পাবলিশার’স নোট গোলাম মোস্তফা’র (১৮৯৭ - ১৯৬৪) নাম কবি হিসাবেই কিছুটা জানি আমরা - কবি গোলাম মোস্তফা। কিন্তু বাংলা-ভাষায় উনার মেজর সাহিত্যিক কন্ট্রিবিউশন হইতেছে দুই পার্টে লেখা “বিশ্বনবী” বইটা। সিরাতের বই হিসাবে বাংলা-ভাষায় এর ইউনিক ইন্টেলেকচুয়াল ভ্যালু আছে, যেইখানে মর্ডানিটির বেইজ থিকা মুহাম্মদ (স.) এর জীবনরে উনি দেখার কোশিশ করছেন। উনি মারা যাওয়ার বছর দুয়েক আগে ১৯৬২ সালে উনার লেখা এসে’গুলা বাছাই কইরা “আমার চিন্তাধারা” নামে একটা বই ছাপাইছিলেন। বইটারে উনার সিলেক্টেড রাইটিংসও বলা যাইতে পারে। বইয়ের লেখাগুলারে ‘পাকিস্তানের আগে’ ও ‘পাকিস্তানের পরে’ নামে দুইভাগে ভাগ করছিলেন। অই বইয়ের ইন্ট্রো এবং ৭টা লেখা এইখানে আমরা ছাপাইতেছি। এইগুলাই উনার সবচে ‘ভালো-লেখা’ না, বরং এখনো রিলিভেন্ট লেখা বইলা আমরা মনে করতেছি। গোলাম মোস্তফা এমন একটা জেনারেশনের লোক, যারা পাকিস্তান আদায়ের আন্দোলন করছিলেন, এবং এইটা করতে গিয়া লিটারেচারে এমন কিছু জায়গারে এক্সপ্লোর করছিলেন যেই জায়গাগুলা বাংলা-ভাষারে কলকাতা-সেন্ট্রিক পজিশন থিকা কালচারালি ডিসপ্লেইসড কইরা তুলছিল। কিন্তু পলিটিকালি পাকিস্তানের সার্পোটার ছিলেন বইলা উনাদের এই কন্ট্রিবিউশনের জায়গাগুলারে এক ধরণের এন্টি-বাংলাদেশি ঘটনা হিসাবে পারসিভ করা হইতে থাকে বাংলাদেশ হওয়ার পরে; যেইটা খুবই সারপ্রাইজিং একটা জিনিস। কারণ কালচারালি বাংলাদেশ-ধারণার বীজ পলিটিকালি পাকিস্তান-আন্দোলনের ভিতর দিয়াই শুরু হইছে, আর এর ভিতর দিয়া বাংলা-ভাষার ‘ইসলামি-করণ’ হয় নাই, বরং পুব-বাংলার আলাদা একটা আইডেন্টিটির দিকেও চোখ ফেরানো হইছে; কিন্তু পরবর্তীতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের মধ্যে না থাকার ভিতর দিয়া সেইটা বাতিল হয় নাই, অই কালচারাল আইডেন্টিটি আরো প্রমিনেন্ট হয়া উঠছে। তো, যারা এই নতুন কালচারাল পজিশন তৈরি করার জন্য ফাইট করলেন, তারা কিভাবে বাংলা-ভাষার বা সাহিত্যের শত্রু হয়া উঠলেন! মানে, পাকিস্তান সার্পোট করাটা যে বাংলাদেশের দিকে এক কদম আগায়া দেয়া - এই জিনিসটারে এখনো আমরা ইন্টেলেকচুয়ালি মাইনা নিতে রাজি নাই, যার ফলে গোলাম মোস্তফার লেখা মোস্টলি ইগনোরড অবস্থায় আছে। কিন্তু অই সময়ের কনটেক্সটে গোলাম মোস্তফার একটা চেষ্টা ছিল নিজের মত কইরা চিন্তা করার। এবং তার কিছু ছাপ তার এই কয়েকটা লেখাতে পাওয়া যাবে বইলা আমরা আশা করি। ডিয়ার রিডার, আপনারা নিজেরাই পইড়া দেখেন! অক্টোবর, ২০২৩
গোলাম মোস্তফার জন্ম ১৮৯৭ সালে যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার শৈলকূপা থানার অন্তর্গত মনোহরপুর গ্রামে। পিতা কাজী গোলাম রব্বানী, পিতামহ কাজী গোলাম সরওয়ার। তাঁরা ছিলেন সাহিত্যানুরাগী-ফারসী ও আরবী ভাষায় সুপন্ডিত। তাঁর তিন পুত্রের মাঝে একজন হলেন বিখ্যাত পাপেটনির্মাতা ও চিত্রশিল্পী মুস্তফা মনোয়ার এবং সাম্প্রতিককালের অস্কারজয়ী বাংলাদেশী নাফিস বিন জাফর তাঁর নাতি।
শিক্ষা জীবন গোলাম মোস্তফার শিক্ষা জীবনের সূচনা হয় চার বছর বয়সে নিজগৃহে ও পার্শ্ববর্তী দামুকদিয়া গ্রামের পাঠশালায়। কিছুদিন পরে তিনি ফাজিলপুর গ্রামের পাঠশালাতে ভর্তি হন। দু’বছর এই পাঠশালায় বিদ্যা অর্জনের পরে তিনি ভর্তি হলেন শৈলকূপা উচ্চ ইংরেজী স্কুলে। ১৯১৪ সালে এই স্কুল থেকে বিশেষ কৃতিত্বের সাথে তিনি প্রবেশিকা বা ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯১৬ সালে তিনি দৌলতপুর বি. এল কলেজ থেকে আই. এ এবং ১৯১৮ সালে কলকাতা রিপন কলেজ থেকে বি. এ পাশ করেন। পরে ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজ থেকে বি. টি ডিগ্রীও লাভ করেন।
পেশাগত জীবন ১৯২০ সালে জানুয়ারী মাসে ব্যারাকপুর সরকারি হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসেবে গোলাম মোস্তফার শিক্ষকতা জীবনের সূচনা হয়। ১৯২৪ সালে ব্যারাকপুর হাই স্কুল থেকে তিনি কলকাতা হেয়ার স্কুলে বদলী হন। দীর্ঘদিন এখানে শিক্ষকতা করার পর তিনি কলকাতা মাদ্রাসায় বদলী হন। সেখান থেকে ১৯৩৫ সালে বালিগঞ্জ সরকারি ডিমনেষ্ট্রেশন হাই স্কুলে বদলী হয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদে উন্নীত হন এবং কয়েক বছর পর উক্ত বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদমর্যাদা লাভ করেন। এই বিদ্যালয়ের তিনিই প্রথম মুসলিম প্রধান শিক্ষক। ১৯৪০ সালে তিনি বাঁকুড়া জিলা স্কুলে বদলী হন। শিক্ষকতা জীবনে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করার পর ১৯৪৬ সালে তিনি ফরিদপুর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ত্রিশ বছর শিক্ষকতা করার পর ১৯৫০ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। বাংলা সাহিত্যের সাধক কবি গোলাম মোস্তফা তাঁর শেষ জীবনের কয়েক বছর ঢাকা শান্তিনগরস্থ নিজ গৃহে (মোস্তফা মঞ্জিল) অতিবাহিত করেন। বেশ কিছু দিন রোগ যন্ত্রণা ভোগ করার পর কবি ১৯৬৪ সালের ১৩ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।