১৯৯৭ সালের প্রথম দিকে আমাকে একটা কাজে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে যেতে হয়েছিল। সেখানে সান ফ্রানসিস্কো শহরের উপকণ্ঠে অনীক চৌধুরী নামে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। অনীক চৌধুরী ঠিক কী কাজ করতেন সেটা আমি আমার দু বছর ক্যালিফোর্নিয়া বাসকালে বুঝে উঠতে পারিনি, কিন্তু তার মধ্যে এমন এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করতো যা তাকে কোন স্থায়ী পেশায় নিশ্চল করে রাখতে পারতো বলে আমার মনে হয়নি। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুব ভক্ত ছিল অনীক, নিজেকে আরণ্যক বলে দাবি করতো, আর সেটা প্রমাণ করার জন্যেই হয়তো মাঝে মাঝে সে এক-দুই সপ্তাহের জন্যে উধাও হয়ে যেত, ফিরে এসে গল্প করতো পাহাড়ে অরণ্যে অ্যাডভেঞ্চারের । আমার পাহাড়ে চড়ার সামান্য নেশা ছিল, তাই মাঝে মাঝে হাইকিং, ব্যাকপ্যাকিং ইত্যাদি অভিযানের মাধ্যমে আমার সেই সংক্ষিপ্ত মার্কিন বসতকালে তার সঙ্গে ধীরে ধীরে একটা সখ্য গড়ে ওঠে। আমি ঢাকায় ফিরে আসার আগে সে একদিন বাদামি চামড়ায় মোড়ানো একটা ডায়েরি নিয়ে আসে, বলে সেটা একটা বইয়ের পাণ্ডুলিপি যেটা সে ছাপাতে চায়। অনীক জানায় এটার একটা ইংরেজি অনুবাদ দরকার, কিন্তু তার হাতে আর সময় নেই, আপাতত বাংলায় যদি সেটা ছাপিয়ে দিতে পারি তবে সে কৃতজ্ঞ থাকবে। মার্কিন দেশে অনীকের সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি, পরবর্তীকালে আরও দু-একবার আমি যখন ক্যালিফোর্নিয়া গিয়েছি তখনও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি, সেখানকার পরিচিত কেউই তার হদিস দিতে পারেনি। অনীক তার ডায়েরিতে নিজেকে আরণ্যক বলে অভিহিত করেছে, সংক্ষেপে লিখেছে আ.। এতদিন পরে তার লেখা যখন আমার পক্ষে প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে তখন আমি বলবো সেই লেখার সত্যতা যাচাই করবার ভার আমার নয় । আমি কেবল এটুকু বলবো আরণ্যকের বা অনীকের কাহিনী আমাকে বিস্মিত করেছে, মহাবিশ্বের উদাসীনতার মাঝে জীবনের সংবেদনশীল সচেতনতা যেমন আমাকে বিস্মিত করে । সম্ভাব্যতার বিচারে মহাবিশ্বের মাঝে আমাদের অস্তিত্ব যেমন এক বিরল কিন্তু সম্ভাব্য ঘটনা, আরণ্যকের কাহিনীও সেইরকম এক সম্ভবপর ঘটনা । আমি বলি শেষাবধি সবই সম্ভাব্য, মহা-মহাবিশ্বের অসীমতার মাঝে অসম্ভব বলে কি কিছু থাকতে পারে? এর পরে যা পড়বেন তা সবই অনীক, আরণ্যক বা আর লেখা। একেবারে শেষে আমি একটা ছোট পরিশিষ্ট যোগ করেছি মাত্র।
জন্ম ১৯৫৯ সালে। আদি নিবাস এলেঙ্গা, টাঙ্গাইল। ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুল, নটর ডেম কলেজ ও ঢাকা কলেজে পড়াশোনা করেছেন। রাশিয়ার মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পদার্থবিদ্যায় মাস্টার্স এবং ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যায় পিএইচডি করেন। নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট ইনস্টিটিউটে গবেষক ছিলেন। পরে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার রিভারসাইড ক্যাম্পাসে গামা রশ্মি জ্যোতির্বিদ হিসেবে যোগ দেন। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বায়ুমণ্ডলের ওপরে বেলুনবাহিত গামা-দুরবিন ব্যবহার করে মহাকাশ গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ার মোরেনো ভ্যালি কলেজের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক। ২০০৬-২০০৭ সালে ফুলব্রাইট ফেলো হয়ে ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও পরিবেশসচেতনতার প্রসারে যুক্ত। তাঁর চারটি গল্পগ্রন্থ ও পাঁচটি বিজ্ঞানকল্প উপন্যাস অভিজিৎ নক্ষত্রের আলো, দিতার ঘড়ি, নক্ষত্রের ঝড় এবং অদিতার আঁধার, নিওলিথ স্বপ্ন। বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের ওপরও তাঁর একটি বই প্রকাশিত হয়েছে।