স্যার ওয়াল্টার স্কটের প্রখ্যাত উপন্যাস ‘আইভ্যানহো-’র অনুবাদ করেছিলেন বিভূতিভূষণ, বাংলা সাহিত্যে ‘আইভ্যানহো’ উপন্যাসটির প্রভাব সুদূরপ্রসারী। বঙ্কিম স্মরণে উদ্যাপিত এক সাহিত্যসভায় বিভূতিভূষণ বলেছিলেন, ‘বৃহত্তর পাঠকসমাজে এটা ছড়িয়ে দেওয়াই ছিল আমার এই অনুবাদ-কর্মের উদ্দেশ্য। বদ্ধিমাজ চট্টোপাধ্যায় যখন তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দুর্গেশনন্দিনী’ ১৮৬৫ সালের মাঘ মাসে প্রকাশ করেন, তখন এক শ্রেণীর লোক এটিকে ‘আইভ্যানহো-’র ছায়া অবলম্বনে রচিত বলে প্রচার করতে শুরু করেন। বঙ্কিমচন্দ্র সে প্রচারের প্রতিবাদ হিসাবে মন্তব্য করেছিলেন, ঐ উপন্যাস লেখার আগে তিনি ‘আইভ্যানহো’ পড়েননি এবং তখনকরা অন্যতম বিদগ্ধ বাক্তি কালীনাথ দত্ত। লিখেছিলেন, ‘আমি তাঁহার honesty unimpeachable বলে বিশ্বাস করি।’ কিন্তু এতদসত্ত্বেও উষ্ণ প্রচারের ঢক্কানিনাদ হয়নি। বিভূতিভূষণ বলেছিলেন, এ কলঙ্ক মিথ্যা। বৃহত্তর পাঠক, যাঁরা ইংরেজি জানেন না, তাঁরা বাংলায় এটা পড়–ন। পড়লে বুঝতে পারবেন এ-কলঙ্কের কোনো ভিত্তি নেই। একটা দুর্গ আর দুই প্রতিযোগীর দ্বন্দ্ব থাকলেই কি সেটা ‘আইভ্যানহো’র অনুসারী হয়ে দাঁড়াবে? বিভূতিভূষণের অনুবাদ মূলের ভাষা-রীতির অনুগামী। পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনার সাহায্যে স্কট মধ্যযুগকে চিত্ররূপময় ও দৃশ্যমান করে তুলতে পারতেন। ‘আইভ্যানহো’-এর অনুবাদ পড়তে পড়তে পাঠকের মনও মধ্যযুগের ইংলন্ডের সামন্ততান্ত্রিক পরিবেশে চলে যেতে পারবে। বাংলা অনুবাদ সাহিত্যে ‘আইভ্যানহো’ গ্রন্থটি অমূল্য সংযোজন হিসাবে বিবেচিত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। —ঊষাপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়।