আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে বিশ্বনবী যে জীবন-দর্শন বিশ্ববাসীর নিকট উপস্থাপন করেছেন, আজও তা সগৌরবে টিকে আছে। বর্তমানে সমাজ অনেক জটিল হয়েছে, একথা সত্য। লোকসংখ্যা ও জ্ঞান- বিজ্ঞানের প্রসারের ফলে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে দেখা দিয়েছে পূর্বেকার অজানা বহু সমস্যা। মানুষের আর্থ-সামাজিক জীবন আজ আর আগের মতো সরল নেই। এখন তা অনেক দুরূহ ও কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশ্বনবী -এর শিক্ষা ও জীবনাদর্শ এই অনাকাংখিত পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সক্ষম। অন্যভাবে বলা যায়, বিশ্বনবী-এর শিক্ষা ও জীবনাদর্শই আধুনিক জীবনের বিচিত্র সমস্যা- সংকুল পথে একমাত্র আলোকবর্তিকার কাজ করতে পারে। জীবনের সমস্যা বুঝতে হলে, মানুষ ও সমাজকে জানতে হলে, সর্বোপরি পরকালের মুক্তির পথ সুগম করতে হলে আমাদেরকে বিশ্বনবীর অমূল্য জীবনচরিতকে চলার পথে আলোকবর্তিকা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। বর্তমান বিশৃঙ্খলময় বিশ্বে এছাড়া ইহ ও পারলৌকিক মুক্তির বিকল্প কোনো রাস্তা নেই। এই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপুরীর “আর রাহীকুল মাখতুম" গ্রন্থখানাকে অনুকরণ করে পাঠক-পাঠিকার সুবিধার্থে দুর্বোধ্যতা পরিহার করে সহজ ও সরলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বিশ্বনবী মুহাম্মদ-এর পূর্ণাঙ্গ জীবনী তৎসহ তাত্ত্বিক আলোচনা পাঠক সমাজের খেদমতে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস পাঠ করে মুসলিম সমাজ উপকৃত হলে আমাদের শ্রম সার্থক হবে বলে আশা রাখি।
আল্লামা সফিউর রহমান মুবারকপুরি (১৯৪৩-২০০৬) পুরো নাম সফিউর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ আকবর ইবনে মুহাম্মাদ আলি ইবনে আব্দুল মুমিন মুবারকপুরি আযমি। তিনি একজন স্বনামধন্য ইসলামিক লেখক এবং ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত মুহাদ্দিস। তার লেখা রাসূল সা.-এর জীবনীগ্রন্থ আর-রাহিকুল মাখতুম সারা বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বহু ভাষায় অনুদিত একটি বই আধুনিক সিরাতগ্রন্থ। তিনি ১৯৪২ সালের ৪ জুন ভারতের আযমগড় জেলার হোসাইনাবাদের মোবারকপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তিনি স্থানীয় শিক্ষকদের কাছে লেখাপড়া করেন এবং আরবী ভাষা, ব্যকরণ, সাহিত্য, ফিকাহ, উসূলে ফিকাহ, তাফসির, হাদিস ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। ১৯৬১ সালে তিনি শরীয়াহ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন একই সাথে মাদরাসায় শিক্ষকতা এবং লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে মুবারকপুরের দারুত তালিম মাদরাসায় এবং ১৯৭৪ সালে বেনারসের জামিয়া সালাফিয়ায় শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৮ সাল হতে তিনি মদিনাস্থ আন্তজার্তিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাসূল সা. বিষয়ক গবেষণা ইন্সটিটিউটে কর্মরত থাকেন। সর্বশেষ রিয়াদের মাকতাবায়ে দারুস সালামে গবেষণার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া বেনারসের মাসিক মুহাদ্দিস পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেছেন। আরবী ও উর্দু ভাষায় তাঁর রচিত গ্রন্থসংখ্যা ত্রিশোর্ধ্ব। ২০০৬ সালের ১ ডিসেম্বর জুমাবার বেলা দু’টায় এই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে এই মহান মনীষী মাওলার সান্নিধ্যে চলে যান।