ভালোবাসা বসত করে হৃদয়ের গভীরে। ভেতরে ভালোবাসা থাকলে নানা রঙে, নানা ঘ্রাণে তার প্রকাশ ঘটবেই। মোল্লা আলী ক্বারী রহ. হজ আদায়ের জন্য মক্কা মদীনায় গেলে সেখানে কখনো পায়ে জুতা পরতেন না। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলতেন, মক্কা মদীনার এইসব পথ দিয়ে আমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাঁটাচলা করেছেন। জানি না, পথের কোথায় কোথায় তাঁর কদম মুবারক পরেছিল। জুতা পায়ে হাঁটলে যদি সেই জায়গাতে আমার জুতার ছোঁয়া লেগে যায় তাহলে বেয়াদবীর কোনো সীমা থাকবে না। এখন বল, কোন সাহসে আমি এখানে জুতা পায়ে হাঁটতে পারি? মদীনার প্রতি ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর ভালোবাসা ছিল অতুলনীয়। কিন্তু তিনি মদীনায় এসে কখনো তিনদিনের বেশি অবস্থান করতেন না। একবার লোকজন অনেক জোরাজুরি করে তাকে মদীনায় রেখে দিতে চাইলে তিনি সকলের অগোচরে মদীনা থেকে চলে যান। এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন- আমি দানাপানি না খেয়ে, পেশাব পায়খানা না করে বড়জোর তিনদিন থাকতে পারি। মদীনায় তিনদিনের বেশি থাকতে গেলে অনন্যোপায় হয়ে আমাকে পানাহার ও পেশাব-পায়খানা করতে হবে। যে জমিনে আমার নবীর পদযুগল বিচরণ করেছে, যে ভূমির আবরণ নিয়ে এখনো আমার নবী অবস্থান করছেন, সেই পূণ্যময় ভূমিতে আমি পেশাব-পায়খানা করি কোন সাহসে বল? নবীজির প্রতি এই যে অমলিন ভালোবাসা, এমন নজীর দু’চারটি বা দু’চারশ’ নয়। এমন নজীর অসংখ্য, অগণিত। যুগ যুগ ধরে মানুষ নবীজিকে কেন এত ভালোবেসে আসছে? তাঁকে ভালোবাসতে গিয়ে পার্থিব সব চাওয়া পাওয়া, এমনকি সাধের জীবনটা বিসর্জন দিতেও তারা কুণ্ঠিত হয় না। কেন এই অকুণ্ঠ আত্মদান? এই প্রশ্নের উত্তর বেশ লম্বা। মানুষকে যথার্থ অর্থে মানুষ বানাবার জন্য এবং এই জগত সংসারকে নির্মল জান্নাতী সুখে ভরে তোলবার জন্য তিনি যা করে গেছেন তার কোনো তুলনা হয় না। নবীজির এই অতুলনীয় জীবনের নানাদিক নিয়ে নানাজন নানাভাবে কাজ করেছেন। তাদের পদরেখা দেখে দেখে সেই পথে আমিও দু’চার কদম ফেলতে চাচ্ছি। আমি তাদের মতো নই, তবে তাদের মতো হতে চাই। হয়তো এই প্রত্যাশা আমাকে কোনো একদিন তাদের কাতারে শামিল করে দিবে। সীরাত ও হাদীসের কিতাব থেকে চয়ন করে নবীজীবনের বেশ কিছু শিক্ষণীয় ঘটনা দিয়ে আমি এখানে একটা মালা গেঁথেছি। যদি আমরা সেই মালাখানি হৃদয় দিয়ে বরণ করে নেই তাহলে আমার বিশ্বাস- এই মালার একেকটি হীরকখÐ আমাদের জীবনপথে আলোকবর্তিকা হয়ে উঠবে। চারপাশের পুতিগন্ধময় পরিবেশে সুরভিত ফুলের মতো সুরভি ছড়াবে সেই মালার একেকটি ফুল। সবশেষে একটাই নিবেদন- ‘রাসূল আমার আলো-আশা’র গল্পগুলো পড়তে গিয়ে যখনই মুখে বা মনে প্রিয়নবীর নাম চলে আসবে, তখনই প্রেম আর ভক্তি নিয়ে বলবেন- সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।