জ্ঞানের অমিয় সুধা? উপকারহীন চর্চা থেকে বাঁচবই বা কীভাবে? যেমনটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, اللهم إلي المعوذ بك من علم لا ينفع 'হে আল্লাহা উপকারহীন ইলম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।" এ প্রশ্নগুলো শিষ্যকে দুমড়েমুচড়ে খাচ্ছিল। একদিন সে তার শায়খ গাজালি রহ.-এর কাছে এ প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রত্যাশা করল। চিঠির মাধ্যমে শায়খের কাছে আরজি পেশ করল। কামনা করল শায়খের মুখনিসৃত অমূল্য নসিহাহ ও নেক দোয়া। শিষ্য বলল, যদিও এসব প্রশ্নের অনেক উত্তর শায়খের বিখ্যাত 'ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন'সহ অন্যান্য গ্রন্থে রয়েছে, কিন্তু আমি চাচ্ছি শায়খ যেন আমাকে আমার অবস্থা সামনে রেখে কিছু প্রেসক্রিপশন লিখে দেন। যা আমি সারাজীবন আমার সাথে যত্ন করে রেখে দিব। যতটুকু সম্ভব জীবনের পরতে-পরতে আমল করতে সচেষ্ট হব। ইনশাআল্লাহ। এরপর শায়খ তার এ প্রিয় শিষ্যের আরজির জবাবে তাকে কিছু উপদেশমালা লিখে দিলেন- প্রিয় বৎস, তুমি আমার কাছে কিছু উপদেশ শুনতে চাচ্ছ! জানতে চাচ্ছ নসিহাহ! আল্লাহ তোমার কল্যাণ করুন। তুমি দীর্ঘজীবী হও। ভালোবাসার এ দীর্ঘ পথের যাত্রায় তোমাকে স্বাগত। কীভাবে আমি * সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৭২২, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৫৪৮, হাদিসের পুরো টেক্সটি হচ্ছে, اللهم إني أعوذ بك من العجز والكسل، والجني، والبخل، والهَرَمِ، وَعَذَابِ الْقَبْرِ اللهم آتِ نَفْسِي لقواها، وزكها أنت خير من زكاها، أنت وليها ومولاها، اللهمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لَا يَنْفَعُ، وَمِنْ قلب لا يخشع ومن نفيس لَا تَشْبَعُ، وَمِنْ دَعْوَةٍ لَا يُسْتَجَابُ لَهَا জীবন গড়ার পাথেয়
বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ., সংক্ষেপে ইমাম গাজ্জালী ছিলেন একজন সুফিসাধক ও মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শিক্ষাবিদ, যিনি তাঁর দর্শন ও চিন্তাধারা বিশ্ব মুসলিমদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে ইসলামের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। তাঁর পারিবারিক ব্যবসা সুতা সংক্রান্ত হওয়ায়, সেখান থেকে তার নাম গাজ্জালী হয়েছে বলে ধারণা করা হয়, যেহেতু 'গাজ্জাল' শব্দের অর্থ সুতা। ১০৫৮ খ্রিস্টাব্দে (হিজরি ৪৫০ সাল) ইমাম গাজ্জালী ইরানের খোরাসান প্রদেশের অন্তর্গত তুস নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং এই তুস নগরীতেই তার শৈশবকাল ও শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয়। তিনি ইসলামের স্বর্ণযুগে জন্ম নেন, যে যুগে শিক্ষা, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে মুসলমানরা অনেক এগিয়ে গিয়েছিলো। একইসাথে বিস্তার লাভ করেছিলো পাশ্চাত্য ও গ্রিক দর্শনেরও। ইমাম গাজ্জালী এসকল বিষয়েই দীক্ষা লাভ করেন এবং বিশেষ করে ঐ যুগের বিখ্যাত ধর্মতত্ত্ববিদ আলেম ইমামুল হারামাইন আল জুয়াইনির কাছ থেকে ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। মুসলিম দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, ফিকহশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে তিনি ছিলেন অত্যন্ত পারদর্শী । জ্ঞান-বিজ্ঞানের তীর্থস্থান বাগদাদের সেরা বিদ্যাপীঠ নিযামিয়া মাদ্রাসায় তিনি অধ্যাপনা করেন। তিনি তৎকালীন বাদশাহর দরবারেও আসন লাভ করেন। তবে সুফিবাদ ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের বিষয়ে তীব্র আকর্ষণ থাকায় তিনি জ্ঞান আহরণের জন্য দেশ-বিদেশ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন ও নানা বিষয় সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান অর্জন করেন। ইমাম গাজ্জালী রহ. বই রচনার মাধ্যমে তাঁর অর্জিত এসকল জ্ঞান মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ. এর বই সমূহ-তে তিনি আলোচনা করেছেন সুফিবাদ, ইসলামি দর্শন ও ধর্মতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে, এবং তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা চার শতাধিক। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহ. এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'আসমাউল হুসনা', 'মিশকাতুল আনোয়ার', 'ফাতাওয়া', 'মিআর আল ইলম', 'হাকিকাতুর রুহু', 'দাকায়েকুল আখবার' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ১১১১ খ্রিস্টাব্দে (৫০৫ হিজরি) তিনি নিজ জন্মভূমি তুস নগরীতে মৃত্যবরণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয় একজন মনীষী।