বাংলা ভাষায় অসংখ্য শব্দ রয়েছে। দেশি শব্দ, বিদেশি শব্দ, তৎসম শব্দ, তদ্ভব শব্দসহ নানা রকম শব্দ। এক বা একাধিক বর্ণের মিলনে যদি একটি অর্থ প্রকাশ পায় তবে তাকে আমরা শব্দ বলে থাকি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অসংখ্য শব্দ ব্যবহার করি। সেই সব শব্দের অর্থ কিংবা উৎপত্তি সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জানা নেই। শিশুরা যখন কথা বলতে শেখে তখন তারা আধো আধো নানা রকম শব্দ ব্যবহার করে। সেই শব্দগুলো অধিকাংশই বিকৃত শব্দ কিংবা ভাঙা ভাঙা শব্দ। যা হোক, শব্দ নিয়েই আমাদের মানবসমাজ এত দূর পর্যন্ত এগিয়েছে। মোশতাক আহমেদ একজন নিবেদিত ছড়াশিল্পী। দীর্ঘদিন ছড়ার জগতের তার বিচরণ। নানা ছন্দে নানা বিষয়ে তিনি ছড়া লেখায় দক্ষ। ‘শব্দখেলা সারাবেলা’ তার একটি উল্লেখযোগ্য বই। বইটি প্রকাশিত হয়েছিলো ২০১৭ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে। ৪০ পৃষ্ঠার এ বইটিতে রয়েছে ৩৩টি ছোট-বড় ছড়া। প্রতিটি ছড়ার সাথেই রয়েছে ছবি। শিশু-কিশোর উপযোগী এ ছড়ার বইটি বড়দেরও পাঠ করলে ভালো লাগবে। বইটির সর্বশেষ ছড়াটির শিরোনামে বইটির নামকরণ হয়েছে। প্রথমেই এ ছড়াটির কিছু অংশ পাঠ করা যাক― ‘উড়ো শব্দ খুড়ো শব্দ দুহাত ভরে কুড়াই― শব্দ ধরে এক এক করে মনচুলোতে পুড়াই। কাঁচা সোনার পুড়লে খাঁটি হয় যে আরো পরিপাটি সেই শব্দ করি যে ভাঙচুর ভাঙা শব্দ রাঙা শব্দ, শব্দ সুমধুর।’ একুশের পথ ধরে, মুজিব মানে, স্বাধীনতা, শিশুর বাংলাদেশ, একুশ এখন, সোনার স্বদেশ, শহীদ নূর হোসেন, দেশবিরোধী শিরোনামে বেশ কিছু ছড়া রয়েছে এ বইটিতে। ছড়াগুলোর শিরোনাম পড়লে বোঝা যায় এর বিষয় কী। মোশতাক আহমেদ একজন দেশপ্রেমিক, ইতিহাস সচেতন ছড়াকার। ফলে একুশের চেতনা আর মুক্তিযুদ্ধের গৌরব তার ছড়ার প্রাণ বলা যায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি রয়েছে তার শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা। ‘মুজিব মানে’ ছড়ায় তার প্রকাশ তিনি শৈল্পিকভাবে দিয়েছেন। কিছু বাউÐুলে চরিত্র নিয়েও লিখেছেন তিনি মজার ছড়া। এ ছাড়া বাংলার প্রকৃতি ও ঐতিহ্যও তার ছড়ায় বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। আমাদের স্কুলগুলোতে যে সকল অনুষ্ঠান হয় তাতে এসব ছড়া শিক্ষার্থীরা আবৃত্তি করলে তারা অবশ্যই সবার প্রশংসা ও পুরস্কার পাবে। তাই এ ছাড়ার বই হাতছাড়া করা যাবে না।
লেখক মোশতাক আহমেদ এর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ফরিদপুর জেলায়। পেশায় একজন চাকুরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও লেখালেখির প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রচুর। এ পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশন নিয়েই সবচেয়ে বেশি লিখেছেন। বাংলা সায়েন্স ফিকশন জগতে তার পোক্ত একটি অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মোশতাক আহমেদ এর বই সমূহ ভৌতিক, প্যারাসাইকোলজি, মুক্তিযুদ্ধ, কিশোর ক্ল্যাসিক, ভ্রমণ ইত্যাদি জঁনরাতে বিভক্ত। যেকোনো একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতেই পছন্দ করেন। মোশতাক আহমেদ এর বই সমগ্র সংখ্যায় পঞ্চাশ পেরিয়েছে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ছিল ‘জকি’। এটি একটি জীবনধর্মী উপন্যাস। ২০০৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়। মোশতাক আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে ফার্মেসি বিভাগে, পরে আইবিএতে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনার খাতিরেই হোক বা কর্মজীবনের তাগিদেই হোক, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেক ভ্রমণ করেছেন। সেসব ভ্রমণকাহিনীর আশ্রয়ে তাই ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনীগুলোও। তাঁর সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শুধু লেখালেখিতেই গণ্ডিবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাজারবাগের পুলিশ ও পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সে ঘটনার ওপর ভিত্তি করে মোশতাক আহমেদ ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসে মুক্তি পায়। তাঁর পুরস্কারের ঝুলিতে এ পর্যন্ত রয়েছে ২০১৩ সালের কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৫ সালের সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার এবং সর্বশেষ সংযুক্তি হিসেবে সায়েন্স ফিকশন বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭।