অফিসের আড্ডায় দারুণ দারুণ সব আলোচনা হয়। আলোচনায় আমার অংশগ্রহণ হু-হা পর্যন্তই। চমৎকার সব কথা বলে চার্মবয়। -বুঝলেন মিজান ভাই, জীবনে সুখী হতে হলে আকাশের মেঘের মতো হতে হবে। মেঘ যে... See more
TK. 360 TK. 270 You Save TK. 90 (25%)
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
কমিয়ে দেখুন
বাংলাদেশে এই প্রথম "অনলাইন বাণিজ্য মেলা" ১ লক্ষাধিক পণ্যে ৭৫% পর্যন্ত ছাড়! সাথে BOGO, 100+ Bundle, ফ্রি শিপিং সহ আকর্ষনীয় সব অফার!
বাংলাদেশে এই প্রথম "অনলাইন বাণিজ্য মেলা" ১ লক্ষাধিক পণ্যে ৭৫% পর্যন্ত ছাড়! সাথে BOGO, 100+ Bundle, ফ্রি শিপিং সহ আকর্ষনীয় সব অফার!
অফিসের আড্ডায় দারুণ দারুণ সব আলোচনা হয়। আলোচনায় আমার অংশগ্রহণ হু-হা পর্যন্তই। চমৎকার সব কথা বলে চার্মবয়। -বুঝলেন মিজান ভাই, জীবনে সুখী হতে হলে আকাশের মেঘের মতো হতে হবে। মেঘ যেমন ইচ্ছে করলেই ঝমঝম করা বৃষ্টি হতে পারে তেমন মানুষকেও হতে হবে। রোদেলা আকাশে ঝকঝকে সাদা তুলো হয়ে ভেসে বেড়ানো, আর জমে ঘন হলেই ঝমঝম করে বৃষ্টি। মানুষ সুখী হয় না কেন জানেন? ওই যে জমে থেকেও ঝরতে পারে না। মনের ভেতর এত কালো মেঘ তাও বৃষ্টি নামতে দেয় না। একবার যে মানুষ তার জীবনে বৃষ্টি হয়ে নামতে শিখে গেছে ব্যস তার আর কোনো সুখের অভাব নেই। কী দারুণ কথা তাই না? আসলেই তো, জীবনের এই বয়ে চলা তো মেঘের ভেলার মতোই। শুধু আমরা সময়মতো বৃষ্টি হই না। সবার সঙ্গে আমিও মুগ্ধ হয়ে সেসব কথা শুনি। মাঝে মধ্যে মনে মনে খুব আফসোস হতো, ইশ এমন চমৎকার করে কথা বলবার মানুষটা যদি সবসময় সঙ্গে থাকত। পরক্ষণেই মনে হতো, ধুর। ধূসররঙা শার্টের ওই চার্মবয় নামক সুখী মেঘ আমার জন্য নয়। আমার জন্য বরং আকাশের মেঘই সঙ্গী হোক। সেই ভালো।
এই একটা ব্যাপার লিখতে এলেই আমার মাথার ভেতর ফাঁকা হয়ে যায়। ব্যক্তিগত তথ্যগুলো কেন জানি মানুষকে জানাতে ইচ্ছে করে না। আরেকটু গুছিয়ে বললে, বলার সাহস পাই না। তবে আজ ঠিক করেছি নিজের কিছু কথা বলবোই। আচ্ছা, লিখা ভালো লাগার জন্য কি লেখকের পরিচয়টা আদৌ জরুরি? আমার মনে হয় না। নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলি, এমন অসংখ্য লিখা আমার ভালো লাগার আছে, যাদের লেখককে আমি দেখিনি। হয়তোবা লেখকের ছবি বইয়ের পেছনে ছিলও। কিন্তু আমি দেখিনি। কারণ লিখার মাধুর্য আর গল্পের চরিত্র আমায় টেনেছে, লেখক নয় । ফেলুদা যখন পড়ি, আমি ভেবেছি ওটা তোপসেরই লিখা অন্য কারো নয়। সত্যজিৎ রায়ের পরিচিতির জন্য আমি কিন্তু একটুও ব্যাকুল হইনি। শার্লক হোমস যখন পড়ি, আমি স্যার আর্থার কোনান ডয়েলকে একদিনও চিনতে চাইনি। বরং বারবার আমার কল্পনায় শার্লক হোমস সামনে এসেছে। বারবার আমি লিখা আর গল্পের চরিত্রতে মুগ্ধ হয়েছি। একজন লেখকের জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া কি জানেন? তাঁর লিখার জন্য পাঠকের ভালোবাসা। সুতরাং তৃধা আনিকার ব্যক্তিগত জীবন আপাতত লুকানোই থাক। তার চেয়ে বরং তৃধা আনিকা তার গল্পে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র সেজে নিজের মনের কথাগুলো অনায়াসে বলে যাক । দেখা যাক না, কি হয়। পাঠক তার লিখাকে কেমন ভালোবাসে, দেখি!
♦ভূমিকাঃ হঠাৎ হঠাৎ করে ইদানিং কোনো এক সকালে আমার ঘুম ভেঙে গেলে আমি চারপাশটা খুব মনোযোগ নিয়ে তাকিয়ে থাকি । তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজের চারপাশটাকে যখন গুমোট লাগতে শুরু করে, তখন মনে হয় পরিবেশটা যতটা না গুমোট তার থেকেও বেশি এরকম আবছায়া অনুভব আমার মনেই রাজত্ব করে থাকে । আমার মনের শান্তি বিরাজ করে থাকে নিজের চেনা পরিবেশে । সেখানে বছরের প্রতিটা সকালই হয় স্নিগ্ধতার আবেশ দিয়ে ঘেরা । জগতের সব সুখ যেন সেই নিস্তব্ধতায় ভেসে গিয়ে দাঁড়ায় । এখানের নিস্তব্ধ পরিবেশগুলোও যেন বড্ড মনে করিয়ে দেয় নিঃসঙ্গ জীবনটাকে । আমি তখন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থেকে থেকে শুধু ভাবতে বসি, প্রতিটি নিস্তব্ধতা কি আসলেই এতটা আলাদা! এতটা অনুভব নিয়ে নিজ নিজ রেশ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়! আমার হয়ে থাকা নিস্তব্ধতাগুলো যেন ব্যস্ত শহরে আরো ডানা মেলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দৌড়ে বেড়ায় ।
♦পারিপার্শ্বিক দিকঃ বই না পড়া আমার এই মনটা মাঝেমাঝেই বড্ড উদাসীন হয়ে যায় । ইদানিং হঠাৎ করে যেমন ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছে করে খুব । ঠিক তেমনিভাবে মাঝে মাঝে বইগুলোর পৃষ্ঠা উল্টোতে উল্টোতে মৃদু ভাবে বইয়ের পাতাগুলো পড়তে ইচ্ছে করে খুব । এই রাজ্যে আমার বিচরণ যা এক সময় অভ্যাস ছিল, তা যেন এখন শখ হয়ে ধরা দেয় । পৃথিবীতে কিছু শখ সুন্দর হয়ে ধরা দিলেও এই শখটিকে অভ্যাস থেকে শখে পরিণত হওয়ার পদ্ধতিটা আমার এত ভালো লাগে না । মনে হয় যেন আজন্মকাল ধরে তাড়া করে বেড়ায় আর বলে, এই অভ্যাস সারাজীবন তোমার সঙ্গে থাক, থাক, থাক । হঠাৎ তখন সন্ধে, মনে হলো আজকে এই ছুটির দিনে একটা বই পড়া দরকার খুব । এবং সেটা যে এই বইটি দিয়েই হবে তা বেছে নেয়াও খুব বেশি একটা কঠিন ছিল না । এই বইটা বোধহয় আমার পাঠক হয়ে ফিরে আসার নতুন একটা শুরুও বটে । যাহোক ঠিক সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে বইটি পড়তে বসেছিলাম । সময়টা যখন রাত ৯টা ১০ মিনিট, তখন বইটি পড়া শেষ হয়ে গেল ।
♦নামকরণঃ পৃথিবীতে একটা কথা আমি বোধহয় বেশিবার বলেছি, সেটা কি জানেন? সেটা হলো–ভালোবাসা খুব অদ্ভুত, তাই না? এই প্রশ্নটা আমি কত অনুভূতিতে লিখেছি । কত ভাবে কত মায়া দিয়ে লাইনটিকে আবেগ তাড়িত করেছি । আজকে আবারও অনুভূতি প্রকাশে মনে হলো এটিই লিখি । ভালোবাসা আসলেই অদ্ভুত । কারণ পৃথিবীতে অদ্ভুত তো তখনই আসে যখন তা হঠাৎ করেই জীবনের ধাঁচে ধাঁচে দুজন মানুষের মধ্যে পড়ে গিয়ে হঠাৎ করে মনোযোগ, আকর্ষণ সব বাড়িয়ে দেয় । পুরোটা জীবনে কতটা অদ্ভুত ঘটনার চক্রেই তো মানুষ পড়ে, কিন্তু ভালোবাসাই যেন অদ্ভুত হয়ে ধরা দেয় । অদ্ভুত লাগে কাছে আসার গল্পগুলোও । পৃথিবীতে প্রতিটি ভালোবাসার গল্পগুলো যেমন আলাদা, এই একটি লাইন বোধহয় কতশত বার ব্যবহার করা হয়ে ওঠে তার আদ্যোপান্ত কোনো হিসেব হয়তো আমার কাছে নেই । কিন্তু আসলেই ভালোবাসা বড্ড বেশি অদ্ভুত । হঠাৎ করে মনে হলো লিখি, এই উপন্যাসে নামকরণ বিষয়টাই তো অদ্ভুত । তখন মনে হলো আরো অনুভবে অনুভূতি বাড়লো আমার । এই উপন্যাসে তো ভালোবাসা অনেকখানি জুড়েই আছে । ভালোবাসায় কত সিক্ত অনুভূতি তো আরো নামকরণ জড়িয়ে ধরে রাখতে পারতো । তারপর মনে যেন আরো ভালো লাগায় জড়িয়ে যেতে যেতে বুঝতে পারলাম, পৃথিবীতে আসলেই ভালোবাসা ভীষণ ভাবে অদ্ভুত । হঠাৎ করে দম বন্ধ বন্ধ হয়ে আসার মতো করে অদ্ভুত । শীত শীত মুহূর্তে হঠাৎ করে নিঃশ্বাস টেনে শীত শীত হাওয়ার মতো করে সুখ আসার মতো অদ্ভুত । ঠিক সেভাবেই একটা দৃশ্য ভালোবাসার এই গল্পে ক্ষনিকের মুহূর্তে যেন সব জড়িয়ে দিয়ে গেল । সব দ্বিধায় উপসংহার টেনে একটা আবহ দিয়ে গেল । এরকম আবহে একটা বাতাসের মতো করে ‘দার্জিলিংয়ের টুপি’ যেন তাই যথার্থ এবং সেরা হয়েই রয়ে গেল ।
♦ফ্ল্যাপে লেখাঃ অফিসের আড্ডায় দারুণ দারুণ সব আলোচনা হয় । আলোচনায় আমার অংশগ্রহণ হু-হা পর্যন্তই । চমৎকার সব কথা বলে চার্মবয় । —বুঝলেন মিজান ভাই, জীবনে সুখী হতে হলে আকাশের মেঘের মতো হতে হবে । মেঘ যেমন ইচ্ছে করলেই ঝমঝম করা বৃষ্টি হতে পারে তেমন মানুষকেও হতে হবে । রোদেলা আকাশে ঝকঝকে সাদা তুলো হয়ে ভেসে বেড়ানো, আর জমে ঘন হলেই ঝমঝম করে বৃষ্টি । মানুষ সুখী হয় না কেন জানেন? ওই যে জমে থেকেও ঝরতে পারে না । মনের ভেতর এত কালো মেঘ তাও বৃষ্টি নামতে দেয় না । একবার যে মানুষ তার জীবনে বৃষ্টি হয়ে নামতে শিখে গেছে ব্যস তার আর কোনো সুখের অভাব নেই ৷ কী দারুণ কথা তাই না? আসলেই তো, জীবনের এই বয়ে চলা তো মেঘের ভেলার মতোই । শুধু আমরা সময়মতো বৃষ্টি হই না । সবার সঙ্গে আমিও মুগ্ধ হয়ে সেসব কথা শুনি ।
মাঝে মধ্যে মনে মনে খুব আফসোস হতো, ইশ এমন চমৎকার করে কথা বলবার মানুষটা যদি সবসময় সঙ্গে থাকত ৷ পরক্ষণেই মনে হতো, ধুর । ধূসররঙা শার্টের ওই চার্মবয় নামক সুখী মেঘ আমার জন্য নয় । আমার জন্য বরং আকাশের মেঘই সঙ্গী হোক । সেই ভালো ।
♦প্রচ্ছদঃ এই প্রচ্ছদটা যেদিন হঠাৎ করে প্রথম ফেসবুকে এলো । আমি যে কি পরিমাণ খুশি হয়ে উঠলাম তা আমি জানি না! ভাগ্যে ভালো অনুভূতির পরশ পুরোপুরি পাওয়ার জন্যেই কিনা জানিনা, সেদিন ফেসবুকেই বসে বসে প্রচ্ছদটা দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠেছিলাম । প্রচ্ছদটা মন দিয়ে তাকিয়ে দেখলে অনুভূতিতে ভেসে ওঠে যেন একটা মেয়ের মাথায় উলের ওই টুপিটা দেখার জন্য । ওই উলের টুপি যেন কোনো ভালোবাসার গল্পে আকর্ষণ হয়ে জুড়ে আছে । এই জুড়ে থাকায় যে কতটা সুখী সুখী আবহ, তা ভীষণ ভালো লাগায় ভরিয়ে দেয় । প্রচ্ছদটা ভীষণ সাধারণ হয়ে যেন চোখের ভাষায় তখন অসাধারণ হয়ে ঘুরে ফিরে । পিছনে যেন হেনা’র সেই ইচ্ছেটাকে আবছায়া অনুভবে ভাসিয়ে দিয়ে যায় প্রচ্ছদে ।
♦চরিত্র বিশ্লেষণঃ উপন্যাসে চরিত্র সংখ্যা বেশ কম আছে । তবুও যা আছে তার মধ্যে থেকে বেশ কয়েকটি নিয়ে লিখবো ।
•হেনাঃ হেনা কামিনী! বাবার প্রিয় দুই ফুলের নামকরণে নাম রাখা মেয়েটি যেন চরিত্রগত দিক থেকেও মুগ্ধতা ছড়ায় খুব । আত্মবিশ্বাসে ভরপুর মেয়েটি নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে খুব । নিজের পরিচয় নিজেই তৈরি করতে চাওয়ার অসাধারণ এক মানসিকতা নিয়ে বাঁচা মেয়েটি কর্মজ্ঞানে পারদর্শী সাথে নিজেকে প্রমাণ করতে চেষ্টা করে যায় ধৈর্য ক্ষমতা নিয়ে । চুপচাপ স্বভাবের এই মেয়েটি যেন নিজের জীবন নিয়েই তাই বাঁচে ।
•অনির্বাণঃ হাস্যোজ্জ্বল স্বভাবের এই মানুষটি যেন সবার কাছে খুশি থাকার এক মাধ্যম । সবাইকে আনন্দে ভাসিয়ে, সুখ বিলিয়ে দিয়ে যেন নিজের মধ্যেই সুখ বাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা অনুভব করে । মাঝে মাঝে কিছু ছেলেমানুষী চিন্তা বেশ ভালো লাগা দেয় ।
•মৃত্তিকাঃ বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের একজন নারী । যিনি হাসিখুশি থেকে মানুষকে ভালোবাসতে জানে । ভাইকে ভালোবাসে খুব ।
•জাওয়াদঃ কিছু দায়িত্ব যেন ভালোবাসার উপরে এসে অন্যরকম হয়ে ধরা দেয় । জাওয়াদ অসাধারণ একটি চরিত্র । বোনকে ভালোবেসে বোনকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা তাকে দায়িত্বশীল করে তোলে অন্যভাবে ।
♦টুকিটাকিঃ এছাড়াও উপন্যাসে বেশ কয়েকটি চরিত্র আছে যারা উপন্যাসে সাময়িক উপস্থিতি দিয়ে থাকলেও তাদের রেশ রয়ে যায় পুরোটা উপন্যাস জুড়ে । একরাশ ভালো লাগা নিয়ে বসে থাকে আবছায়া অনুভবে । হেনার বাবার মেয়েকে ভালোবেসে মেয়ের জেদকেই বরণ করে নেয়ার এক চেষ্টা বেশ লাগায় । সুখী সুখী অনুভুতিতে অফিসের প্রতিটি চরিত্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বেশ ভালো লাগা বাড়িয়ে দেয় যেন ।
♦প্রিয় চরিত্রঃ এই উপন্যাসে প্রিয় চরিত্র যেন অনির্বাণ এবং হেনা এর মধ্যেকার সময়ের দূরত্বের অধিকারবোধগুলোই । প্রতিটি দূরত্ব যেন সময়কে প্রশ্ন করে অধিকার তোলে । মিষ্টি মিষ্টি আবছা আলোয় এই দুজনকে আরো কাছে এনে দেয় । এই দুজনের অদ্ভুত রসায়ন হোক কিংবা চোখে চোখে তাকিয়ে নিঃশব্দ চাহনিগুলো যেন আমার কাছে প্রিয় চরিত্র হয়ে ধরা দেয় । পৃথিবীতে প্রিয় চরিত্র হয়ে কখনও কখনও যেন মানুষের থেকেও তাদের কাছের মনে হওয়ার প্রতিটি পদক্ষেপকেই বরং প্রিয় প্রিয় মনে হয় বেশি । সেরকম করেই এই চরিত্র দুইটির রসায়ন এবং অদ্ভুত অসম প্রেমের রসায়নই প্রিয় চরিত্র হয়ে ধরা দিক ।
♦পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ √অসম বয়সের প্রেম মাথায় যখনই আসে তখন আমার মনে হয় যেন লেখকের নামটা একবার দেখা দরকার । যখন দেখা হয়ে যায় তখন তা বেছে নেয়ার সময়ে একরাশ ভালো লাগায় মন ভেসে যায় আনন্দে । এই ধরনের উপন্যাসগুলো আমাকে কেনো যেন খুব মন থেকে টানে । বড় কৃষ্ণচূড়া ফুল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে হাওয়া খেতে খেতে উপরে তাকিয়ে ফুলের দিকে তাকিয়ে যেভাবে শান্তি পাওয়া যায় ঠিক সেভাবে টানে আমাকে । এই বইটিও তাই আমাকে আক্ষরিক ভাবেই অনুভূতিতে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে বলেই বারংবার মনে হচ্ছিল ।
√মূলত উপন্যাসের পটভূমি হেনা এর কথনে ভেসে আসলেও কিছু কিছু মুহূর্ত উপন্যাসের বিভিন্ন দৃশ্যপটের আবহেও তৈরি হয়েছে । এই দুই ভাব এবং আবহের সংযোগে উপন্যাসে বেশ অদ্ভুত কিছু মুহূর্ত তৈরি হয়েছে । যা বেশ সুন্দর ভাবে উপন্যাসে উপস্থাপন করা হয়েছে যে কারণে উপন্যাসটি বেশ সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বলে মনে হয়েছে । অসম বয়সের প্রেমে সচরাচর যেরকম আবহের প্রেম, রোমান্টিক আবেশ থাকে তার থেকে অন্যরকম ভাবে এক আবেশ দিয়ে উপন্যাসের দৃশ্যপট সাজানো হয়েছে যে কারণে আমার কাছে আরো ভালো লেগেছে । রোমান্টিক ঘরানার উপন্যাস, বিষয়টি আমার কাছে বেশ প্রিয় । তবে প্রিয় হলেও সম্পর্কের রসায়ন তো বড্ড চেনা হয়ে ধরা দেয় । বড্ড চেনা হয়ে দাঁড়ায় দুজন মানুষের একত্রে কাছের হয় মিশে যাওয়াটায় । তাই এই দুজন মানুষকেই কতটা অন্যরকম ভাবে প্রকাশ করে পাঠককে অনুভবে ভাসিয়ে দিয়ে যাওয়া যায় তার একটা চেষ্টা করা বড্ড প্রয়োজন । এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট অসম বয়সের প্রেম, এবং সেই হিসেবে দৃশ্যপটে বেশ সাধারণ হলেও এই সাধারণ নামক আবছায়া অনুভবগুলোই কেনো জানি না অসাধারণ হয়ে ছুটে বেড়ায় । উপন্যাসের মূল চরিত্রের কথন এবং তার সংযোগে উপন্যাসটির প্রতিটি দৃশ্যপট এবং আবহকে তাই বড্ড চেনা মনে হয়ে যেন কল্পনা করতে ইচ্ছে করে খুব ।
√উপন্যাসের চরিত্রায়ন বেশ পরিমিত । একজন চরিত্রের কথনে যতটা দারুণভাবে উপন্যাসের পটভূমি এবং জীবনধারা ফুটিয়ে তোলা যায় ঠিক ততটাই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । এক্ষেত্রে প্রতিটি দৃশ্যপটে চরিত্রগুলোর উপস্থিতি বেশ দারুণভাবে জুড়ে ছিল । চরিত্র গঠন হিসেবে হেনা চরিত্রটির গঠনে তাই দারুণ কিছু চেষ্টা করা হয়েছে । অনির্বাণ চরিত্রটির প্রতি সম্বোধনে তার ‘আপনি’ থেকে ‘তুমি’তে যাওয়ার অনুভব বেশ ভালো লাগার ছিল । সবাইকে আনন্দে ভাসিয়ে রাখা মানুষটির যে উপলক্ষ হিসেবে কারো আবছায়া উপস্থিতিগুলো মূখ্য হয়ে দাঁড়ায় তা বেশ অদৃশ্যে থেকে যেন ধরা দেয় । অন্যান্য চরিত্রগুলো দৃশ্যপট হিসেবে সাজানো হলেও তা বেশ সুন্দর করে গঠন করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । বিশেষত মৃত্তিকা চরিত্রটি বেশ ভালো ভাবে তৈরি করা হয়েছে ।
♦প্রিয় অংশঃ এতক্ষণ ধরে আমি যে মুহূর্তটির অপেক্ষা করেছি খুব । তা হলো, প্রিয় অংশ । এই উপন্যাসটিতে আমার প্রিয় অংশ প্রচুর । উপন্যাসজুড়ে থাকা প্রতিটি নিস্তব্ধতা যেন আমার কাছে প্রিয় হয়ে ধরা দেয় । আর বলে, অনুভব করো । অনুভব করো । কতগুলো মুহূর্তের কথা মনে পড়ছে খুব । প্রথম যে মুহূর্তটির কথা এখন মনে পড়ছে তা হলো, ইছামতী নদীর তীরে ওই যে সুখ সুখ অনুভব হওয়ার দৃশ্যটা ওটা বেশ কাছের আমার জন্য । ওই নদী ঘিরে ধরে রাখা আজন্ম চাওয়া যেন একটা প্রাপ্তি । এছাড়াও উপন্যাসের ১০৪-১০৬ পৃষ্ঠা তিনটি উপন্যাসে আমার ভালো লাগা জুড়ে আছে । আমি যেন বই পড়া শুরু করা থেকে এই অনুভূতি লেখা শেষ করা পর্যন্ত যতটা সুখ সুখ অনুভূতি, যতটা আনন্দ আনন্দ হাসি কিংবা মর্মস্পর্শী হয়ে ভেসে যাওয়া নিঃশব্দতা সব ওই তিনটা পৃষ্ঠায় রেখে দিয়েছি বইটির বুকমার্ক-এর মতো করে । পৃষ্ঠা খুঁজতে বের হলেই যেন এক নিমেষে তা বের হয়ে যায় । এই তিনটা পৃষ্ঠায় যেন অনুভব আছে । অনুভূতিকে ভালো লাগানোর মতো স্পর্শ করা আছে । এছাড়াও উপন্যাসে অনির্বাণের কান্না আছে । জগতের যত কান্না সবই যেন অদ্ভুত । কিছু কিছু কান্না বোধহয় কষ্টের মধ্যে হলেও সুখ সুখ অনুভূতি নিয়ে ধরা দেয় । বড্ড কাছের কাছের হয়ে ধরা দেয় । এই উপন্যাসে সম্পূর্ণ অচেনা, দূরের একটা চরিত্র হয়ে ওঠা মানবটিকে বড্ড কাছের হয়ে ধরা দেয় যেন ওই কান্নাগুলোর অংশগুলোতে । মনে হয় যেন, এ তো আমাদের কাছের কেউই । যে ভালোবাসার সম্পর্কগুলোকে ধরে রাখতে জানে, চেষ্টা করে । প্রাপ্তি কিংবা ক্ষণিকের হারিয়ে ফেলে আবার জুড়ে নেয়াকে কান্না দিয়েই সম্ভাষণ করে আমন্ত্রণ জানায় । এছাড়াও উপন্যাসের শেষ দৃশ্যপটে প্রকৃতির বর্ণনা হিসেবে দার্জিলিং শহরের বর্ণনা বেশ ভালো লাগা বাড়িয়ে দেয় যেন । এই শীত শীত মুহূর্তে যেন কল্পনা করায় আরো কাছের মনে হয় প্রিয় শহরটিকে । শেষ দৃশ্যপট বড্ড প্রিয় অংশ হয়ে থাকে আমার কাছে ।
♦অন্যান্য বিষয়ঃ
√প্রকাশনীঃ প্রকাশনী হিসেবে অন্যধারা এর সবথেকে যা ভালো লাগার মতো তা হলো, বইকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা । এই বইটিও তাই দারুণ ভাবে বাঁধাই করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । প্রচ্ছদটি বেশ সুন্দর ভাবে তৈরি হয়ে এসেছে । বইয়ের বাঁধাই এর পাশাপাশি পৃষ্ঠা গঠন এবং বইয়ের সাজানো অংশও বেশ ভালো লাগার ছিল । বইতে সেভাবে টাইপিং মিস্টেক না থাকলেও সংলাপে উদ্ধৃতি চিহ্ন নেই একেবারেই । যা কখনও কখনও সংলাপের শেষ কখন তার ব্যাপারে সামান্য দ্বিধান্বিত করে তোলে । এছাড়া জলছাপ গুলো ভালো ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ।
♦লেখক প্রসঙ্গেঃ ‘দার্জিলিংয়ের টুপি’ লেখক তৃধা আনিকা এর উপন্যাস । এই একটা লাইনই যথেষ্ট একটা বইয়ের প্রতি আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয়ার জন্য । একটা বইকে আকর্ষণীয় ভাবে প্রকাশ করার জন্য । অন্যধারা যেন তার সাথে অসাধারণ এক সংযোজন । লেখকের প্রায় সবগুলো বইই পড়া এই আমার মন সবসময় দম আটকে একটা কথাই বলতে চায় । মন বলতে চায়, সম্পর্কের রসায়ন বোঝাতে কিংবা তাদের মধ্যে দূরত্ব বোঝাতে তার অনুভব প্রকাশ করতে লেখক তৃধা আনিকা এর মতো করে কেউ পারে না । এই মন বলা প্রকাশে আমি এই উপন্যাসেও অপেক্ষা করেছি এই অদ্ভুত সুন্দর মুহূর্তগুলোর সাক্ষী হতে । এবং তা পেয়েছি । সাধারণ প্রেক্ষাপটকেও অসাধারণ করে ফুটিয়ে তুলে শান্তিতে পাঠকদের থেকে নিঃশ্বাস নিয়ে হাসতে দেখার মতো একটা পটভূমি যেন পড়ে আছে বইয়ের পাতায় । রোমান্টিক আবহ এবং ভালোবাসার প্রকাশ বেশ সুন্দর ভাবে লেখক তার লিখনশৈলী দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন । তবে সংলাপে উদ্ধৃতি চিহ্ন থাকলে আরেকটু বেশ হতো । দার্জিলিং শহরের প্রতি মুগ্ধতার মতো করে এই বইয়ের প্রতি মুগ্ধতা আমার আজন্ম ছড়াক । লেখক তৃধা আনিকা, তৃধাপুর পরবর্তী লেখাগুলোর জন্য শুভকামনা রইলো ।
♦রেটিংঃ ৪.৮/৫
♦উপসংহারঃ পাঠক হিসেবে আমার নিজেকে বেশ দ্বিধায় ভেসে যাওয়া চরিত্র মনে হয় । নিজেকে তখন আয়নায় দেখতে চেয়ে মনে হয়, নিজেকেই বলি, তুমি কেমন হে বাপু! তোমার মতিগতি তো কিছুই বুঝি না । এরকম আবেগ কেমনে আসে? এই কারণটাও হয় কারণ দেখা যায়, কষ্ট কষ্ট পাওয়া উপন্যাসগুলোতে আমার মন খারাপ হয় না । প্রবল মন খারাপগুলোতে নিঃশব্দে তাকিয়ে থাকা হয় বোধহয় । মন খারাপের রাত্রিগুলোতে চরিত্রগুলোর জীবনের টানাপোড়েনে মিশে যেতে ইচ্ছে করে । কিন্তু কখনও কান্না পায় না । আবেগ তাড়িত হয়ে আলোড়ন তুলে ধরা দিতে ইচ্ছে করে না কোথাও । কিন্তু মন থেকেই আবেগ ভেসে এসে কান্না হয়ে জড়ায় না । অথচ অদ্ভুত ভাবেই কিছু কিছু সুখ সুখ মুহূর্তে ঘেরা উপন্যাসে আমার খুব কাঁদতে মন চায় । মন চায় আমি কেঁদে বইটি জড়িয়ে ধরে বসে থাকি । বসে বইটি নিয়ে আবেগ তাড়িত হয়ে অনুভব করি । এই বইটির ক্ষেত্রেও আমার আবেগ তাড়িত অনুভব হচ্ছে । দম আটকে সুখ সুখ মুহূর্তে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে রাতের অজানা আকাশে!
Read More
Was this review helpful to you?
By Sharmin Afroz,
06 Feb 2024
Verified Purchase
কিছু কিছু মূহুর্ত আসে না জীবনে! যা আমাদের অন্যরকম ভালোলাগার অনুভূতি দিয়ে যায়,একদম মিষ্টি মিষ্টি অনুভূতি, দার্জিলিংয়ের টুপি বই পড়ে আমার সেরকম অনুভূতি হয়েছে। বইটা পড়ার সময় অদ্ভুত আচ্ছন্নতায় ভেসে বেড়াচ্ছিলাম। লেখকের লেখনশৈলী এক্ষেত্রে প্রশংসার দাবীদার। অনেক অনেক শুভকামনা রইল তৃধা আপুর জন্য। তার কাছে সামনেও এমন সুখকর মূহুর্ত ভেসে বেড়ানোর মতো আরও উপন্যাস পাবো আশা রাখছি🤍
Read More
Was this review helpful to you?
By Kulsuma Binte Azad ,
13 Dec 2023
Verified Purchase
প্রথম বার তৃধাপুর বই রকমারি প্রি-অর্ডার নিচ্ছে,ব্যাপার টা অন্যরকম, শুভকামনা আপু🫶