ইসলামি শরিয়তের মৌলিক বিষয় পাঁচটি। ১. আকিদা; ২. ইবাদত; ৩. মুআমালাত; ৪. মুআশারাত; ৫. আখলাক। এই পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক বিষয় হলো, আকিদা-বিশ^াস। বাকি বিষয়গুলো আল্লাহ তাআলার কাছে কবুল হওয়া বা না হওয়া আকিদার ওপর নির্ভরশীল। যদি আকিদা-বিশ্বাস সঠিক হয় তাহলে বাকি আমলগুলো আল্লাহ তাআলা কবুল করে নেবেন। পক্ষান্তরে আকিদা সঠিক ও বিশুদ্ধ না হলে কোনো আমল আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদার ওপর এ যাবত বহু গ্রন্থ রচিত রয়েছে। ইমাম আবু জাফর আহমাদ বিন মুহাম্মদ বিন সালামাহ তহাবি রহ. বিরচিত ‘আল-আকিদাতু-তহাবিয়া’ সংক্ষিপ্ততা ও গভীর অর্থবহতার বিবেচনায় একটি বুনিয়াদি-মৌলিক কিতাব। ফলে সহস্র বছর যাবত গ্রন্থটি আরব ও অনারবের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আকিদা বিষয়ক পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভূক্ত এবং আকিদা শিক্ষার ধ্রুপদী গ্রন্থ হিসেবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সকল দল ও জামাতের নিকট সর্বসম্মতভাবে বরিত ও দলিল হিসেবে নিঃসংকোচে গ্রহণযোগ্য। বক্ষমান গ্রন্থটি আল আকিদা আত তহাবিয়ার অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত সরল ব্যাখ্যা। ব্যাখ্যা লিখেছেন, পাকিস্তানের বিখ্যাত আলেম ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব মুনাজেরে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ হযরত মাওলানা ইলিয়াস ঘুম্মান হাফিজাহুল্লাহ। তার ইলমি যোগ্যতা ও কৃতিত্ব বিশ্বজোড়া সমাদৃত। আকিদা আত-তহাবিয়্যার ব্যাখ্যাগ্রন্থের সংখ্যা অগুনতি। প্রতিটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে এবং আলাদা উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে রচিত। এই ব্যাখ্যাগ্রন্থটির বিশেষত্ব হলো, আকিদার প্রত্যেকটি শিরোনামের অধীনে তিনি ঠিক ততখানি ব্যাখ্যা করেছেন যতখানি জানা অনিবার্য ও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সংক্ষিপ্ত, সহজ ও জরুরি ব্যাখ্যাটুকু সন্নিবেশনের কারণে গ্রন্থটি থেকে উপকৃত হওয়া ততোধিক সহজ এবং মূলগ্রন্থের আবেদন ও বক্তব্য হৃদয়ঙ্গম করা অনায়াসসাধ্য।
তাহাবী ৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে/২২৯ হিজরিতে উত্তর মিশরের তাহা গ্রামে এক ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পড়াশোনা তার মামা ইসমাঈল ইবনে ইয়াহিয়া আল-মুজানির সাথে শুরু করেন, যিনি ছিলেন শাফিঈ মাযহাবের শীর্ষস্থানীয় একজন আলেম। ৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে/২৪৯হিজরীতে, তাহাবী ২০ বছর বয়সে শাফিই মাযহাব ত্যাগ করেন এবং ব্যক্তিগত কারণে হানাফি মাযহাব গ্রহণ করেন। তার হানাফী মাযহাবে স্থানান্তরের কারণ নিয়ে অনেক বর্ণনা রয়েছে, তবে অধিক সম্ভাব্য কারণ ছিল মনে হয়, তার কাছে আবু হানিফাকে শাফিঈর থেকে বেশি বুদ্ধিদীপ্ত লেগেছিল। তাহাবী পরে মিশরে হানাফীদের প্রধান আহমেদ ইবনে আবী ইমরান মুসার অধীনে পড়াশোনা করেন, যিনি নিজে আবু হানিফার দুই প্রাথমিক শিক্ষার্থী আবু ইউসুফ এবং মুহাম্মদ আল-শায়বানির অধীনে পড়াশোনা করেছিলেন। তাহাবী পরবর্তী সময়ে ৮৮২ খ্রী/২৬৮ হিজরীতে হানাফি আইন বিষয়ে আরও পড়াশোনা করার জন্য সিরিয়ায় যান এবং দামেস্কের প্রধান হাকিম কাজী আবু হাজ্জিম আবদুল হামিদ বিন জাফরের শিষ্য হন। তাহাবী হানাফী আইনশাস্ত্র ছাড়াও হাদীসের উপর এক অসাধারণ জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। ফলস্বরূপ তাঁর গবেষণা অনেক আলেমকে আকৃষ্ট করে যারা পরে তাঁর হাদীস সম্পর্কিত রচনা নিয়ে আরো গবেষণা করেন। এর মধ্যে খুরাসানের জহিরীদের প্রধান আল-দাউদি এবং হাদীস বর্ণানাকারীদের জীবনী সংক্রান্ত অভিধানের জন্য আল-তাবারানী সুপরিচিত ছিলেন। হানাফী ফকীহরা তো বটেই, তাহাবির গ্রন্থ কিতাব মাআনী আল-আতহার এবং তাঁর আকীদা সম্পর্কিত বইয়ের জন্য বেশিরভাগ সুন্নি পন্ডিতের মধ্যে বিশিষ্ট স্থান অর্জন করেছে।