ভূমিকা: প্রশংসা মাত্রই আল্লাহ তা'য়ালার জন্য, যিনি মানব জাতির মুক্তির দিশারী হিসেবে নাজিল করেছেন আল-কুরআন। দরূদ ও সালাম আমাদের প্রিয় হাবীব মুহাম্মদ (M)-এর প্রতি, যাঁর চরিত্র ছিল আল-কুরআন। তিনি (A) বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি হলো: যে নিজে কুরআন শিখে এবং তা অন্যদেরকে শিক্ষা দেয়।” শাস্তির ধারা আরো বর্ধিত হোক তাঁর পরিবার, সাহাবীগণ ও কিয়ামত পর্যন্ত তাঁদের সকল উত্তম অনুসারীদের ওপর। ১৪২৭ হিজরী সালের পবিত্র রমজান মাস। হঠাৎ করেই মনে জাগল কুরআন নাজিলের মাস রমজান-এ মাসে কুরআনের কিছু খিদমত করতে পারলে জীবনটা ধন্য হতো। তাই সাধারণ মুসলিম ভাই-বোন ও ছোটদের কুরআন পড়ার জন্য আধুনিক বাংলা ও আরবি নিয়মে একটি বই লেখার দৃঢ় সংকল্প করি। বিলম্ব না করে সে-দিনই এ মহৎ কাজ আম করি। যার ফলশ্রুতিতে আজকের এই বইটির প্রকাশ । মহাগ্রন্থ আল-কুরআন আমাদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পবিত্র বড় আমানত। কিছু মুফাসসিরগণের মতে, আকাশ, পৃথিবী ও পর্বতমালা এ পবিত্ৰ মহা আমানত বহন করতে অপারগতা স্বীকার করে। (সূরা আহজাব ৩৩:৭২) বাবা আদম (8) জান্নাতে থাকা অবস্থায় এ মহান আমানতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। আল্লাহ তায়ালা আদম (.)-এর সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান সর্বশেষ নবী ও রসূল মুহাম্মদ (B)-এর প্রতি সর্বশেষ কিতাব রমজানের লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ করেন। দীর্ঘ ২৩ বছরে পূর্ণ কুরআনের নাজিল সম্পন্ন হয়। কিয়ামত পর্যন্ত কুরআন অপরিবর্তিত ও অবিকৃত থাকবে। কারণ, আল্লাহ তায়ালা তাঁর কিতাবের হেফাজতের দায়িত্ব নিজেই গ্রহণ করেছেন। (সূরা হিজর ১৫:৯) আল-কুরআন কিয়ামতের দিন তার সাথীদের জন্য আল্লাহর নিকটে সুপারিশ করবে। আর যারা এ কিতাবকে ত্যাগ করবে, তথা পাঠ করবে না, আমল করবে না, এ দ্বারা বিচার ফয়সালা করবে না, শারীরিক ও মানসিক রোগের চিকিৎসা করবে না এবং পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করবে না তারা কিয়ামতের মাঠে কুরআন ত্যাগকারী বলে বিবেচিত হবে। এ সময় তাদের বাঁচার উপায় কী হবে? ! এই পবিত্র আমানত রক্ষার জন্য আমাদের প্রত্যেকের প্রতি চারটি কাজ জরুরি। ১. কুরআন মাজীদের বিশুদ্ধ তেলাওয়াত শিখে নিয়মিত প্রতিদিন পাঠ করা । ২. কুরআন কারীমের যে অর্থ ও তাফসীর রসূলুল্লাহ (B) তাঁর সাহাবাগণকে শিক্ষা দিয়েছেন এবং তাঁদের পরে তাবেয়ী ও ইমামগণও তাই শিখেছেন, সকলকে সেই সঠিক অর্থ ও তাফসীর জানা । ৩. সঠিক অর্থ ও তাফসীর জেনে প্রতিটি বিষয়ে যথাযথ আমল করা। ৪. কুরআনের দাওয়াত ও তাবলীগ করা। অর্থাৎ যারা কুরআন পড়তে পারে না, অর্থ জানে না এবং সঠিক আমলও করে না তাদেরকে এসব শেখানো। বিশুদ্ধভাবে কুরআন তেলাওয়াত শেখার জন্য প্রতিটি ভাষায় কিছু পুস্তক প্রণয়ন করা হয়েছে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ বিশ্বের ৩য় বৃহত্তম জনসংখ্যার মুসলিম দেশ। পৃথিবীতে প্রায় ৩০ (ত্রিশ) কোটি বাংলাভাষী মানুষ রয়েছে, যাদের অধিকাংশ মুসলিম। বাংলাভাষী মুসলিম ভাইদের কুমআন শিক্ষার প্রতি চরম আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু স্বাধীনতার প্রায় ৫১ বছর পরেও আমাদেরকে যাঁরা কুরআনের তা'লীম (শিক্ষা) দেন তাঁদের সিংহভাগ আজও উর্দু ও ফার্সী নিয়ম ছাড়তে পারেননি। উর্দু ও ফার্সী নিয়মে আধুনিক নাম দিয়ে বাজারে বিভিন্ন ধরনের বহু বই-পুস্তক পাওয়া যায়। আরো বড় দুঃখ লাগে আরবি কুরআন শিক্ষার জন্য আরবি ও বাংলা ভাষার মাঝে শিক্ষার্থীদের মাথার উপর উর্দু-ফার্সীর বোঝা চাপানো দেখে। এছাড়া আরো আশ্চর্যের কথা হলো: যখন এক শ্রেণীর মানুষ উর্দু-ফার্সী নিয়মকেই আরবি বলে চালিয়ে দেন। আর উর্দু-ফার্সীর ঝামেলা নয়, বরং সরাসরি আরবি-বাংলা ও আরবি-বাংলা নিয়মের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে আমাদের এ ছোট্ট প্রয়াস । মনে রাখতে হবে যে, প্রতিটি ভাষায় যেমন আছে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ, অনুরূপ আরবি ভাষাতেও আছে কিছু স্বরচিহ্ন (স্বরবর্ণ, স্বরধ্বনি) ও ব্যঞ্জনবর্ণ। আরবি ভাষায় মোট ব্যঞ্জনবর্ণ ২৮টি। আর স্বরবর্ণ দুই প্রকার। (এক) জন্ম স্বরবর্ণ তিনটি যথা: ফাত্হাহ্ (2) আ-কার, কারাহ্ (-) ই-কার, যাহ্ (2) উ-কার। (দুই) দীর্ঘ স্বরবর্ণ তিনটি যথা: ফাত্হাহ্ ত্ববীলাহ্ (-) দীর্ঘ আ-কার [এর ব্যবহার বাংলা ভাষাতে নেই], কান্নাহ্ ত্ববীলাহ্ (৮) ঈ-কার ও ধম্মাহ্ ত্ববীলাহ্ (,) উ-কার। এছাড়া তিনটি স্বরধ্বনি রয়েছে যথা: সুকূন () হস্ চিহ্ন, শাদ্দাহ্ দ্বিত্ব চিহ্ন (-) ও তানবীন (j) তথা নূন সাকিন যার প্রকাশ হবে এভাবে: ( 22 ) । কুরআন শেখার জন্য মাত্র চারটি কাজ ডিজিটাল পদ্ধতিতে কুরআন শিখি || ৯ ১. আরবি ভাষার ২৮টি ব্যঞ্জনবর্ণের সঠিক নাম, সঠিক উচ্চারণ ও একটি অক্ষর থেকে অপর অক্ষরের মাঝের সঠিক পার্থক্য জানা । ২. ব্যঞ্জনবর্ণকে পড়ার জন্য তিনটি হ্রস্ব ও তিনটি দীর্ঘ স্বরবর্ণ জানা । ৩. স্বরবর্ণের সহযোগী আরো তিনটি স্বরধ্বনি তথা হস্ (হসন্ত) চিহ্ন ও দ্বিত্ব চিহ্ন এবং তানবীনকে জানা । ৪. ৬টি স্বরবর্ণ ও ৩টি স্বরধ্বনি দ্বারা ২৮টি বঞ্জনবর্ণকে পড়ার জন্য বেশি বেশি অনুশীলন করা। উপরের চারটি কাজ যে ব্যক্তি করবেন তিনি আল্লাহ তায়ালার কিতাব আল-কুরআনের তেলাওয়াত অতি সহজে ও অল্প সময়ে নিশ্চয়ই শিখবেন। এছাড়া স্বরবর্ণ ও স্বরধ্বনিযুক্ত আরবি দু'আ ও হাদীসও পাঠ করতে পারবেন বলে আমরা ১০০ percent নিশ্চিত। এর সাথে অন্যদেরকে কুরআন শিখাতে পারবেন । বইটির কিছু বৈশিষ্ট্য: ১. কুরআন পাঠের জন্য বাংলা ভাষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি বই। ২. কুরআন শিক্ষার ব্যাকরণসম্মত একটি বই। ৩. সরাসরি আরবি আরবী বা আরবী-বাংলার ব্যবহার। ৪. বাংলা ও আরবি বানান করার পদ্ধতি । ৫. উর্দু ও ফার্সীর ঝামেলামুক্ত একটি পুস্তক। ৬. প্রতিটি পাঠে কুরআন ও আরবি ভাষার শব্দ দ্বারা উদাহরণ। ৭. প্রতিটি পাঠে অনুশীলন ও সহজে বুঝার জন্য ভিন্ন রঙের ব্যবহার। ৮. ভিডিও এর সাহায্যে শিক্ষক ছাড়া ঘরে বসে কুরআন শেখার সুব্যবস্থা। ৯. সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ ইবনে আব্দুল আজিজ (2)-এর কুরআন প্রিন্টিং প্রেসে আরবি নিয়মে ছাপা কুরআন পড়ার সমস্যা দূরীকরণ। নিজের ও বহু সংখ্যক বাংলাভাষী ভাই-বোনের দীর্ঘ দিনের লুক্কায়িত প্রত্যাশা বাংলা পদ্ধতি বা আরবি কুরআন পড়ার আরবি সঠিক নিয়ম জানার। তাই সে আশা পূরণের জন্য বয়ক যাঁরা একেবারে প্রথম থেকে কুরআন শিখতে ইচ্ছুক এবং সোনামণিদের হাতে এই ছোট মূল্যবান উপহার তুলে দিচ্ছি। বইটি দেশের স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারগুলোতে সিলেবাসভুক্ত করার জন্য পরামর্শ রইল। বইটি সর্বশ্রেণীর মানুষের জন্য প্রযোজ্য। তবে নিজের প্রিয় মাতৃভাষা বাংলায় কিছুটা দখল থাকলে অতি দ্রুত ও সহজে বিশুদ্ধভাবে কুরআন পাঠ করা সম্ভব। যদি এই বইটি এবং এর ভিডিও সংগ্রহ করতে পারেন, তবে ইন শা আল্লাহ ১০০ percent নিশ্চিত যে, আপনি পৃথিবীর যেখানেই থাকুন না কেন শিক্ষক মহোদয় আপনার সাথেই আছেন । শিক্ষক ছাড়া কুরআন শিক্ষার সহজ পদ্ধতি বইটির এ অংশ “ডিজিটাল পদ্ধতিতে কুরআন শিখি” নামে তৃতীয়বার প্রকাশ করতে পারায় আমরা আল্লাহ তায়ালার অশেষ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। সম্মানিত পাঠক মহোদয় বইটি থেকে উপকৃত হলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে। যাঁরাই এ মহৎ কাজে সহযোগিতা করেছেন এবং যে-সব লেখকের বই-পুস্তক দ্বারা সাহায্য গ্রহণ করেছি তাদের সকলকে আমাদের সকৃতজ্ঞ ধন্যবাদ জানাই। এছাড়া দু'আ করি, আল্লাহ তা'য়ালা তাঁদের সকলকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। পরিশেষে আমাদের নিবেদন এই যে, সংশোধনের কাজ কোনো দিনও চূড়ান্ত হবার নয়। অতএব, বইটি পড়ার সময় কোনো ভুল-ত্রুটি বা ভ্রম কারো দৃষ্টিতে পড়লে অথবা কোনো নতুন ও ভাল প্রস্তাব থাকলে তা আমাদেরকে অবহিত করলে সাদরে গৃহীত হবে এবং তাদের নিকট কৃতজ্ঞ থাকব। আর পরবর্তী সংস্করণে তা যথাযথভাবে বিবেচনা করা হবে ইন শা আল্লাহ। হে আল্লাহ! আমাদের এই মহতী উদ্যোগ ও ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে কবুল করুন। আমীন! আবু আহমাদ সাইফুদ্দিন বেলাল চেয়ারম্যান, মাকারেম আল-আখলাক ফাউন্ডেশন, উত্তরা, ঢাকা।