জীবনের উজ্জ্বল সময় শৈশব ও কৈশোর। বয়সটা আলোর ঝলকানিতে ভরা। রঙিন ভালোবাসায়, আনন্দ-বেদনায়, মান-অভিমানে ও প্রীতিময়তায় উজ্জ্বল যেন সোনালি স্বপ্নময়। বলা যায়, ছেলেবেলার সবটাই সহজ সরল ও নির্মল। এই নির্মল চোখ দিয়েই জীবন ও জগৎকে চেনার সুযোগ ঘটে প্রথম। কৈশোরের অশেষ প্রশ্নমালার উত্তরই হয়তো বা এক সময় অধিকার সচেতনতার শিক্ষা দেয়। মৃত্যু ক্ষুধা বঞ্চনা আর নিপীড়নের মাঝেও আমাদের দেশের কিশোর-কিশোরীরা জীবন ও প্রকৃতিকে ভালোবাসে। ভালোবাসে কবিতা, ছড়া ও গান। আমাদের কবিতা ও ছড়ার রয়েছে ঐতিহ্যপূর্ণ অতীত। এদেশে কিশোর-কিশোরীদের জন্যে শৈশবের সেরা সময়ের কথা লেখা হয় খুব কম। আর্থ-সামাজিক দৈন্যের কারণে আবার এসব বিষয়ের লেখাগুলোও বেশি প্রকাশ পায় না। শৈশবের ভালোবাসার চোখ দিয়ে রচিত এ গ্রন্থে সেইসব অকথিত কাহিনীরই কথামালা প্রকাশ পেয়েছে। লেখক মুস্তাফা মজিদের জীবনের সিংহভাগই কেটেছে ঢাকার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৩ এই দীর্ঘ সময় লেখক মুস্তাফা মজিদ এ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক অধিকার আন্দোলনের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন। সত্তর দশকের গোড়া থেকেই ছোটদের জন্যে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন। ‘স্বাতীর কাছে চিঠি’ তাঁর কৈশোরের আবেগ, অনুভূতি ও সচেতনতারই প্রতিচ্ছবি। এতে প্রকৃতি ও জীবনের প্রতি ভালোবাসার কথা যেমন আছে, তেমনি আছে স্বাধীনতার সাহসী সৈনিক হবার শিক্ষা।
কবি ও গবেষক মুস্তাফা মজিদ এর রয়েছে ১০টি কাব্যগ্রন্থ। যথাক্রমে- ‘মেঘবতী সুবর্ণভূমি, “তােকে নিয়ে প্রেম প্রেম খেলা, কুসুমিত পঞ্চদশী’, ‘পুষ্পপত্রে নীলকণ্ঠ’, ‘জনযুদ্ধের কনভয়, ‘সাকিন সুবিদখালী’, ‘স্বাতীর কাছে চিঠি’, Diary of a Nepalese Guerrillas সম্পাদিত কবিতাসমগ্র ঃ মাও সেতুঙ এবং নিবেদিত কবিতা সংকলন ‘প্রাণিত রবীন্দ্রনাথ’ । এই কবি কবিতা লেখার পাশাপাশি বাংলাদেশে বসবাসরত। মঙ্গোলীয় ক্ষুদ্র নৃগােষ্ঠীর মানুষদের নিয়ে গবেষণার সঙ্গে সঙ্গে লােক প্রশাসন ও আমলাতন্ত্র নিয়েও গবেষণা করে আসছেন। বাংলাদেশের রাখাইন জাতিসত্তার আর্থ-সামাজিক ও প্রশাসনিক সমীক্ষা নিয়ে অভিসন্দর্ভ রচনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ ডি ডিগ্রী অর্জন করেন। যা বাংলাদেশের রাখাইন’ শিরােনামে বাংলা ভাষায় বাংলা। একাডেমী এবং The Rakhaines শিরােনামে ইংরেজি ভাষায়। ঢাকার মাওলা ব্রাদার্স থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় । ড. মুস্তাফা মজিদের এ পর্যন্ত রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থ সংখ্যা। ৪০ উর্ধ্ব। তার উল্লেখযােগ্য গ্রন্থের মধ্যে ত্রিপুরা জাতি। পরিচয়’, ‘পটুয়াখালীর রাখাইন উপজাতি', আদিবাসী রাখাইন’, ‘মারমা জাতিসত্তা' বাংলাদেশে মঙ্গোলীয়। আদিবাসী’, ‘গারাে জাতিসত্তহজং জাতিসত্তা’, আদিবাসী সংস্কৃতি (১ম ও ২য় খণ্ড), রূপান্তরের দেশকাল’, ‘সমকালের আত্মকথন’, ‘লােক প্রশাসনের তাত্ত্বিক প্রসঙ্গ’, ‘বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র', 'রাজনীতিতে সামরিক আমলাতন্ত্র’, ‘নেতৃত্বের স্বরূপ’, বাংলাদেশে বঙ্কিমচন্দ্র’, ‘মুক্ত ও মুগ্ধদৃষ্টির রবীন্দ্র বিতর্ক’ । আর ছােটদের জন্য রচিত ও সম্পাদিত গল্প গ্রন্থ। ‘দীপুর স্বপ্নের অরণি’, ‘জীবন থেকে’ ও ‘ছােটদের ৭টি মঞ্চ নাটক’ এবং জীবনী গ্রন্থ ‘রূপকথার নায়ক হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন’ ও ‘বঙ্গবীর ওসমানী। মার্কসীয় মুক্ত চিন্তার যৌক্তিক দৃষ্টবাদে অবিচল মুস্তাফা মজিদ কৈশােরে উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান এবং একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে। অংশগ্রহণসহ কৈশাের থেকেই নানা সাংস্কৃতিক আন্দোলনে। জড়িত । বাংলা একাডেমীর জীবন সদস্য, জাতীয় কবিতা পরিষদ, ছায়ানট, ঢাকা থিয়েটার ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য। এছাড়াও তিনি সত্তর ও আশির দশকে শিশু-কিশাের। সংগঠন গড়া ও নাট্য আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন । পেশায় প্রথমে সাংবাদিকতা এবং পরে ১৯৮৪ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত আছেন। বর্তমানে মহাব্যবস্থাপক ড. মুস্তাফা মজিদ ১৯৫৫ সালের ১৪ই এপ্রিল পটুয়াখালী জেলার সুবিদখালীতে জন্মগ্রহণ করেন । ভ্রমণ করেছেন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, সুইডেন, জার্মানী, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ড।