হজ¦ দ্বীন-ইসলামের অন্যতম একটি বুনিয়াদ, যার ওপর ইসলাম নামক শাশ্বত স্থাপনা দাঁড়িয়ে আছে। সক্ষম মুসলমানদের ওপরই কেবল গোটা জীবনে একবার হজ¦ করা ফরয। এ বিধানটি কুরআন, সুন্নাহ্ এবং ইজমার মাধ্যমে অকাট্যভাবে সাব্যস্ত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, وَلِلّٰهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيْلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللّٰهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِيْنَ ‘এবং সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ¦ করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭) হজে¦র ব্যাপারে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যার সংখ্যা মুতাওয়াতের পর্যায়ে পৌঁছেছে। যেমন ইবনু উমর (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلٰى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللّٰهِ، وَإِقَامِ الصَّلَاةِ، وَإِيْتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ ‘ইসলামের স্তম্ভ হলো পাঁচটি। ১. ‘আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর রাসূল’Ñ এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা, ২. সালাত কায়েম করা, ৩. যাকাত আদায় করা, ৪. হজ¦ সম্পাদন করা এবং ৫. রমাদান মাসে সাওম পালন করা।’ (সহীহ্, বুখারী : ৮, মুসলিম : ১৬, আহমাদ : ৬০২২) জমহুর আলিমের মতে, যদি হজ¦ ফরয হওয়ার সকল শর্ত পাওয়া যায়, তাহলে সে ব্যক্তির ওপর তাৎক্ষণিকভাবে হজ¦ করা ফরয। যদি সে বিলম্বে হজ¦ পালন করে, তাহলে সে গুনাহগার হবে। সেজন্যই এ ফরয বিধান অবিলম্বে আদায় করা আবশ্যক। কারণ মানুষ কখনো অসুস্থ হয়ে যায় আবার কখনো প্রয়োজনীয় জিনিস বিলুপ্ত হয়ে যায়। যেমন রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, مَنْ أَرَادَ الْحَجَّ، فَلْيَتَعَجَّلْ، فَإِنَّهُ قَدْ يَمْرَضُ الْمَرِيْضُ، وَتَضِلُّ الضَّالَّةُ، وَتَعْرِضُ الْحَاجَةُ ‘যে ব্যক্তি হজে¦র সংকল্প করে, সে যেন অবিলম্বে তা আদায় করে। কারণ মানুষ কখনো অসুস্থ হয়ে যায়, কখনো প্রয়োজনীয় জিনিস বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং কখনো অপরিহার্য প্রয়োজন সামনে এসে যায়।’ (হাসান, আহমাদ, আবূ দাউদ : ১৭৩২, ইবনু মাজাহ : ২৮৮৩) হজ¦ এমন এক শ্রেষ্ঠ ইবাদাত যার প্রতিদান কেবলই জান্নাত। যেমন রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, وَالْحَجُّ الْمَبْرُوْرُ لَيْسَ لَهٗ جَزَاءٌ إِلَّا الْجَنَّةُ অর্থাৎ, “আর কবুলকৃত হজে¦র প্রতিদান কেবল জান্নাতই।” (সহীহ্, বুখারী : ১৭৭৩, মুসলিম : ১৩৪৯) উল্লিখিত আলোচনার মাধ্যমে স্পষ্ট যে, হজ¦ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত। সুতরাং এ ইবাদাতটি বিশুদ্ধভাবে সম্পাদন করা অপরিহার্য। আর সকল ইবাদাত মহান আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ হওয়ার পাশাপাশি তা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর আমল অনুযায়ী হতে হবে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, خُذُوْا عَنِّيْ مَنَاسِكَكُمْ ‘হে লোক সকল! তোমরা আমার কাছ থেকে তোমাদের হজে¦র নিয়ম-পদ্ধতি শিখে রাখো।’ (সহীহ্, মুসলিম : ১২৯৭, আবূ দাউদ : ১৯৭০, নাসায়ী : ৩০৬২) আলোচ্য বইতে হজে¦র বিধি-বিধান বিশুদ্ধ দলিলের আলোকে ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাগ্রন্থের সমন্বয়ে গ্রন্থটিকে সমৃদ্ধ করার সাথে সাথে বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় বিন্যস্ত করা হয়েছে। আর মাযহাবী দৃষ্টিভঙ্গির পূর্বে দ্বীন-ইসলামের সৌন্দর্যই সর্বপ্রথম উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। আলোচনার সারাংশ ‘এক নজরে হজ¦’ এবং ‘এক নজরে উমরা’ শিরোনামে উল্লেখ করা হয়েছে, যা পাঠককে খুবই উপকৃত করবে, ইনশাআল্লাহ। বইটি প্রকাশের ক্ষেত্রে যারা সহযোগিতা করেছেন, আমি তাদের সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। বিশেষভাবে বইটি প্রকাশের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বিন্দু প্রকাশকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বইটি রচনার ক্ষেত্রে যেসব উলামা-মাশায়েখ আমাকে সহযোগিতা করে চিরঋণী করেছেন, মহান আল্লাহর কাছে তাদের জন্য উত্তম প্রতিদান কামনা করছি। হজে¦র বিধানের সাথে হিদায়াত প্রত্যাশী সকল ভাই ও বোনের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্দেশ্যেই আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। মহান আল্লাহ আমাদের ঈমানে সজীবতা দান করুন। বইটি নির্ভুল করে প্রকাশের জন্য আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। তারপরও ভুল-ত্রুটি থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। কোনো ভুল-ত্রুটি কারো কাছে প্রতীয়মান হলে আমাদেরকে জানালে আমরা তা সংশোধনে সচেষ্ট থাকব, ইনশাআল্লাহ্। মহান আল্লাহ আমাদের সকলের কল্যাণকর প্রচেষ্টা কবুল করুন। আমাদেরকে ‘সিরাতুল মুস্তাকীমে’ অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমাকে ও আমার বাবা-মা, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষকবৃন্দসহ সকল মুমিনকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার পরিবারকে চক্ষু শীতলকারী করুন। আমীন।