সৃষ্টির প্রারম্ভ কাল থেকেই মানুষ এক আল্লাহর ইবাদত করেছে। একত্ববাদের ওপর অবিচল থেকেছে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে শয়তানের প্ররোচনা তাদেরকে একত্ববাদ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তারা আল্লাহর ইবাদত পরিত্যাগ করে মূর্তিপূজা আরম্ভ করেছে। . এভাবে কেটে গিয়েছে অনেক বছর। অবস্থা নাজুক থেকে নাজুক হয়েছে। মানুষ বিস্মৃত হয়েছে একত্ববাদের বাণী। এ সময় আল্লাহ চাইলেন পথভোলা সমাজকে নতুন করে একত্ববাদের শিক্ষা দিতে। পাঠালেন এক মহামানবকে। যিনি হজরত নুহ আলাইহিস সালাম। . তিনি নিজ সম্প্রদায়কে আল্লাহর বাণী শোনালেন। দেবদেবীর পূজা ছেড়ে এক আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করতে বললেন। কিন্তু তার সম্প্রদায় ছিল একরোখা ও অহংকারী। তারা অহংকার দেখিয়ে প্রত্যাখ্যান করল আল্লাহর রাসুলকে। দিলো হত্যার হুমকি-ধমকি। মুষ্টিমেয় কিছু লোক ছাড়া কেউ তার দাওয়াত গ্রহণ করল না। কেটে গেল বছরের পর বছর। . তারা থামল না। মহান রবের প্রতিশ্রুত শাস্তির প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ল। আল্লাহর ক্রোধকে ত্বরান্বিত করল। নেমে এলো দুর্যোগ। মহাপ্লাবন। জমিন বিদীর্ণ করে উঠে এলো পানি; আসমান থেকে অঝোর ধারায়ও বর্ষণ হলো পানি। ধ্বংস হলো সবকিছু, বেঁচে গেলেন কেবল আল্লাহর নবি ও তার সঙ্গীরা। . এরপর নতুন ইতিহাস রচিত হলো। গড়ে উঠল নতুন সমাজ। সম্প্রীতি আর ন্যায়ের সমাজ। যে সমাজের ভিত ছিল একত্ববাদের ওপর। শুরু হলো দ্বিতীয় মানবসভ্যতার সূচনা। . লিবিয়ার প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. আলি মুহাম্মদ সাল্লাবি রচিত এ বই আমাদেরকে সেই ইতিহাসের গল্প শোনাবে। জানাবে সেই হাজার হাজার বছর আগের তথ্য নির্ভর ইতিহাস।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০