“চারিদিক তাকালে থরে থরে চোখে পড়ে গর্বিত গোলামদের মুখমণ্ডল। ইতিহাসের পাতা উল্টালে পাতায় পাতায় বড়ো অক্ষরে মুদ্রিত দেখি, গোলামদের বিখ্যাত স্বাধীনতা অনেক মানুষের সহ্য হয় না; স্বাধীনতায় নিরাশ্রয় বোধ করে তারা। তাই তাদের দরকার পড়ে প্রভুর। প্রভুর আশ্রয়ে গোলামেরা গৌরব ও সুখে বসবাস করে। বিদেশি শাসকেরা তাদের শাসিত জাতির সাথে একটিই সম্পর্ক পাতায়, তা হচ্ছে প্রভু ও গোলামের সম্পর্ক। একনায়কেরাও তাদের অনুগ্রহীতদের সাথে সম্পর্ক পাতায় একটিই, সেটি হচ্ছে প্রভু ও গোলামের সম্পর্ক। এ ছাড়া আর কোনো সম্পর্কে তারা বিশ্বাস করে না। যে গোলাম হয়ে আসবে, সে আশ্রয় পাবে প্রভুর পায়ে। সুখে থাকবে, শান্তিতে থাকবে, শক্তিতে থাকবে। শুধু একটি শর্তে; তাকে হতে হবে গোলাম। গোলাম প্রভুকে ভাববে নিজের বিধাতা, আর নিজেকে ভাববে প্রভুর বান্দা। শুধু ভাবলেই চলবে না; প্রতি মুহূর্তের আচরণে প্রকাশ করতে হবে, সে প্রভুর গোলাম বা বান্দা ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রভু তাকে সব দেবে, আর সে প্রভুর পায়ে তুলে দেবে নিজেকে।” ড. হুমায়ুন আজাদের এ কথার সত্যতা মেলে বর্তমান বিশে^র দিকে তাকালে। বিশ^ ইতিহাস থেকে শুরু করে সবকিছুতেই আজ এই সব দালাল আর তাদের প্রভুদের দৌরাত্ম্য। এসব প্রভু আর তাদের দোসরদের কাছে মুসলমানদের সবকিছুই খারাপ আর পাশ্চাত্যের সবকিছুই অমৃত; পূজনীয়। অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভায় কোনো নারীকে স্থান দেয়নি, এতে সমালোচনার মুখে পড়েছে তালেবান। অথচ সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম, আর্মেনিয়া, ইয়েমেন, ব্রুনাই, আজারবাইজানসহ এরকম মোট ১১টি দেশের মন্ত্রিসভায় কোনো নারী সদস্য নেই। অথচ সেসব দেশের ক্ষেত্রে কোনো উচ্চবাচ্য নেই আধিপত্যবাদী শক্তি আর তাদের দোসরদের। মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত এবং সিল্করোডের মিলনস্থল আফগানিস্তান একদা জ্ঞানীগুণী মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। বিশ^বিখ্যাত চিত্রশিল্পী বিহযাদের চিত্রকর্মের বিকাশভূমি ছিল হিরাট। মাওলানা রুমির জন্ম বলখে আর ভুবন বিখ্যাত ভারততত্ত্ব খ্যাত পণ্ডিত আল-বিরুনীর জীবন কেটেছিল গজনীতে। শুধু তাই নয়, অনেক বিশ^খ্যাত বীরদের প্রসবভূমি এই আফগানিস্তান। ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের প্রতিষ্ঠাতা, বাংলায় মুসলিম শাসনের সূত্রপাতকারীসহ দিগি¦জয়ী তৈমুর আর আহমাদ শাহ আবদালীর কর্মক্ষেত্র ও বিকাশভূমি ছিল আফগানিস্তান। বিশে^র মানুষের প্রত্যাশা, এই আফগানিস্তানে তালেবানরা শুধরে পথ চলবে এবং আফগানিস্তানকে নতুন করে গড়ে তুলবে। জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে এবং ঐতিহ্য ও ধর্মের সংমিশ্রণে আধুনিক ও মানবিক আফগানিস্তান গড়তে সাহায্য করবে তালেবানের নতুন প্রশাসকবৃন্দ, এটা বিশ^^বাসীর প্রত্যাশা।