নিজের সময় ফুরিয়ে আসছে টের পেয়ে বাবা তার মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিলেন, তাড়াহুড়া করে। চার ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট নাদিয়া আনন্দের সঙ্গে বড় হয়েছে। সবার আদরে, আহলাদে। কিন্তু শ্বশুরবাড়ি এসে টের পেল জীবন এতো সহজ নয়। শাশুড়িতো ধরেই নিলেন উনি পেয়েছেন বিনে পয়সার কাজের লোক। সবার কাপড়কাঁচা থেকে শুরু করে রান্না, শাশুড়ির সেবা সবই করতে হয় বাবা-ভাই-এর আদরের নাদিয়াকে। হাত খরচ হিসেবে বাবা তাকে প্রতিমাসে যে টাকাটা দেয় সেটাও শাশুড়ি ঝাপটা দিয়ে নিয়ে যায়। এমনভাবে, বাংলার আর দশটি মেয়ের মতোই নীরবে-নিভৃতে শেষ হতে পারতো নাদিয়ার জীবন। কিন্তু বাঁধ সাধে স্বামীর সংসারের একটি ছোট্ট যন্ত্র। একান্নবর্তী সংসারের জোয়াল টানতে টানতে হয়রান নাদিয়ার স্বামী এখন আর তার কম্পিউটারে বসতে পারে না। সেই কম্পিউটার নিয়ে ভাবে নাদিয়া । কেউ যেন টের না পায় সে ভাবে শুরু হলো তার আত্মপ্রচেষ্টা। গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ শিখে নাদিয়া শুরু করলো তার ফ্রিল্যান্সিং জীবন। দেখতে দেখতে পেয়ে গেল প্রথম বড় কাজও। লোগো ডিজাইনের কাজ করতে করতে তার হয়ে গেল সুনাম। প্রথম ১৫০ ডলার তুলে সেটি তুলে দিল শাশুড়ির হাতে। চমকে গেল সবাই এবং তারপর থেকে চমকাতেই থাকলো। "এরপর তাহারা সুখে শান্তিতে বাস করিতে লাগিল" - এমন লিখতে পারলে ভাল হতো। কিন্তু বিধিবাম। এমন কিছু হলো যে, নাদিয়ার সুখ স্থায়ী হল না। ডিজিটাল বাংলাদেশের এক মানবিক উপাখ্যান।
রাহিতুল ইসলাম (Rahitul Islam) একজন বাংলাদেশি তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিক, লেখক ও নাট্যকার। বর্তমানে দেশের একটি শীর্ষ দৈনিকে সাংবাদিকতা করছেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চাও করেন। তবে তাঁর আগ্রহের বিষয় মূলত তথ্যপ্রযুক্তি। সংবাদপত্রে লিখে আর কথাসাহিত্য রচনার মধ্য দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন পাঠকদের এই জগতের জানা-অজানা নানা বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত করাতে। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১২। উল্লেখযোগ্য উপন্যাস: ‘কল সেন্টারের অপরাজিতা’, ‘চরের মাস্টার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার’, ‘হ্যালো ডাক্তার আপা’, ‘ভালোবাসার হাট-বাজার’ এবং ‘কেমন আছে ফ্রিল্যান্সার নাদিয়া’। ‘আউটসোর্সিং ও ভালোবাসার গল্প’ বইটি ফিলিপাইন থেকে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘আউটসোর্সিং ও ভালোবাসার গল্প’ বইয়ের জন্য জাতীয় ফ্রিল্যান্সিং অ্যাওয়ার্ড (২০১৯) এবং ‘কল সেন্টারের অপরাজিতা’র জন্য এসবিএসপি সাহিত্য পুরস্কার (২০২১) পেয়েছেন।