স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় মুক্তিযুদ্ধের স্পৃহা সঞ্চারিত হয়েছিল বাঙালী জাতির মধ্যে। নেতৃত্বের দুর্বলতা ছিল, দোদুল্যমানতাও ছিল সশস্ত্র সংগ্রামে এগিয়ে যেতে। কিন্তু সারাদেশের মানুষ এগিয়ে গিয়েছিল। ছাত্র-তরুণ সমাজ লড়াই-এর ডাক দিয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল। তখন আর পেছোবার পথ ছিল না কারো। বিপুল ত্যাগ-ক্ষয়ের ভেতর দিয়ে অভ্যুদয় ঘটলো-এজাতির, এদেশের। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্যে নিহিত ছিল অসাম্প্রদায়িক ও অর্থনৈতিক সাম্যভিত্তিক বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। সর্বজনীন রাষ্ট্রকাঠামো নির্মাণের স্বপ্নে তাড়িত ছিল বাঙালী জনগোষ্ঠী। কিন্তু অনেক দামে কেনা এ দেশটিতে জনসাধারণের কোন স্বপ্নেরই বাস্তবায়ন ঘটলো না। না অর্থনৈতিক সাম্য নিশ্চিত হলো, না সম্প্রদায় নির্বিশেষ সকলের নিশ্চিন্তে বসবাসের উপযোগী একটি ভূখন্ড গড়ে উঠলো। অর্থনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য যে শর্ত দরকার ছিল তা ছিল অনুপস্থিত। এজন্য যে দর্শন, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা প্রয়োজন তেমন নেতৃত্ব ও সনিষ্ঠ কর্মী বাহিনীর অভাব ছিল সুস্পষ্ট। অন্যদিকে, ধর্ম-সম্প্রদায় নিরপেক্ষ সংস্কৃতি গড়ে তোলার মধ্যে দিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রেও শাসক দল ও নেতৃত্বের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে প্রকটভাবে। এমনি এক পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্র আবর্তিত হয়েছে। মানুষের স্বপ্ন পরিণত হয়েছে দুঃস্বপ্নে।
লেখক, গবেষক ও সংবাদকর্মী আইয়ুব হোসেনের জন্ম নওগাঁয়। তরুণবয়সে প্রগতিশীল ধারার রাজনীতর সঙ্গ যুক্ত হন। মুক্তিযুদ্ধে ৭ নম্বর সেক্টরে অন্তর্ভুক্ত থেকে একজন সাহসী কিশোর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। সক্রিয় ও সার্বক্ষণিকভাবে রাজনীতিতে তৎপর থাকার কারণে একাধিকবার কারাগারে অন্তরীণ থেকেছেন। পরে দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করলেও সাম্য সমাজের স্বপ্ন থেকে বিচ্যুত হননি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর পেশা হিসেবে সংবাদপত্র, বেসরকারি উন্নয়ন ও গবেষণার সংস্থা এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমীতে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে সংবাদকর্মী হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি লেখালেখি ও সামাজিক গবেষণায়ও নিবিষ্ট। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে দেশের বিশিষ্ট স্বশিক্ষিত দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের রচনাসমগ্র তিন খণ্ডে সম্পাদনা ও জীবনী রচনা। এ যাবৎ প্রকাশিত হয়েছে প্রায় সত্তরটি গ্রন্থ এবং পনেরটি গবেষণাপত্র। তিনি প্রথা ও প্রত্ম নামের দুই সন্তানের জনক।