কবি, বৈদগ্ধের দৃষ্টিতে’। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ৫০টির অধিক বই লিখেছেন।