পৃথিবীর ইতিহাসে দেখেছি যে, ধর্মকে রাজনৈতিক ক্রিয়াকান্ডে অতীতে বহুবার করা হয়েছে। করা হয়েছে শুধুমাত্র বিশেষ গোত্রের শাসন ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য। পাকিস্তানি আমলে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ধর্মকে তাদের শোষণের অস্ত্ররূপে ব্যবহার করেছিলেন। মানুষে মানুষে মানুষ হিসেবে যে ঐক্যবদ্ধ, যে ঐক্যবন্ধন ক্ষুধা তৃষ্ণা আকাঙ্ক্ষার সমতার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠে সে ঐক্যবন্ধনকে পাকিস্তানি শাসকরা ভয় করতেন। তাই তারা গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন নেতিবাচক ব্যবধানের উপর, যার ফলে একটি বিরোধকে চিরস্থায়ী মূল্য দেবার চেষ্টা করা হয়েছিল এবং সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে দুই বিরোধী আদর্শের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য শাসনযন্ত্র নির্মাণ করা হয়েছিল। বাঙালিদের পক্ষে আবেগ ভুলে গিয়ে, অনুভূতিকে হারিয়ে এবং আপন অস্তিত্বের শেষ লিপি মুছে দিয়ে শুধু একটি অবধারিত ধর্মীয় নিয়মে পাকিস্তানে সচল থাকা সম্ভবপর হয়নি। তারা প্রতিবাদ করেছে, ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, কখনো প্রত্যাশায় অপেক্ষা করেছে, কিন্তু আপন দাবি কখনো পরিত্যাগ করেনি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা বাঙালিরা চিন্তায় ও কর্মজগতে একত্রিত হলাম এবং বাংলাদেশের প্রকৃতি, ঘটনা, ইতিহাস এবং মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে বাস করবার অধিকার দাবি করলাম। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাদের নিষ্ঠুর শোষণ-নিষ্ঠায় বিকৃত স্বার্থপরতায় আমাদের দিকে পিছন ফিরে দাঁড়িয়েছিল, যার ফলে জীবনের যথাতথাকে অস্বীকার করে তারা এক অস্বাভাবিক জীবন নির্মাণ করতে চেয়েছিল, যেখানে জীবনের অঙ্গীকার ছিল না।