পবিত্র কুরআনের কোনো কোনো আয়াতে মুসলমানদের জন্য কাফিরদের চেয়ে মুনাফিকদের বেশি বিপজ্জনক শত্রু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এরা একদিকে বাহ্যিকভাবে ইসলামের কাজ করে মুসলিম সমাজকে প্রতারিত করে এবং মুসলমানদের কাছ থেকে আইনগত, আর্থিক ও সামাজিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, অন্যদিকে শত্রুর গুপ্তচর হিসেবে কাজ করে মুসলমানদের গোপন বিষয় তাদেরকে জানিয়ে দেয়। আর প্রকাশ্য শত্রু থেকে আত্মরক্ষা সহজ হলেও গোপন শত্রুর চক্রান্ত থেকে বাঁচা খুবই দুষ্কর। এই মুনাফিক-গোষ্ঠীর দ্বারা ইসলামের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বর্তমানেও এরাই ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর। এরা ইসলামের প্রতি চরম বিদ্বেষ পোষণ করে। এরা কাফিরদের চেয়েও জঘন্য, তাই জাহান্নামে এদের শাস্তিও হবে সবচেয়ে বেশি। গ্রন্থটিতে নিফাক ও মুনাফিকের পরিচয়, প্রকারভেদ, মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য ও তাদের ভয়ংকর রূপ, নিফাকের কারণ ও পরিণাম, দ্বীন ও মিল্লাতের বিরুদ্ধে মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র এবং নিফাক থেকে পরিত্রাণের উপায় ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলা ভাষায় এটিই প্রথম কোনো গ্রন্থ নয়, নিফাক ও মুনাফিকের পরিচয় নিয়ে আগেও বইপত্র বেরিয়েছে। বলতে গেলে এটি এ বিষয়ে লিখিত পূর্বকার বইগুলোর নির্যাস এবং সময় ও অবস্থার আলোকে কিছু সংযোজনসহ একটি নতুন উপস্থাপন।
ড, আহমদ আলী ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম জেলার লােহাগাড়া উপজেলাধীন পশ্চিম কলাউজান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্রজীবনের শুরু থেকে প্রতিটি স্তরে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে বি.এ. (অনার্স) ও মাস্টার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জনসহ পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। অতঃপর সৌদি আরবের রিয়াদস্থ কিং সাউদ ইউনিভার্সিটি থেকে আরবি ভাষার শিক্ষক প্রশিক্ষণের ওপর উচ্চতর ডিপ্লোমা অর্জন করেন।
কর্মজীবনের শুরুতে তিনি চুনতী হাকীমিয়া আলিয়া মাদরাসা, চট্টগ্রাম-এর মুহাদ্দিস ও উপাধ্যক্ষ ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যােগদান করেন। বর্তমানে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে প্রফেসর হিসেবে নিয়ােজিত আছেন এবং বাংলাদেশ ইসলামিক ল' রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা। থেকে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক গবেষণা পত্রিকা ‘ইসলামী আইন ও বিচার'-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক।
তিনি দেশেবিদেশে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে গবেষণাপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। ইতােমধ্যে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা থেকে তাঁর 'ষােলটি গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলাে- খলীফাতু রাসূলিল্লাহ আবু বাকর আস-সিদ্দীক (রা.), বিদ'আত (১ম-৪র্থ খণ্ড), মুসলিম লিপিকলা: উৎপত্তি ও বিকাশ, আধুনিক আরবী কাব্যের ইতিহাস ১ম খণ্ড, ইসলামের শাস্তি আইন, তাযকিয়াতুন নাফস (আত্মশুদ্ধি), ইসমাতুল আম্বিয়া, ইসলামে বাসস্থানের অধিকার ও নিরাপত্তা, ইসলামের দৃষ্টিতে পােশাক, পর্দা ও সাজসজ্জা, সার্বভৌমত্ব: ইসলামী দৃষ্টিকোণ, গণতন্ত্র ও ইসলাম। তাছাড়া আরবি ভাষা ও সাহিত্য, লিপিকলা, ইসলামের ইতিহাস, জীবনদর্শন, আইন ও সমাজ ব্যবস্থার ওপর তার নানা বিষয়ে লিখিত পঞ্চাশােধিক গবেষণাপ্রবন্ধ দেশবিদেশের বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।