“ট্রাভেলস অব ইবনে বতুতা” বইটির প্রথম অংশের কিছু কথাঃ এক হজ পালন ও হজরত মুহাম্মর (স.)-এর রওজা মােবারক জিয়ারতের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমি যেদিন জন্মভূমি তাঞ্জিয়ার ছেড়ে মক্কার পথে যাত্রা করলাম, সেদিন। ছিল হিজরি ৭২৫ সালের ২ রা রজব, বৃহস্পতিবার (১৪ই জুন, ১৩২৫)। হিসেবমতে আমার বয়স তখন বাইশ বছর (২১ বছর ৪ মাস)। পথে সঙ্গ দেওয়ার মতাে কাউকে না পেয়ে বা কোনাে কাফেলার খোঁজ না পেয়ে একাই বেরিয়ে পড়ি আমি। তখন আমার বাবা-মা বেঁচে ছিলেন। তাদের ছেড়ে আসার পর্বটা খুব কঠিন ছিল, বিদায়ের সময় ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল আমাদের সবার। তিলিমসান (Tilimsan, বর্তমানে Tlemsen) শহরে প্রথমবার যাত্রাবিরতি করলাম। তখন সেখানকার সুলতান ছিলেন জিয়ানি (Ziyani) রাজবংশের আবু তাশিফিন প্রথম (১৩১৮-১৩৪৮)। তাঁর দরবারে তিউনিসের সুলতানের দুজন দূতকে দেখলাম। সেদিনই তারা দেশে ফিরে যাচ্ছিল। আমি তিউনিস হয়ে হজে যাচ্ছি শুনে তাদের একজন আমাকে তাদের সঙ্গী হতে বলল, কিন্তু আমার রসদের ঘাটতি ছিল বলে তা সম্ভব হলাে না। তিলিমসান থেকে প্রয়ােজনীয় কেনাকাটা করে তিনদিন পর তাদেরকে ধরার জন্য পূর্ণগতিতে ছুটলাম আমি। মিলিয়ানা (Miliana) নামের এক শহরে তাদের নাগাল পেলাম এবং সবাই মিলে সেখানে দশ দিনের জন্য যাত্রাবিরতি করলাম। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে এর মধ্যে দুই দূতই অসুস্থ হয়ে পড়ল। একজনের অবস্থা গুরুতর হয়ে উঠেছে দেখে যাত্রা করেও শহরের চার মাইল দূরে আবার তিনদিনের জন্য তাঁবু ফেলতে বাধ্য হলাম আমরা। সেখানে লােকটি মারা গেল। এ সময়ে সেখান দিয়ে তিউনিসের সওদাগরদের কাফেলা যেতে দেখে আমি তাদের সঙ্গে চললাম। আলজিয়ার্সের (Al-Jazair) আল-জাজা’ইর শহরের কাছে এসে আগের দলটির জন্য অপেক্ষা করলাম আমরা, তারপর সবাই একসঙ্গে মিটিজার মধ্যে দিয়ে ওকের পাহাড় (Jurjura) হয়ে বিজায়া (Bijaya, বর্তমানে Bougie) এলাম। তখন বিজায়ার কমান্ডার ছিল ইবনে সাঈদ আন্-নাস। সেখানে আমাদের সঙ্গী এক সওদাগরের মৃত্যু হলাে। ট্রাভেলস অব ইবনে বতুতা