হিটলার পৃথিবীর একজন বিতর্কিত ব্যক্তি। মানুষের কাছে তাঁর পরিচিত একজন কুখ্যাত ব্যক্তি হিসেবেও। জন বিরোধী ও মানবতা বিরোধী বিভিন্ন ধরনের কাজ করে তিনি তিরিশ ও চল্লিশের দশকে অত্যন্ত আলোচিত ব্যক্তিতে পরিণত হন। যা তাঁর মৃত্যুর পরও এখনও অব্যহত আছে। তাঁর কর্মের ফলে গোটা পৃথিবীতে দেখা দিয়েছিল অস্থিরতা। যুদ্ধ বিগ্রহে মানুষের শান্তি হয়েছিল বিপন্ন। হিটলারের কারণেই শুরু হয়েছিল ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যে যুদ্ধে কয়েক কোটি লোককে প্রাণ দিতে হয়। গোটা পৃথিবীর সবাইকে সে সময় কম-বেশি শিকার হতে হয় তাঁর সেই ভয়াবহ অপরিণামদর্শিতার। বিভিন্ন জাতি-দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হয় ভূলুণ্ঠিত। এসবের জন্য হিটলার পৃথিবীর বিবেকবান মানুষের কাছে অন্যতম ঘৃণিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। এখনো অনেকে তাঁর নাম শুনলে শিউরে ওঠেন। তাঁর নৃশংসতা অতীতের সকল রেকর্ডকে হার মানিয়ে দিয়েছে। গণধিকৃত এই ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাঁর বিভিন্ন লোমহর্ষক কার্যকলাপ মানুষের কাছে রূপকথায় পরিণত হয়। মানুষের মনে তাঁকে নিয়ে দিনকে দিন কৌতূহল বাড়তে থাকে। হিটলারকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে নব নব কাহিনির। যে কাহিনির শেষ এখনো হয়নি। সারা পৃথিবীর মানুষ জানতে চায় তাঁর বিভিন্ন ধিকৃত জীবনের প্রতিবেদন। তিনি জন্ম দিয়ে গেছেন অনেক কাহিনির। এখনও দিচ্ছে। এযাবৎ তাঁকে নিয়ে লেখা হয়েছে অসংখ্য সংবাদ প্রতিবেদন, বই-পুস্তক। তবুও এর শেষ নেই। প্রায়ই জন্ম হচ্ছে নতুন কাহিনির । উন্মোচিত হচ্ছে বিভিন্ন লোমহর্ষক ঘটনাবলি। অতি সাধারণ একটি পরিবারের ছেলে হিটলার। দারিদ্র্যতার কারণে কিশোর বয়স কেটেছে অত্যন্ত অনাদর ও অবেহলায়। কিশোর বয়সেই তাঁর বাবা মৃত্যুবরণ করলে নামতে হয় পরবর্তী জীবনের কঠিন সংগ্রাম। এ সময় নিজ জন্মভূমি তাঁকে ত্যাগ করতে হয়। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে মাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকেন স্থান থেকে স্থানান্তরে। কিন্তু তাঁর প্রতি ভাগ্য তেমন সদয় হয় না। অত্যন্ত দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিয়েও নিজেকে বেঁচে রাখার প্রচেষ্টা তিনি চালাতে থাকেন। কিন্তু দিনকে দিন দুঃখ-কষ্ট বাড়তে থাকায় একদিন নিজ মাকে ফেলে পালিয়ে যান অন্যত্র। এরপরও তাঁর এ অবস্থা দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকে। অবশেষ একদিন ভাগ্য তাঁর সুপ্রসন্ন হয়। সৈনিক জীবনত্যাগ করে রাজনীতির সঙ্গে তিনি জড়িয়ে পড়েন। তখন থেকেই তাঁর ধাপ টপকানোর শুরু। রাজনীতিতে অল্পদিনের মধ্যেই তিনি তাঁর দৃঢ় অবস্থান করে নিতে সক্ষম হন। একের পর এক কূটকৌশল অবলম্বন ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে ক্ষমতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছতে সমর্থ হন। এজন্য তাঁকে বহু কাঠ-খড় পোড়াতে হয়। ক্ষমতায় নিজের স্থান সুদৃঢ় করার পরই তিনি আবির্ভূত হন সরূপে। তার পরের ইতিহাস অনেকেরই কম-বেশি জানা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হিটলারের এই ডায়েরিটা খুঁজে পাওয়া যায়। বহু ঘটনার সাক্ষী এই ডায়েরি। তৎকালীন হিটলারের মানসিক চিন্তাধারার স্বচ্ছ দর্পণ এই ব্যক্তিগত ডায়েরিটা হয়তোবা মহাযুদ্ধের কারণগুলো বুঝতে সাহায্য করবে; সেই সঙ্গে হিটলার এবং সেদিনের জার্মানিকেও। যুদ্ধবিধ্বস্ত জার্মানির পটভূমির নায়ক নিঃসন্দেহে হিটলার। আর তাঁর সঙ্গী হিসেবে গোয়েবেলসের ভূমিকাও কমি ছিল না ৷
আডলফ হিটলার ( [ˈadɔlf ˈhɪtlɐ] জার্মান ভাষায়: Adolf Hitler আডল্ফ্ হিট্লা) (২০শে এপ্রিল, ১৮৮৯ - ৩০শে এপ্রিল, ১৯৪৫) অস্ট্রীয় বংশোদ্ভূত জার্মান রাজনীতিবিদ যিনি ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। হিটলার ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মানির চ্যান্সেলর এবং ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সে দেশের ফিউরার ছিলেন।
হিটলার প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সৈনিক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ভাইমার প্রজাতন্ত্রে নাৎসি পার্টির নেতৃত্ব লাভ করেন। অভ্যুত্থান করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন যে কারণে তাকে জেল খাটতে হয়েছিল। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে মোহনীয় বক্তৃতার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ, ইহুদি বিদ্বেষ ও সমাজতন্ত্র বিরোধিতা ছড়াতে থাকেন। এভাবেই এক সময় জনপ্রিয় নেতায় পরিণত হন। নাৎসিরা তাদের বিরোধী পক্ষের অনেককেই হত্যা করেছিল, রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ঢেলে সাজিয়েছিল, সামরিক বাহিনীকে নতুন নতুন সব অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করেছিল এবং সর্বোপরি একটি সমগ্রতাবাদী ও ফ্যাসিবাদী একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। হিটলার এমন একটি বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করেন যাতে সকল "লেবেনস্রাউম" (জীবন্ত অঞ্চল) দখল করে নেয়ার কথা বলা হয়। ১৯৩৯ সালে জার্মানরা পোল্যান্ড অধিকার করে এবং ফলশ্রুতিতে ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এভাবেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।