বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ আলেম শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন ইসলামী সেমিনার, সভা ও মাহফিলে যোগদানের উদ্দেশ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক দেশের অসংখ্য শহরে উপস্থিত হয়ে পথহারা মানুষকে দিয়েছেন পথের দিশা। এই নব্য জাহেলী যুগ-সৃষ্ট অনেক জটিল সমস্যার ইসলামী সমাধান পেশ করে মানবতাকে সিরাতে মুস্তাকীমের রাহনুমায়ী করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি নিজেই লিখেছেন— “বিগত প্রায় বিশ বছর যাবৎ আমি ঠিকানাবিহীন পত্রের ন্যায় সফর করে চলেছি। এ সকল সফরে অসংখ্য দেশ ও শহরের মাটি পায়ে লাগিয়েছি। তন্মধ্যে যে সকল সফরে উল্লেখযোগ্য জ্ঞানার্জন হয়েছে অথবা এ সুবাদে ইসলামী ইতিহাসের হারানো কোনো অধ্যায় উল্টিয়ে দেখার সুযোগ হয়েছে, তার বিবরণ ‘সফরনামা’ রূপে লিপিবদ্ধ করেছি। যার প্রথম খণ্ড বিশটি দেশের সফরনামা ‘জাহানে দীদাহ্’ নামে প্রকাশিত হয়েছে এবং আমার ধারণাতীত পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেছে। এরপরও আমার সফরের ধারা অব্যাহত রয়েছে এবং এখনো সফরেই আছি। সফরনামার প্রথম খণ্ড ‘জাহানে দীদাহ্’ প্রকাশিত হওয়ার পরও আমার অনেক দেশ সফর করা হয়েছে সেগুলোর বিবরণও লিপিবদ্ধ করেছি এবং তা ‘দুন্ইয়া মেরে আগে’ নামে প্রকাশিত হয়েছে। এ সফরনামার তৃতীয় খণ্ড ‘সফর দর সফর’ নামে প্রকাশিত হয়েছে। দুআ করি আল্লাহ পাক এই কিতাবকে পাঠকদের জন্য উপকারী বানান। আমীন।” আমরা পূর্বে এ সকল সফরনামা অনুবাদ করে সাত খণ্ডে প্রকাশ করেছিলাম। বর্তমানে সে সকল খণ্ড ব্যাপক পরিমার্জন ও দীর্ঘ সম্পাদনার পর দুই দুই খণ্ড একত্রে প্রকাশ করা হচ্ছে। ফলে পূর্ব প্রকাশিত এবং পূর্ব প্রকাশিত সপ্তম খণ্ড (পৃথিবীর দেশে দেশে) “আমার দেখা পৃথিবী-৪” নামে যা ফিজি, ইরান, নিউজিল্যান্ড, সিরিয়া, কিরগিজিস্তান, আলবেনিয়া, রাশিয়া, জাপান, ল্যাটিন আমেরিকা, তাজিকিস্তান, হিন্দুস্তান ও জর্ডান মোট তেরটি দেশের সফরের কাহিনী সমন্বয়ে রচিত। সফরনামার এ খণ্ড পূর্বোক্ত অন্যান্য সফরনামার চেয়েও আকর্ষণীয়। কারণ এ খণ্ডে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাবাররুকাতসহ কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত দেশের সফরকাহিনী এবং সেখানকার বিরল, বিচিত্র ও বিস্ময়কর অবস্থা ও ঘটনার বিবরণ এসেছে যা পাঠ করলে পাঠকমাত্রই পুলকিত ও বিস্মিত হয়ে আল্লাহ পাকের অপূর্ব কুদরতের স্বীকৃতিস্বরূপ বলে উঠবেন ‘সুবহানাল্লাহ’!
প্রখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী শুধু ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে বই রচনা করেননি, তিনি একাধারে ইসলামি ফিকহ, হাদীস, তাসাউফ ও ইসলামি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। আর তা-ই নয়, তিনি একজন বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শরীয়াহ আদালতে, এমনকি পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চেরও বিচারক পদে আসীন ছিলেন। মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে ১৯৪৩ সালের ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুটি আলাদা রাষ্ট্রে পরিণত হলে তার পরিবার পাকিস্তানে চলে আসে এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ইসলামি নানা বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন, যেখান থেকে অর্থনীতি, আইনশাস্ত্র ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। আর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেছেন আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রি। দারুল উলুম করাচি থেকে পিএইচডি সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইসলামি ফিকহ ও ফতোয়ার উপর। সর্বোচ্চ স্তরের দাওয়া হাদিসের শিক্ষাও তিনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন ইসলামি বিষয়, যেমন- ফিকহ, ইসলামি অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির স্থায়ী সদস্যপদ রয়েছে তাঁর। পাকিস্তানে 'মিজান ব্যাংক' নামক ইসলামি ব্যাংকিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাকিস্তানে ইসলামি অর্থনীতির প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য বইও। তকী উসমানীর বই এর সংখ্যা ৬০ এর অধিক। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমূহ রচিত হয়েছে ইংরেজি, আরবি ও উর্দু ভাষায়। শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'Easy Good Deeds', 'Spiritual Discourses', 'What is Christianity?', 'Radiant Prayers' ইত্যাদি ইংরেজি বই, ও 'তাবসেরে', 'দুনিয়া মেরে আগে', 'আসান নেকিয়া' ইত্যাদি উর্দু বই উল্লেখযোগ্য। এসকল বই ইসলাম প্রসারে, এবং বিভিন্ন ইসলামি ব্যাখ্যা প্রদান ও আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।