‘আখুন্দ’ কোন জাতি বা বর্ণ নয়। এ বংশপদবীটি গাত্রবর্ণ কিংবা ধর্মীয় বিভাজন মানদণ্ডনির্ভর কোন পরিচয়ও নয়। এটা একান্তই শিক্ষাকেন্দ্রিক শিক্ষাদান, শিক্ষাগুরু, পণ্ডিত, ধর্মপ্রচার, ধর্মবিষয়ে ব্যাখ্যাতা, ইমামতি বা ধর্মীয় নেতৃত্ব, তাসাউফ বা আধ্যাত্মিক চর্চা, গণমুক্তি সংগ্রামে অগ্রণী, সেবাধর্মীয় পরম্পরাগত পরিচয়। বাংলাদেশে এই পদবীর শব্দরূপটি ‘আখুন্দ’ ‘আখন্দ’ ‘আখন’ ‘আখুন’ ‘আখুঞ্জী’ ‘আখঞ্জী’ ‘আকন্দ’ ‘আকন’ ইত্যাদি নানারূপেও ব্যবহৃত হয়, যা একাধিক স্থানে আলোচিত হয়েছে। বাংলাদেশে পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝিতে পাঠান আখুন্দদের সর্বপ্রথম আগমনের তথ্য পাওয়া যায়। ঢাকার সন্নিকটস্থ বর্তমান মানিকগঞ্জ জেলার ধামরাইয়ে শের আখুন্দ-ই বাংলাদেশে আগত প্রথম আখুন্দ। হতে পারে সমগ্র ভারতবর্ষেও। তিনি ছিলেন গৌড় রাজধানীকেন্দ্রিক সুলতানী বাংলার শাসক ফতেহ শাহর ধামরাই অঞ্চলের স্থানীয় আমীরুল বহর বা নৌসেনাধ্যক্ষ। পরবর্তীকালে শাহী কার্যাবলির প্রয়োজনে মোগল রাজদরবারে এবং এর বাইরে ধর্ম ও শিক্ষা প্রচারের প্রয়োজনে উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে আখুন্দদের আগমন ঘটে। বিশেষত মোগল সালতানাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল সুবায়ে বাঙ্গালায় এঁদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছে এই ‘আখন্দ’ বংশপদবীর বিপুলসংখ্যক মানুষ। এই আখুন্দদের উদ্ভব ও বিকাশের শেকড় অনুসন্ধানে আমাদের এই নিবিড় জ্ঞান-পরিভ্রমণ। মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় আখুন্দ বা আখন্দদের আগমনকাল, আগমনের পটভূমি, বিকাশমান ধারা নিয়ে এখন পর্যন্ত ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে কোন ধরনের গবেষণা কেউ করেছেন বলে জানা যায় না। কোন গ্রন্থপ্রকাশ ত নয়ই। এ বিষয়ে বিস্তৃত গবেষণার সর্বপ্রথম পথিকৃৎ বর্তমান গ্রন্থটি।