সকাল থেকে ঝকঝকে রোদ। মৃদু মন্থর হাওয়ায় ভালোলাগার পরশে গানের রিহার্সাল চলছে। দ্বি-প্রহরের পর থেকে আকাশের অবস্থা ভালো নয়। নিয়ম মত রিহার্সালে এসেছিল আজও। ঘোর অন্ধকার হয়ে ঝড় শুরু হয়েছে এরই মাঝে। রাগিণী রিহার্সাল শেষ করে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় আছে।
এদিকে ঝড়-বৃষ্টি থামার লক্ষণ নেই। আরও যারা রিহার্সালে এসেছে ওরা ঝড় শুরুর আগেই বেরিয়ে গেছে। ফাহিম এখনো যায়নি। বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় আছে। ওস্তাদজী বিদায় দিয়েছেন আগেই। তবে এও বলেছেন, ‘এই ঝড় তুফানের মাঝে তোরা এখনই বের হোসনে। একটু থামলে পরে যাবি।’ কিন্তু আকাশের অবস্থা বলছে ঝড় আপাতত থামবে না। সময় যত পার হয় আঁধার আরও ঘনত্ব জড়িয়ে কালো বর্ণ ধারণ করছে। রাগিণী অস্থির হয়ে পড়ে। বাড়িতে মা চিন্তা করবে। তবলাবাদক রথীনের কাছ থেকে ছাতা চেয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। ফাহিম বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। রাগিণী যখন রেওয়াজ করে, ওর কণ্ঠের সুমিষ্ট সুরের ঘোরে তন্ময় হয়ে শোনে। তেমন কথাবার্তা হয়নি কখনো।
পিচ্ছিল কাদামাটিতে যতটা সম্ভব দ্রুত গতিতে হাঁটতে থাকে রাগিণী। প্রবল বেগে ঝড় বইছে। বাতাসের তোড়ে হাত থেকে ছাতা উড়ে গেছে আরও আগে। মনে সাহস রেখে সামনে কোনো একটা বড় গাছের নিচে খানিকটা সময় দাঁড়াবে ভাবল। ঠিক তখনই বড় বট গাছটার সামনে কালো একটি ছায়া, পথ আগলে দাঁড়ায়। থমকে দাঁড়িয়ে গেল রাগিণী।
প্রচণ্ড শব্দে বজ্রপাতে বিজলি চমকে উঠছে বারবার। বিজলির আলোয় যা দেখল ভয়ে হৃদপিণ্ড কেঁপে ওঠে রাগিণীর। অদূরে দণ্ডায়মান মুখোশে ঢাকা, কালো জোব্বা পরিহিত একজন হাতে ছুরি তাক করে আছে ওর দিকে। বিজলির আলোয় ধারালো বস্তুটা চিকচিক করছে। ‘কে তুমি? কী চাও আমার কাছে?’ - কাঁপা গলায় কোনোরকমে বলল। বিকট শব্দে হাসছে জোব্বা পরিহিত। বজ্রপাত, বিজলির চমক, প্রবল ঝড়-বৃষ্টির মাঝে সেই শব্দ ভয়ংকর ও হিংস্র শোনালো রাগিণীর কানে। ‘চাই তোর সুরেলা কণ্ঠটা চিরকালের জন্য স্তব্ধ করে দিতে।’ ‘কিন্তু কেন? কী অপরাধ আমার? সরে যাও। সরে যাও বলছি, আমায় বাড়ি ফিরতে হবে।’ - কাঁপা গলায় কোনোরকমে বলল রাগিণী। ‘নাহ! তোকে মরতেই হবে। সেদিন বলেছিলাম সরে যা এই পথ থেকে। আজ আর তোর বাড়ি ফেরা হবে না... হে হে হে...।’
স্কুল পড়ুয়া সময় থেকেই গল্পের বইপড়ার নেশা ছিল প্রবল। প্রকৃতিপ্রেম থেকে লেখালখির ঝোঁক। ছোটগল্প "প্রেরণা" একটি মাসিক পত্রিকায় প্রথম প্রকাশের মাধ্যমে শুরু হয় যাত্রা। দৈনিক আজাদী, বিভিন্ন সাময়িকী,ম্যাগাজিন ও সংকলনে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। লিখে চলেছেন একের পর এক ছোটগল্প, কিশোরগল্প এবং উপন্যাস। উপন্যাস “ দ্বীপান্তরে” “জল জোছনার সরোবরে” “নন্দিনী উপাখ্যান” “মন বিহঙ্গী’ গল্পগ্রন্থ “বালুচরে গাঙচিল” “ জল রঙে আঁকা” পাঠকপ্রিয়তা পায়। ভিন্ন আঙ্গিকে ব্যতিক্রমী উপস্থাপনা তাঁর লেখার অন্যতম দিক। অনেকটাই প্রচারবিমুখ তিনি মনে করেন লেখালেখির জগতটা ভিন্ন এক পৃথিবী। জন্মস্থান চট্টগ্রাম। বর্তমানে বসবাস করছেন ঢাকা।