ভূমিকা সৃষ্টিকুলের সর্দার বিশ্বজগতের গৌরব, দো জাহানের প্রাণ পুরুষ, রাসূলে কারীম সা. এর জীবনী পঠন ও পাঠনের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। এ কারণেই যখন থেকে দ্বীনী বই-পুস্তক রচনা ও সংকলনের ধারা শুরু হয়েছে তখন থেকেই আজ পর্যন্ত সর্বকালে সর্বযুগে ওলামায়ে কেরাম নিজ নিজ ধারা নিজ নিজ ভাষায় মহানবী সা. এর জীবনী লিপিবদ্ধ করেছেন। এ অবিচ্ছিন্ন ধারায় কত অসংখ্য গ্রন্থ যে এ যাবৎ রচিত হয়েছে এবং আরো কত হবে তা আল্লাহই ভালো জানেন। نه من بر آن گل عارض عزل سرایم و بس که عندلیب تو از ہر طرف ہزاراں اند “আমি অধমের সাহস কী যে গাহিবো তার স্তুতি গান- শত সহস্র বুলবুলি যেথা সবদিকে গাইছে গান। শুধু মুসলিমই নয় বরং শত শত অমুসলিমও তাঁর জীবনীগ্রন্থ রচনা করেছেন। বিশেষত ইউরোপীয় ঐতিহাসিকরাই এ ব্যাপারে বেশি অংশ নিয়েছে। তন্মধ্যে বিশ-ত্রিশজন সম্পর্কে তো আমারই জানা আছে। ঘটনাবলী বর্ণনার ক্ষেত্রে ব্যাপক পক্ষপাতিত্ব করেছে ওরা। তাই মুসলমানদের জন্য ওদের রচিত ইতিহাস বা জীবনচরিত পাঠ করা থেকে বিরত থাকা জরুরী। মোটকথা, নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, পৃথিবীতে মহানবী সা, ব্যতীত অন্য কারো জীবনী রচনার ব্যাপারে এ পর্যন্ত এত গুরুত্বারোপ করা হয়নি। জনৈক ইউরোপীয় জীবনীকার লেখেন-- “মুহাম্মদ সা. এর জীবনীকারদের ধারা এত ব্যাপক ও সুবিস্তৃত যে, তার সমাপ্তি অসম্ভব। বস্তুত তাতে সামান্য স্থান পাওয়াটাও অনেক গৌরবের বিষয়।” -সীরাতুন্নবী উর্দূ ভাষায় নতুন পুরাতন বহু সীরাতগ্রন্থ রচিত হয়েছে যা ভারতবাসী তথা উর্দূ ভাষীদের পক্ষ হতে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। তবে দীর্ঘকাল যাবৎ আমার দৃষ্টি এমন একটি জীবনীগ্রন্থ খুঁজছিল যা কর্মব্যস্ত প্রত্যেক নারী-পুরুষ দু'এক বসায় শেষ করে নিজ ঈমান সতেজ করতে পারে এবং নবীজীর আদর্শকে স্বীয় জীবনের দিশারী বানাতে পারে। বিভিন্ন সংস্থা ও বিদ্যালয়ের প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। তাতে সংক্ষিপ্তাকারে রাসূলে কারীম সা. এর পবিত্র জীবনের সম্যক চিত্র বাস্তবতার নিরীখে সঠিক বর্ণনার প্রতি পূর্ণ লক্ষ রেখে পেশ করা হবে। কিন্তু এধরনের কোন পুস্তিকা আমার নজরে পড়েনি। ইতোমধ্যে শিমলার কতিপয় বন্ধু তাঁদের ইসলামী সংস্থার জন্য এমন একটি পুস্তিকার প্রয়োজন অনুভব করে অধমের কাছে আবেদন জানান। তাই বিদ্যা স্বল্পতা, অধ্যয়ন ও অধ্যাপনার ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও শুধু এ লক্ষ্যেই কলম হাতে নিলাম যেন হাশরের ময়দানে যখন সাইয়্যিদুল কাউনাইন সা. এর জীবনীকারদের নাম পেশ করা হবে তখন যেন তার কোন এক কোণে এ গুনাহগারের নামও লিপিবদ্ধ থাকে । بلبل ہمیں کہ قافیه گل شود بس است “ফুলের” সহিত “বুলবুল” নামের এ মিলটুকু আমার জন্য যথেষ্ট।” এজন্য আল্লাহর নাম নিয়ে পুস্তিকা লিখতে শুরু করি। লেখার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়াবলীর অনুকরণে সীরাত গ্রন্থের সার নির্যাস এতে উপস্থাপন করি- ১. পুস্তিকাটি যেন দীর্ঘ না হয়ে যায় সেদিকে বিশেষ লক্ষ রাখা হয়েছে। এ কারণে আরবের ভৌগলিক অবস্থা, ইসলামপূর্ব আরব অনারবের অবস্থা যাকে সীরাতের অংশ মনে করা হয় এবং তা কিছুটা উপকারীও বটে সেসব বিষয় এড়িয়ে শুধু ঐ সকল বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে যা রাসূল সা. এর সত্তার সাথে সম্পৃক্ত। সংক্ষিপ্তের প্রতি লক্ষ করে এই পুস্তিকার এক নাম রেখেছিলাম “আউজায়ুস সিয়ার লিখাইরিল বাশার"। ২. সংক্ষিপ্তের সাথে সাথে এ বিষয়ের প্রতিও লক্ষ রাখা হয়েছে যাতে পূর্ণতা বিনষ্ট না হয়। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। কারণ, জরুরী প্রায় সকল বিষয়ই এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ৩. জিহাদ, বহু বিবাহ ইত্যাদি সম্পর্কে বিরুদ্ধবাদীদের যেসব ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে তার বিশদ ও সন্তোষজনক উত্তর প্রদান করা হয়েছে। ৪. পুস্তিকাটির ভিত্তি নির্ভরযোগ্য ও প্রামাণ্য গ্রন্থসমূহ। ক্ষেত্রবিশেষ পৃষ্ঠ নম্বরসহ তা উল্লেখ করা হয়েছে