পত্রপত্রিকা ম্যাগাজিনে প্রকাশ পাওয়া কবিতা থেকে কিছু কবিতা যার সংগ্রহে ছিল তিনিই হলেন আমার সুহৃদ কবি মাহবুবুর রহমান মুকুল। তার প্রচেষ্টা না হলে এ কাব্য প্রকাশ পেত না। কত কবিতা শত শত লেখা হারিয়ে যায়। ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনের পর শুরু হলো আরেক বিপর্যয়। আমার বসুরহাটের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হলো, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির উস্কানিতে। হামলা করা হলো, লুটপাট করা হলো এমনকি মিথ্যে মামলায় জড়ানো হলো। মগবাজারের বাসায় পুলিশের রেইড হলো। হলিক্রস কলেজে পড়া আমার অপ্রাপ্তবয়স্কা কন্যাকে মিথ্যা অজুহাতে এক মন্ত্রী গ্রেফতার করালো। কী আমার অপরাধ? শুধু মনের কথা লিখি আর সে জন্যেই এই নির্যাতন-নিপীড়ন। মাতৃভূমিকে ভালোবাসি। মানবতা ও মনুষ্যত্বকে ভালোবাসি। মুক্তির জন্য লড়েছি, মুক্তির জয়গান গাই আর সেটাই কি অপরাধ? নির্যাতনে-নিপীড়নে মানসিক যাতনায় আমার সাজানো সংসার ভেঙে চুরমার। আমার প্রণয়য়িনী সেলিনা আক্তার লাকী প্রয়াত, বড় কন্যা ডা. লিলিয়ানা রফি চৌধুরী জেনি আত্মহনণের পথ বেছে নিয়ে চলে যায় অজানায়। পুত্র মিনহাজ রফি চৌধুরী সানফ্রান্সিস্কো সিলিকন ভ্যালী, কেউ বা ঢাকায়, কেউ চলে গেছে চোখের আড়ালে। নিপীড়নে নিপীড়নে ভেবেছি বাঁচবো না। পাগলপ্রায় হয়ে পাড়ি দিয়েছি দেশ থেকে দেশান্তরে। স্রষ্টা দিয়েছেন সবÑনিয়েছেন সব। স্রষ্টার একি খেলা জানি না। বড় একা বড় অসহায় তাই ঐ দীর্ঘশ্বাস। এক সময়কার ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির গণসংগীত শিল্পী কবি গায়ক ঢাকা বাংলাবাজারের বিনিময় প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মাহবুবুর রহমান মুকুলের অসাধারণ উদ্যোগে এই কাব্যকলা। তাকে সশ্রদ্ধ অভিনন্দন।
জীবনধর্মী লেখক শৈশবেই ছবি আঁকতেন। সঙ্গীত ও সুন্দরের উদ্ভাবনায় প্রবল আকর্ষণ ছিল। ১৯৬৬ সালে বসুরহাট হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় দেয়াল পত্রিকায় কবিতা লিখে ছাত্র শিক্ষকদের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ১৯৬৮ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে পড়ার সময় কবিতা আবৃত্তি করে তৎকালীন ছাত্র শিক্ষক সমাজে সুপরিচিতি পান। উপনসত্তরের গণআন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের সুবাদে ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং সান্নিধ্য লাভ করেন। সঙ্গীত প্রেমী হবার কারণে ছাত্র ইউনিয়ন ও উদিসির সাথে যুক্ত হন। ১৯৭১ "মুক্তিযুদ্ধ" পত্রিকার নোয়াখালী দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলের রিপোর্টার ও বণ্টনের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন ও ত্রিপুরা যান। দেশ স্বাধীন হবার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার পর পরবর্তীতে আশির দশকে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া থেকে ব্যবস্থাপনার উচ্চতর ডিগ্রি নেন। তিনি কিছুকাল রেডিও বাংলাদেশ ঢাকা কেন্দ্রের চুক্তি ভিত্তিক পাণ্ডুলিপিকার ছিলেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তিনি গ্রেফতার হন ও জেল জুলুমের শিকার হন। ২০০১ সালে ক্ষমতার পালা বদলে নির্যাতনের শিকার হন। তার বসুরহাটের বাসভবনে অগ্নি সংযোগ করা হয়, মিথ্যা হত্যা মামলায় জড়ানো হয়। নির্যাতন নিপীড়নে তার পুরো পরিবার চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। স্ত্রী কন্যা প্রয়াত হন। পাগলপ্রায় হয়ে পৃথিবীর দেশে দেশে ঘুরে বেড়ান। প্রায় দশ বছর হারিয়ে থাকেন উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকাসহ নানা দেশে। দশ বছর পর লিখলেন 'মানুষের ধর্ম মনুষ্যত্ব'; উপন্যাস 'শামা'; ভ্রমণকাহিনী 'দেশ দেশান্তরে' ও অনেকগুলো কবিতা। মানবতাবাদী এই লেখক মানবসেবার উদ্দেশ্যে এখন ডায়াবেটিক সমিতির সাথে যুক্ত হয়ে চিকিৎসাকাতর মানুষের সেবায় রত।