শয়তানের শয়তানি ও তার প্রতিজ্ঞা শয়তানের প্রথম শয়তানি ছিল আল্লাহ তা'আলার সাথে আদম আলাইহিস সালামকে সেজদা করার ব্যাপারে তর্ক-বিতর্ক করা। দ্বিতীয় বিষয় ছিল আল্লাহর সাথে চ্যালেঞ্জ করা যে, অবশ্যই আমি তোমার বান্দাদেরকে প্রতাড়িত করব। শয়তানের আল্লাহর সাথে তর্ক করার ঘটনাটি নিম্নরুপ। আল্লাহ তা'আলা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে নিজ হাতে সৃষ্টি করলেন, যাতে ইবলীস তার ব্যাপারে অহংকার করতে না পারে। তারপর এ মাটির তৈরি দেহটি চল্লিশ বছর পর্যন্ত যা জুমার দিনের অংশ বিশেষ ছিল। (উর্ধ্ব জগতের একদিন পৃথিবীর হাজার বছরের, বর্ণনান্তরে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। বলে কুরআনের বর্ণনায় পাওয়া যায়। দ্র: সূরা হজ্জ, আয়াত: ৪৭ ও সূরা মাআরিজ, আয়াত: ৪) একইভাবে পড়ে থাকে। তা দেখে ফেরেশতাগণ ঘাবড়ে যান। সবচেয়ে বেশি ভয় পায় ইবলীস। সে তাঁর পাশ দিয়ে আনাগোনা করত এবং তাঁকে আঘাত করত। ফলে দেহটি ঠনঠনে পোড়া মাটির ন্যায় শব্দ করত। এ কারণেই মানব সৃষ্টির উপাদানকে "ছলছালিং কাল-ফাখখার" তথা পোড়ামাটির ন্যায় ঠনঠনে মাটি বলে অভিহিত করা হয়েছে। আর ইবলীস তাঁকে বলত, তুমি একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি হয়েছ। এক পর্যায়ে ইবলীস তাঁর মুখ দিয়ে প্রবেশ করে পেছন দিয়ে বের হয়ে এসে ফেরেশতাদের বলল, 'একে তোমাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, তোমাদের রব হলেন সামাদ তথা অমুখাপেক্ষি আর এটি একটি শূন্যগর্ভ বস্তুমাত্র। কাছে পেলে একে আমি ধ্বংস করেই ছাড়ব।' এরপর তাঁর মধ্যে রূহ সঞ্চার করার সময় হয়ে এলে আল্লাহ তা'আলা ফেরেশতাগণকে বললেন, 'আমি যখন এর মধ্যে রূহ সঞ্চার করব; তখন তোমরা তাঁর প্রতি সেজদাবনত হয়ো।' যথাসময়ে আল্লাহ তা'আলা তাঁর মধ্যে রূহ সঞ্চার করলেন, যখন রূহ তাঁর মাথায় প্রবেশ করে তখন তিনি হাঁচি দেন। ফেরেশতাগণ বললেন, আপনি বলুন, 'আল-হামদুলিল্লাহ।' তিনি 'আল-হামদুলিল্লাহ' বললেন।
আল্লামা ইবনু কাইয়্যিমিল জাওযীয়া (রহঃ) ছিলেন ইসলামী চিন্তাবিদ, ফকিহ, তাফসীরবিদ, হাদীসজ্ঞ এবং চিকিৎসাশাস্ত্রের পণ্ডিত। তাঁর পূর্ণ নাম ছিল আবু আব্দুল্লাহ্ শামসুদ্দ্বীন মুহাম্মাদ বিন আবু বকর বিন আইয়্যুব আদ দিমাশকী। তিনি ৬৯১ হিজরী সালে দামেস্কে জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁর পিতা দীর্ঘ দিন দামেস্কের আল জাওযীয়া মাদ্রাসার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন বলেই তাঁর পিতা আবু বকরকে قيم الجوزية কাইয়্যিমুল জাওযীয়াহ অর্থাৎ মাদরাসাতুল জাওযীয়ার তত্ত্বাবধায়ক বলা হয়। পরবর্তীতে তাঁর বংশের লোকেরা এই উপাধীতেই প্রসিদ্ধি লাভ করে। ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমীয়া (রহঃ)-এর স্নেহধন্য শিষ্য ছিলেন এবং শাইখের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি তাঁর সাথেই ছিলেন। এমনকি জিহাদের ময়দান থেকে শুরু করে জেলখানাতেও তিনি তাঁর থেকে আলাদা হননি। তিনি ইসলামী আকীদাহ, তাওহীদ, সুন্নাহ ও বিদআত-বিরোধী বিভিন্ন বিষয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। তার মধ্যে তাওহীদ ও সুন্নাহের প্রতি অগাধ ভালোবাসা, বিদআতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং ইবাদত-বন্দেগীতে নিষ্ঠা ছিল অন্যতম। ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) কিছু উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:
"যাদুল মা‘আদ ফী হাদ্য়ী খাইরিল ইবাদ"
"মাদারিজুস সালিকীন"
"শিফাউল আলীল"
"তিবেব নববী" (চিকিৎসাশাস্ত্রে তাঁর অনন্য অবদান)
তাঁর উস্তাদ বৃন্দ -
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) যে সমস্ত আলেম-উলামার কাছ থেকে তালীম ও তারবীয়াত হাসিল করেন, তাদের মধ্যে রয়েছেনঃ
শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমীয়াহ (রহঃ)।
আহমাদ বিন আব্দুদ্ দায়িম আল-মাকদেসী (রহঃ)।
তাঁর পিতা কাইয়্যিমুল জাওযীয়াহ (রহঃ)।
আহমাদ বিন আব্দুর রহমান আন্ নাবলেসী (রহঃ)।
তাঁর ছাত্রসমূহ -
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) এর হাতে যে সমস্ত মনীষী জ্ঞান আহরণে ধন্য হয়েছিলেন, তাদের তালিকা অতি বিশাল। তাদের মধ্যে রয়েছেনঃ
বুরহান উদ্দ্বীন ইবরাহীম বিন ইবনুল কাইয়্যিম।
ইমাম ইবনে রজব (রহঃ)।
হাফিয ইমাম ইবনে কাছীর (রহঃ)।
তিনি একজন নিরলস সাধক, যিনি দীর্ঘ সময় ইবাদত করতেন, বিশেষ করে তাহাজ্জুদ ও কুরআন তিলাওয়াতে মগ্ন থাকতেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ইলমী ও আধ্যাত্মিক খেদমত মুসলিম উম্মাহর জন্য অমূল্য দান হয়ে রয়েছে। ইবনুল কাইয়্যিম ৭৫১ হিজরী সনে মারা যান এবং দামেস্কের বাবে সাগীর গোরস্থানে তাঁর পিতার পাশে দাফন করা হয়।