ফ্ল্যাপে লিখা কথা রচনাসমগ্রের ক্ষেত্রে একটি বড় সুবিধা হলো-একজন লেখকের সব লেখার সাথে পরিচিত হওয়া যায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেই লেখকেরই রচনাসমগ্র প্রকাশিত হয়, যাদের লেখা পাঠকপ্রিয়। শাহ্জাহান কিবরিয়ার অনেক লেখাই পাঠকপ্রিয়। তাঁর মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস ‘বাঘা’ যেমন বিপুলভাবে পাঠকপ্রিয় হয়েছে, তেমনি অনেক গল্পও। মূলত শিশু-কিশোরদের জন্যই লেখেন। তাই তাঁর লেখায় শিশু-কিশোররা নিজেদের কল্পনার জগত খুঁজে পায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। এই সূত্রে তাঁর লেখা রূপকথার গল্পগুলোর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। রূপকথার ভক্ত নয়, এমন পাঠক বোধহয় কমই খুঁজে পাওয়া যাবে। এই বইটি যেহেতু ‘কিশোর গল্পসমগ্র’ নাম ধারণ করেছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য গল্পের পাশাপাশি শঅহ্জাহান কিবরিয়ার মৌলিক কিশোর গল্পের ক্ষেত্রে বলতে হয়। গল্পগুলো নানা রঙে রঙ্গিন। রঙের উপাদানে রয়েছে শিশু-কিশোরদের ভালোলাগা, শিক্ষণীয় বিষয়বস্তু ও অনুপ্রাণিত হবার মতো আরো কিছু। লেখক যেমন একটি শিশুর ‘ঋ’ লেখার অপারগতাকে উপলব্ধি করেছেন, তেমনি শিশু-কিশোরদের কাছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বাংলার রূপ, ঐতিহ্য তুলে নেবার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এই বইয়ের গল্পগুলো শিশু-কিশোরদের গল্প পড়ার আনন্দকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে, শাহ্জাহান কিবরিয়ার লেখার নিয়মিত পাঠক হিসেবে এই আশ্বাস সম্পূর্ণরূপে দিতে পারি।
"শাহজাহান কিবরিয়ার পোশাকি নাম মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া। জন্ম ২৪ জানুয়ারি ১৯৪১। নোয়াখালী জেলার অধুনালুপ্ত শহর এবং মাইজদী কোর্ট শহরে কেটেছে তাঁর শৈশব ও কৈশোর। ১৯৫৭ সালে নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৬০ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আই এ পাস করেন। বি এ প্রথম বর্ষ ঢাকা কলেজ ও পরে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ১৯৬৩ সালে বি এ (সম্মান)। ১৯৬৪ সালে বাংলায় এম এ পাস করেন। ১৯৬৩ সালে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু। পরে দৈনিক গয়গাম, ফ্র্যাঙ্কলীন বুক প্রেত্মামস, পাকিস্তান কাউন্সিলর, দৈনিক গণবাংলা, দৈনিক পূর্বদেশ, বাংলা একাডেমি এবং সবশেষে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। শাহজাহান কিবরিয়া মৃদুভাষী, সজ্জন, অন্তর্মুখী মানুষ, তবে অন্তরে তাঁর রয়েছে দৃঢ়চিত্ততা এবং এর উৎস যেমন তাঁর ব্যক্তিসত্তা, তেমনই স্বদেশাত্মার সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা। নিভৃতচারী সাধকের মানস তিনি ধারণ করেন ভেতরে, বাইরের আড়ম্বর সযত্নে পরিহার করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর অনেকটা সময় ছিল তমসাচ্ছন্ন, সেই বৈরি পরিবেশেও তিনি যথাসাধ্য সচেষ্ট ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতিকে স্নাত করা, বিশেষভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের বাণী পৌঁছে দিতে। এই কাজে তাঁর অবলম্বন হয়েছে শিশু- কিশোরদের জন্য লেখালিখি এবং সৃজনশীল সাহিত্য রচনা। শাহজাহান কিবরিয়া সাহিত্যে মূল্যবান অবদান রাখার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও শিশু একাডেমি পুরস্কারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক পুরস্কার পান। প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৫০টির অধিক। সহজ সরল সাহিত্য উপাদান ও শাণিত নির্মাণশৈলী তাঁর রচনার প্রাণ। তিনি একদিকে নিজস্ব মৌলিক রচনার মধ্য দিয়ে পাঠক হৃদয় জয় করেছেন, অন্যদিকে বিদেশি রূপকথা ও লোককাহিনি অনুবাদ করে আমাদের শিশু সাহিত্যের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ গ্রন্থ রচনা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত করেছেন। তাঁর রচনায় রয়েছে আলাদা মাধুর্য ও শক্তি।"