কবিতা হলো কবির শিল্পিত অনুভবের শব্দরূপ। সময়ে সেই ভাবের পরিবর্তন ঘটে। নতুন চিন্তার উদ্ভব হয়। সমাজের নানা অনুষঙ্গ যেমন সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং অন্তর্গত বোধের রূপান্তর তার কবিতায় রূপকল্পের আধারে নানাভাবে প্রকাশিত হয়। কবি হাবিব আহসানের কবিতার মূল সুর স্বতঃস্ফূর্ততা। জাগতিক বাস্তবতাকে শিল্পের মোড়কে পুরে উপস্থাপনের জন্য হাবিবকে নানাবিধ নিরীক্ষার আশ্রয় নিতে হয়। এক ধরণের লঘুস্বর ও স্যাটায়ারধর্মিতা সমসাময়িক অন্যান্য কবিদের থেকে তাকে পৃথক করেছে। পণ্যায়িত বিশ্বে আর্থসামাজিক দুরবস্থা তার ভেতরে যে রক্তক্ষরণ ঘটায় তা তার কবিতায় উচ্চকিত নয়, বরং অন্তর্মুখী ও শুদ্ধ শিল্পাঙ্গিকে তা উপস্থাপিত। ‘সোনা পণ্য ফুল পণ্য/রৌদ্র যদি কোনোদিন পণ্য হয়/কী নিয়ে তোমার কাছে যাব...‘এ ধরনের আর্তি শোনা যায়। একইভাবে নস্টালজিয়ায় বললেন, ‘আমার আম্মার জন্য/সবফুল চুপিসারে/জমা হয় বুকের গভীরে...।’ আবার ‘কবিতা দেয় না ভাত-কাপড়ের নিশ্চয়তা...’ এই বোধ তাকে তাড়িত করে। ছন্দে হাবিব বেশ দক্ষতার পরিচয় দেন। কখনো পয়ারে, কখনো মুক্তক অক্ষরবৃত্ত কিংবা স্বরবৃত্তের দোলায় তার কাব্য শিল্প-সফল। ছোট ছোট বাক্যে তা মর্মস্পর্শী। প্রশ্ন তোলেন-‘কবি যত কবি হতে থাকে/দূরে সরে থাকো তত-কেন?’ এভাবেই নানা প্রশ্ন পাঠকের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দিয়ে বলেন-’ তুমি নেই শূন্যতায় হু হু করে বুক...’। কবি অতীত, বর্তমানের সম্মিলনে ভবিষ্যতের এক সৌধ নির্মাণ করেন এবং উল্টা পুরাণের গল্প বুনে যান। ‘পাড়ভাঙা জলের চৌকাঠ’ কাব্যগ্রন্থের কবিকে নানামাত্রিকতায় আবিষ্কার করা যায়। তার কাব্যগ্রন্থটি প্রচল ধারার পরিপন্থী ভাবনার ফসল। কবিকে অভিনন্দন। _এজাজ ইউসুফী