বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি রচিত হয়েছে মুরাবিত সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতনের ইতিহাস নিয়ে। এতে উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলে ইসলামের বিস্তার এবং এই অঞ্চলের মুসলিম জনগোষ্ঠীর সুদীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। একটি নতুন সাম্রাজ্য কীভাবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, সেই আলোচনা পাবেন গ্রন্থটিতে। কেননা, একটা নতুন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে অনেক ধাপ পেরোতে হয়। এর পরই মূলত একটি আদর্শ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা পায়। আর এর পেছনে নিয়ামক হিসেবে থাকেন এক-দুজন মহামানব। মুরাবিত সাম্রাজ্যেও একজন স্বপ্নপুরুষ ছিলেন, আর তিনি হচ্ছেন শায়খ আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াসিন। তিনি তাঁর শিষ্য ও পরবর্তী প্রজন্মের মনমগজে একটি সাম্রাজ্যের রূপরেখা ও সংগ্রামের চেতনা ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর সেই স্বপ্নপূরণে ইউসুফ ইবনু তাশফিনের মতো একজন মহান সারথীও তৈরি করে গিয়েছিলেন, যিনি এই সাম্রাজ্যকে একটি সফল ও আদর্শ সাম্রাজ্যে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হন। এ ছাড়া গ্রন্থটিতে আমির ইয়াহইয়া ইবনু ইবরাহিম, আমির আবু বকর ইবনু উমর ও ইউসুফ ইবনু তাশফিনের জীবনী আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে ইসলামের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন আফ্রিকার বীর মুজাহিদ সুলতান ইউসুফ ইবনু তাশফিন। বাংলা ভাষায় যেহেতু সুলতান ইউসুফ ইবনু তাশফিন বা মুরাবিত সাম্রাজ্য নিয়ে কোনো গ্রন্থ নেই; আশা করি গ্রন্থটি এই শূন্যতা পূরণ করবে ইনশাআল্লাহ।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০