স্থলভাগের বৃহত্তম প্রাণী হাতি বইটি সহজ-সরল বাংলা ভাষায় রচিত বিজ্ঞানভিত্তিক হাতিবিষয়ক তথ্যে সমৃদ্ধ। নাতিদীর্ঘ এ গ্রন্থে একদিকে যেমন হাতির হালনাগাদ সব বৈজ্ঞানিক তথ্য ও উপাত্তসহ উপস্থাপন করা হয়েছে, তেমনি এ গ্রন্থে এ দেশ ও উপমহাদেশে হাতির উপর গবেষণা, হাতি ব্যবস্থাপনা, হাতি-মানুষে সংঘাত, প্রভৃতি বিষয়ে বিগত প্রায় তিনশ' বছরের বিস্তারিত বিবরণ স্থান পেয়েছে। বিশ্বজুড়ে ভূতাত্ত্বিক বয়সের মাপকাঠিতে অপেক্ষাকৃত কম ওজনের হাতির আবির্ভাবের সূচনালগ্নে এক চিমটি প্রাণী থেকে লাখ লাখ বছরের বিবর্তনে আজকের তিন-চার এমনকি সাত টন ওজনের হাতির যে ক্রমবিবর্তন তথ্য তা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এ গ্রন্থটিতে। এ গ্রন্থে দেশে ও বিদেশে হাতির বিস্তৃতি, হাতির জীবনযাত্রা প্রণালি, আহার, বাসস্থান, বংশবৃদ্ধি, সাময়িক পরিযায়ন প্রভৃতি বিষয়ও স্থান পেয়েছে। এছাড়া মানুষ কর্তৃক হাতি পালনের সূচনা, বন থেকে হাতি ধরার পুরোনো ও নতুন কৌশল, হাতিশালা, সমাজে হাতির ব্যবহার, চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্কে হাতি রাখার আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি, দেশি হাতির বিদেশ গমন, ইত্যাদিও বিধৃত হয়েছে এ বইতে। হাতি-মানুষে সংঘাত কমানোর উপায় এবং প্রকৃতিতে হাতি সংরক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থাবলি সম্পর্কিত বিশদ আলোচনা বইটিকে সমৃদ্ধ করেছে। হাতিবিষয়ক বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভের জন্য সংশ্লিষ্ট চিত্র, মানচিত্র, ছক ও চাট-এর সন্নিবেশ বইটির উপযোগিতা বৃদ্ধি করেছে।
ড. রেজা খান ১৯৪৭ সালের ১লা জানুয়ারি ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার বালিয়া আমে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা খান মোহাম্মদ জোয়াদের আলী এবং মাতা : আয়েশা খাতুন। তিনি মানিকগঞ্জ হাই স্কুল থেকে এসএসসি এবং দেবেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। বিএসসি ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগ থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করে ১৯৭৩ সালে উক্ত বিভাগেই প্রভাষক পদে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে ভারত থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করে ১৯৭৭ সালে তিনি পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল-আইন চিড়িয়াখানায় ১৯৮৩ সালে পাখি বিশেষজ্ঞ পদে নিযুক্ত হন। বর্তমানে তিনি দুবাই সাফারি পার্কের প্রিন্সিপাল ওয়াইল্ড লাইফ স্পেশালিস্ট হিসেবে কর্মরত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০টি। তারমধ্যে ওয়াইল্ড লাইফ অব বাংলাদেশ-এ চেক লিস্ট, বাংলা একাডেমি প্রকাশিত তিন খণ্ডের বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী ও বাংলাদেশের পাখি; পাখির রাজ্য, বার্ডস অব দুবাই-এ পিকটোরিয়াল গাইড বেশ উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। তিনি ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন, ২০১২ সালে চ্যানেল আই প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন পদক, ২০১৬ সালে স্টার লাইফ টাইম অ্যাওয়ার্ড এবং ২০২২ সালে সিটি ব্যাংক তরুপল্লব জীববৈচিত্র্য পুরস্কারে ভূষিত হন। সম্প্রতি ২০২২ সালে তাঁকে বাংলা একাডেমির সাম্মানিক ফেলোশিপ প্রদান করা হয়।