লেখালেখি শুরু স্কুল জীবনে, সম্ভবত ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণীতে। ১৯৭১ এর আগের লেখাগুলোর মধ্যে কিছু পদ্য কিছু গদ্য ছিলো, গল্প কবিতা ইত্যাদি। সেগুলো আর পাবার সম্ভাবনা নাই, কেননা সেগুলো মুক্তিযুদ্ধের সময়, চারিদিকে পাকিস্তানী বাহিনীর হামলার মুখে, ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে পুড়িয়ে ফেলা হয়। মুক্তিযুদ্ধে আর সবার মতো আমারও মানসিক বয়স বেড়ে যায়, এরপরে আমি স্কুলের ছাত্র থাকলেও সমাজ রাষ্ট্র মানুষ নিয়ে আগ্রহ অনেক বিস্তৃত হতে থাকে। সেসময় পড়াশোনার ক্ষেত্রেও নতুন নতুন যোগ হয়, লেখার বিষয়বস্তুতেও তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন হয়। তবে সেই সময়েরও বেশ কিছু লেখা হারিয়ে গেছে, দৈনিক বাংলার সাহিত্য পাতা সহ বিভিন্ন সাময়িকীতে প্রকাশিত লেখাগুলো এখন আর হাতে নেই। ১৯৭২ এর শেষে লেখা এবং ৭৩-এ তৎকালীন সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত একটি লেখা দিয়েই তাই রচনাবলী শুরু হলো। রচনাবলীতে লেখাগুলো প্রথম প্রকাশের তারিখ ধরে সাজাতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু তা পুরোপুরি করা গেল না। কারণ সেভাবে লেখাগুলো গ্রন্থভুক্ত হয় নাই। যেমন আমার প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে। কিন্তু ৭০ দশকের বেশ কিছু লেখা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ৯০ এর দশক এবং তারও পরে। এই কারণে প্রথম প্রকাশিত লেখার সূত্রে একেকটি বই ধরেই সাজানো হচ্ছে রচনাবলী। তাতেও পুরোপুরি সময়ের ধারাক্রম রক্ষা করা সম্ভব হবে না। হয়তো হারিয়ে যাওয়া কোনো কোনো লেখা পরে পাওয়া গেলে তা যোগ করা সম্ভব হবে। এই খণ্ডে আমার তিনটি বই থেকে ১৯৭০ ও ৮০ এর দশকে প্রকাশিত লেখাগুলো নেয়া হলো। এই সময়ের আরও কিছু লেখা পরের খণ্ডে স্থান পাবে। রচনাবলীর এই খণ্ডের প্রথম বই সত্তর দশকে, যেখানে ঐ দশকের লেখাগুলোর কিছু সংকলিত হয়েছে কিন্তু বইটি প্রকাশিত হয়েছে অনেক পরে। ১৯৮২ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ বইতে ১৯৭৪ সালে কলেজ ছাত্র থাকাকালে এবং ১৯৭৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র থাকাকালে প্রকাশিত আমার এ বিষয়ক লেখাগুলো আছে। আমার লেখাগুলো প্রধানত শহর এবং গ্রামে আমার দেখা সেই সময়ের দুর্ভিক্ষাক্রান্ত মানুষদের নিয়ে। এরপরের বই বিশ্ব পুঁজিবাদ ও বাংলাদেশের অনুন্নয়ন-এর ১ম সংস্করণের অধ্যায়গুলো ১৯৮১-৮২ সালে লেখা। এতে বিশ্বব্যবস্থায় জ্বালানি, অস্ত্র, বহুজাতিক সংস্থা, ওষুধ ইত্যাদির পর্যালোচনার সাথে সাথে বাংলাদেশের রাষ্ট্রনৈতিক ব্যবস্থার অতীত বর্তমান নিয়ে অধ্যায়গুলো সাজানো হয়েছিল। তবে ২য় সংস্করণে আরও পরের লেখা যোগ করা হয়েছে। - আনু মুহাম্মদ
(জন্ম: ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৬) পুরো নাম আনু মুহাম্মদ আনিসুর রহমান হলেও আনু মুহাম্মদ নামেই অধিক পরিচিত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক। ঢাকায় লেখাপড়া শেষ করে ১৯৮২ থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে যোগদান করেন। এছাড়া একই বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগেও শিক্ষকতা করেছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী শোষণ, বৈষম্য, নিপীড়ন ও আধিপত্য বিরোধী তত্ত্বচর্চা ও লড়াইয়ে সক্রিয় অংশ নেন। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনসহ যে কোন প্রকার নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন। বর্তমানে তিনি তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব। বাংলাদেশে মার্কসীয় অর্থনীতি ও রাজনৈতিক অর্থনীতি সংক্রান্ত আলোচনায় তিনি সবচেয়ে পরিচিত লেখক।