"আমার আত্মজীবনী" বইটির শেষের ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী-যাকে আমরা মহাত্মা গান্ধী মে চিনি, নতুন করে তাঁর পরিচয় দেয়ার প্রয়ােজন পড়ে না। পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ, জনবহুল এবং উন্নয়নশীল রাষ্ট্র ভারতের তিনি জাতির পিতা। সমসাময়িক বহু নেতাকে ম্লান করে বিশ্ববাসীর হৃদয়ে মহাত্মা গান্ধীর নাম ও ব্যক্তিত্ব স্থান লাভ করেছে। আর আপন আদর্শ ও কর্মগুণে তিনি বিশ্বাবাসীকে এতােটাই প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, শান্তিকামী মানবসমাজের কাছে আজও তিনি প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে আছেন। ১৮৬৯ সালের ২ অক্টোবর ভারতের গুজরাট রাজ্যের অন্তর্গত পাের বন্দরে মহাত্মা গান্ধী জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন রাজকোট নামের এক সামন্ত-রাজ্যের দেওয়ান। মাতা পুতলী বাঈ অত্যন্ত নম্র এবং ধর্মপরায়ণ ছিলেন। তার চারিত্রিক স্বভাব গান্ধীজী নিজের ব্যক্তিত্ব ও কর্মে আমৃত্যু লালন করেছেন। স্থানীয় বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পর ভবনগরে শ্যামৰ্চাদ কলেজে পড়াশুনা করেন এবং ১৯ বছর বয়সে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য ইংল্যান্ড যান। সেখানে বহু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় ও ইংরেজ নেতাদের সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর পরিচয় ঘটে। যথাসময়ে ব্যারিস্টারি পাশ করে ভারতে ফিরে এসে আইন ব্যবসা শুরু করেন। তবে ১৮৯৩ সালে একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা যান। সে সময়ে সেখানে কর্মরত ভারতীয়দের সঙ্গে ইংরেজদের বৈশম্যমূলক আচরণ দেখে তিনি ব্যথিত হন। আর এই ব্যথা এবং ক্ষোভ থেকেই মহাত্মা গান্ধীর অন্তরে জাতীয়তাবাদের বীচ অঙ্কুরিত হয়। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার স্থানীয় জুলু সম্প্রদায় ও ভারতীয়দের স্বপক্ষে অধিকার আন্দোলন গড়ে তুলে সফলতা লাভ করেন। দীর্ঘ বিশ বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় কাটিয়ে মহাত্মা গান্ধী যখন নিজ জন্মভূমি ভারতে ফিরে আসেন, ভারতে তখন দুর্দান্ত প্রতাপে ইংরেজরা শাসন করে যাচ্ছে। তারা ভারতীয়দের সঙ্গে শুধু বৈশম্যমূলক নয়, পশুর মতাে আচরণ করে যাচ্ছে- এই ব্যাপারটি মােহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকে বিচলিত করে তােলে এবং তিনি সিদ্ধান্ত নেন ভারতীয়দের স্বাধীনতা আদায় করার জন্য আমৃত্যু প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন। গান্ধীজী ছিলেন এক বিশাল হৃদয়ের অধিকারী। অত্যাচারীদের অত্যাচারের মাধ্যমে পরাজিত করা নয়- ভালােবাসার বিনিময়ে জয় করে নেওয়া ছিলাে গান্ধীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। তিনি ছিলেন অহিংস আন্দোলনের স্রষ্টা এবং পথপ্রদর্শক। এই মহান মানুষটির কর্মবহুল ও স্মৃতিজড়িত ঘটনা নিয়ে সমৃদ্ধ ‘আমার আত্মজীবনী’ যা গান্ধীজী নিজে লিখেছেন। নিঃসন্দেহে এই বইটি পাঠ করা শান্তিকামী প্রতিটি মানুষের আবশ্যক কর্তব্য।