এটি আন্দালুস ও উত্তর আফ্রিকার মুসলিমদের ইতিহাসবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ একটি গ্রন্থ। এতে মুসলিমদের হাতে উত্তর আফ্রিকা ও আন্দালুসের বিজয় থেকে নিয়ে একেবারে পতন পর্যন্ত আলোচনা করা হয়েছে। মুওয়াহহিদ সাম্রাজ্যের পতনের পর কীভাবে আন্দালুসের গ্রানাডার মুসলিম রাজ্যের পতন ঘটে এবং সেখানকার মুসলিমদের কী করুণ পরিণতি হয়েছিল, তার বিস্তারিত বিবরণে রচিত হয়েছে। পাশাপাশি তাতে উত্তর আফ্রিকার অন্যান্য মুসলিম রাজ্যগুলোর উত্থান-পতনের ইতিহাস বিবৃত হয়েছে। যেমন : বনু মারিন, ওয়াত্তাসিয়া, সাদিয়া, বনু আবদুল ওয়াদ ও হাফসি রাজ্য। গ্রন্থটি পাঠ করলে চোখের পানি আটকে রাখা যায় না। কী দোর্দণ্ড প্রতাপের সঙ্গে মুসলিমরা বিশাল আন্দালুস আর উত্তর আফ্রিকা শাসন করলেন, সেই মুসলিমদের উত্তরসূরিদের করুণ মুহূর্তে আর্তনাদ শোনার মতো কেউ ছিল না। শাসকদের দুনিয়ার প্রতি আসক্তি, ভোগবিলাস, অন্তর্দ্বন্দ্ব আর ভ্রাতৃঘাতী লড়াই মুসলিমদের সব শক্তি নিঃশেষ করে দেয়; কাফির-ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় কোথায়। গ্রন্থটিতে যেভাবে কয়েকজন মহান মুজাহিদের আলোচনা স্থান পেয়েছে, তেমনি কয়েকজন বীর সুলতানের আলোচনা করা হয়েছে। আছে তাঁদের সুশাসন, ইনসাফ, বদান্যতার কথা। আলোচনা করা হয়েছে কয়েকজন শাসকের জুলুম আর বেইমানির কথাও। কীভাবে ধীরে ধীরে প্রতিটি রাজ্যের বিলুপ্তি ঘটে, তার আলোচনাও অত্যন্ত সুন্দরভাবে করা হয়েছে।
Title
গ্রানাডা ও উত্তর আফ্রিকার মুসলিম রাজ্যসমূহের ইতিহাস
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০