ভূমিকা اَلْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِىْ شَرَّفَنَا عَلَى سَائِرِ الْأُمَمِ، بِرِسَالَةِ مَنِ اخْتَصَّهُ مِنْ بَيْنِ الْأَنَامِ، بِجَوَامِعِ الْكَلِمِ وَجَوَاهِرِ الْحِكَمِ. وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى خَيْرِ الْبَرِيَّةِ مُحَمَّدٍ وَّاَلِهِ الطَّيِّبِيْنَ الطَّاهِرِيْنَ. মানুষ মারা গেলে সাথে সাথে সে ইহজগত থেকে কবর-জগত তথা আলমে বরযখে প্রত্যাবর্তন করে। মরদেহ কবরে দাফন করা হোক কিংবা আগুনে পুড়ানো হোক; তবুও লাশের বিবেকশক্তি ও অনুভূতি শক্তি বিদ্যমান থাকে। মরণের পর থেকে কেয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত সময়কে আলমে বরযখ বলে। বরযখ অর্থ পর্দা, আড়াল। দুনিয়া ও আখেরাতের মাঝে কবর জগত আড়াল হওয়ায় একে আলমে বরযখ বলা হয়। সাধারণত পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষকে মরণের পর কবরে দাফন করা হয় বিধায় হাদীসসমূহে আলমে বরযখে শান্তি বা শাস্তির বর্ণনায় কবর শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আর মৃতদেহ জ্বালিয়ে বা ভাসিয়ে দিলে সে আলমে বরযখে জীবিত থাকে না; এরকম নয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত বিভিন্ন রেওয়ায়াতের মাধ্যমে এ বিষয়টি স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে, মানুষের মরদেহ অনুভূতিসম্পন্ন। অথচ আমরা তা প্রাণহীন মনে করি। তবে লাশের প্রাণ-সঞ্চালন আমাদের সচল জীবন-প্রবাহের মত নয়। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন, “মৃতব্যক্তির হাড় ভাঙ্গলে সে তেমনই কষ্ট উপলব্ধি করে, জীবিত থাকাকালীন সে যেমন কষ্ট বোধ করে।” সুতরাং আল্লাহ তাআলা মানুষের দেহের প্রতিটি কণা একত্রিত করে অপরাধের শাস্তি ও পূণ্যের প্রতিদান দিতে সক্ষম। হাদীসে বর্ণিত আছে, জনৈক গুনাহগার ব্যক্তি তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলে নিজ সন্তানদের ডেকে অসিয়ত করল, “আমি যখন মৃত্যুবরণ করব, তখন আমাকে জ¦ালিয়ে, পোড়া দেহের অর্ধেক ছাই জমিনে ছড়িয়ে দিবে এবং বাকি অর্ধেক ছাই সমুদ্রে ভাসিয়ে দিবে। আর এতকিছুর পরও যদি আল্লাহ তাআলা আমাকে জীবিত করে পাকড়াও করেন, তবে অবশ্যই এমন শাস্তি দিবেন, যা পৃথিবীর অন্য কাউকে দিবেন না!” মৃত্যুর পর সন্তানেরা অসিয়ত পূর্ণ করল। উদ্দিষ্ট ব্যক্তির শরীরের অংশ একত্র করার জন্য আল্লাহ তাআলা সমুদ্রকে নির্দেশ দিলেন। সমুদ্র নিজের বক্ষে ভাসানো সকল অংশ জমা করে দিল। জমিনকে নির্দেশ দিলে সেও শরীরের বাকী অংশ হাজির করল। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তার শরীরের প্রতিটি অংশ একত্রিত করে পুনরায় জীবিত করে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এমন অসিয়ত করলে কেন? সে আরজ করল, “হে আমার রব! আপনার ভয়ে আমি এমন অসিয়ত করেছি। আপনি অবশ্যই এ বিষয়ে ভালো জানেন।” এ কর্মের উসিলায় আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিলেন। (বুখারী-মুসলিম) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত বিভিন্ন রেওয়ায়েত দ্বারা জানা যায়, “মুমিন বান্দাগণ আলমে বরযখে পরস্পরের সাথে সাক্ষাত করেন এবং আলমে বরযখে আগন্তুক ব্যক্তিদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। তার কাছে আত্মীয় স্বজনের খোঁজ-খবর নেন।” হযরত সাঈদ ইবনে যুবাইর রহ. বলতেন, মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে, তখন আলমে বরযখে তার পরিচিতরা এমনভাবে অভ্যর্থনা জানায়, যেমনিভাবে দুনিয়াতে সফর থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিকে তার পরিবার সাদরে গ্রহণ করে তাকে অভ্যর্থনা জানায়। হযরত সাবেত বুনানী রহ. বলেন, মানুষ মরণের পর যখন আলমে বরযখে যায়, তখন তার পূর্বে কবরবাসী হওয়া আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতরা তাকে পেয়ে এমন আনন্দিত হয়, দুনিয়াতে সফর থেকে আসা লোককে কাছে পেয়ে নিকটজন যেমন খুশি হয়! বরং তার চেয়ে বেশি আনন্দিত হয়। (ইবনু আবিদ দুনিয়া) হযরত কায়েস ইবনে কুবাইসা রাযি. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে মুমিন নয়, তাকে মৃতব্যক্তির সাথে কথাবার্তার অনুমতি দেয়া হয়। কেউ আরজ করল, হে আল্লাহর রাসুল! মৃতরা কথাও বলতে পারে? তিনি ইরশাদ করলেন, তারা একে অপরের সাথে সাক্ষাত করে। (ইবনে হিব্বান) একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আমর ইবনে হাযম রাযি.কে কবরে টেক লাগিয়ে বসা দেখে বললেন, “কবরবাসীকে কষ্ট দিয়ো না।” (মেশকাত) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, যখন লাশ খাটিয়াতে রেখে কবরস্থানে নেয়ার জন্য বহন করা করা হয়, নেককার লাশ তখন বলতে থাকে, “আমাকে দ্রæত নিয়ে চলো...।” আর যদি বদকার হয়, তাহলে পরিবারস্থ লোকদের বলতে থাকে, “হায় আমার ধ্বংস! আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ...”।