বর্তমান বিশ্ব যেন আজ চরম অরাজকতা, রাজনৈতিক উত্তেজনা, ধর্মীয় সহিংসতা ও অর্থনৈতিক অচলাবস্থায় ক্লান্ত। এই সংকটাবস্থা থেকে উত্তরণে যে মহাপরিকল্পনাই প্রণয়ন করা হোক না কেন, যুবকদের উপেক্ষা করে তার সফল বাস্তবায়ন অসম্ভব। বাস্তবিকার্থেই যেকোনো অচলাবস্থা তৈরি এবং তা থেকে পরিত্রাণের প্রচেষ্টায় যুবকদের ভূমিকাই মুখ্য। ফলত বর্তমান সংকটাবস্থায় চরমপন্থি একটি গোষ্ঠী অত্যন্ত সক্রিয় ও চাতুর্যের সাথে মুসলিম যুবকদের উসকে দিয়ে কার্যসিদ্ধি করতে মরিয়া। এই প্রক্রিয়ার শুরুতেই তারা যুবকদের মন-মগজ ঢুকিয়ে দেয় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হলে তরবারির কোনো বিকল্প নেই। ফলে বেরিয়ে পড়তে হবে এখনই। বিপরীতে আরেকটি দল মনে করছে, ইসলাম মূলত মসজিদের চার দেওয়াল, কুরআনের দুই মলাট ও তসবির একশ দানার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এর বাইরে বাস্তব জীবনের সঙ্গে ইসলামের কোনো লেনাদেনা নেই। থাকলেও ফিতনার এই যুগে তার প্রয়োগ অসম্ভব। সুতরাং ঘরে বন্দি থাকাই শ্রেয়। তাত্ত্বিক বিচারে ওপরের দুই দলই বাড়াবাড়ি ও অবহেলার বেড়াজালে আটকা পড়েছে। ইসলামের জাগরণ যেন আজ নিজের ঘরেই আষ্টেপৃষ্ঠে বন্দি। ইসলামি জাগরণের এই বন্দিদশা থেকে মুক্তির ভারসাম্যপূর্ণ রূপরেখা ইসলামি জাগরণ : অবহেলা ও বাড়াবাড়ি বইটি।
শায়খ প্রফেসর ড. ইউসুফ আবদুল্লাহ আল কারযাভি (১৯২৬-) মিশরীয় বংশোদ্ভূত একজন প্রভাবশালী আধুনিক ইসলামি তাত্ত্বিক ও আইনজ্ঞ। তিনি মুসলিম ধর্মতত্ত্বিকদের অভিজাত সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সে (International Union of Muslim scholars)-এর সাবেক চেয়ারম্যান। জন্ম ১৯২৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। মিসরের উত্তর নীলনদের তীরবর্তী সাফাত তোরাব গ্রামে। দুই বছর বয়সে বাবা ইন্তিকাল করলে চাচা তার লালন-পালন করেন। দশ বছর বয়সে তিনি সম্পূর্ণ কোরআন হিফজ করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা করেন আল-আজহার কারিকুলামে। প্রাচীন ইসলামী বিদ্যাপীঠ আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উসুলুদ দ্বীন অনুষদ থেকে অনার্স, আরবি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। মিসরের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘Institute of Imams’ এর পরিদর্শক হিসেবে কর্মজীবনে পদার্পণ করেন। কিছুদিন তিনি আওকাফ মন্ত্রণালয়ের ‘Board of Religious Affairs’ এ কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৭ সালে তিনি কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শরীয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের প্রতিষ্ঠাকালীন ডীন নিযুক্ত হন। ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি এখানে কর্মরত থাকেন এবং একই বছর তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্র’। ১৯৯০-৯১ সালে আলজেরিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের Scientific Council এর চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯২ সালে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্রের ডিরেক্টর হিসেবে পুনরায় কাতার ফিরে আসেন। তিনি জর্ডানের রয়্যাল অ্যাকাডেমি ফর ইসলামিক কালচারাল অ্যান্ড রিচার্জ (Royal academy for Islamic culture and research), ইসলামি সম্মেলন সংস্থা (OIC), রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামি এবং ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টার, অক্সফোর্ড এর সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৪১১ হিজরিতে ইসলামী অর্থনীতিতে অবদান রাখায় ব্যাংক ফয়সল পুরষ্কার লাভ করেন। ইসলামি শিক্ষায় অবদানের জন্য ১৪১৩ হিজরিতে মুসলিম বিশ্বের নোবেল খ্যাত কিং ফয়সাল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন । ১৯৯৭ সালে ব্রুনাই সরকার তাকে ‘হাসান বাকলি’ পুরষ্কারে ভূষিত করে।