কল্যাণী রায় ওরফে মমতাজ বেগমের জীবন ছিল সাহস ও আত্মত্যাগের এক বিরল দৃষ্টান্ত। এই নারী ভাষাসৈনিকের জীবন নিয়ে লেখা উপন্যাসটি পাঠককে শুধু যে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার স্বাদ দেবে, তা-ই নয়; জানা ইতিহাসের এক অজানা অধ্যায়ের সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দেবে। অভিজাত পরিবারে জন্মেছিলেন কল্যাণী রায়। বাবা ছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি। কল্যাণী ভালোবেসে একজনকে বিয়ে করেছিলেন, নাম বদলে হয়েছিলেন মমতাজ বেগম। তাঁর রায়বাহাদুর বাবা বিয়েটা মেনে নেননি। ফলে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় তাঁর। দেশভাগের পর শিশুকন্যাকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে পূর্ববঙ্গে চলে এসেছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের মর্গান গার্লস স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে। ভাষা আন্দোলনের শুরুতেই নিজ স্কুলের ছাত্রীদের নিয়ে মিটিং-মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। ফলে সরকারের রোষানলে পড়ে জেলে যেতে হয় তাঁকে। স্বামীর কথামতো দাসখত দিয়ে কারামুক্ত হতে চাননি। কারাগারে তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্রের সঙ্গে একই সেলে ছিলেন মমতাজ। এই কারাবাসের অভিজ্ঞতা তাঁর জীবনদৃষ্টি ও চেতনাকে এমনভাবে গড়ে দেয় যে ৪৪ বছরের আয়ুর বাকি দিনগুলো তিনি ব্যক্তিগত জীবনযাপনের ঊর্ধ্বে উঠে সমষ্টির কল্যাণব্রতে উত্সর্গ করেছিলেন। মমতাজ বেগমের জীবনে রয়েছে একই সঙ্গে এপিকের বিস্তার ও গভীরতা। তাঁর সেই অসাধারণ জীবন নিয়ে লেখা এই উপন্যাসটিকে আমাদের ইতিহাসের এক গৌরবময় সময়ের দলিলও বলা যায়।
Hasnat Abdul Hye জন্ম ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কলকাতায় । পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। স্কুল শিক্ষা কলকাতা, যশোর, ফরিদপুর শহরে। কলেজ শিক্ষা ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকস এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা লাভের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা । ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিসে যোগদানের পর প্রাক্তন পাকিস্তান সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। হাসনাত আবদুল হাই ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে ছোটগল্প রচনার মাধ্যমে। ছোটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ-কাহিনী, শিল্প ও সাহিত্য সমালোচনা এবং নাটক এই সব শাখায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন চার দশকের অধিককাল ।বাংলা এবং ইংরেজিতে একটি কবিতার বই লিখেছেন জাপানে প্ৰবাস জীবনে। প্ৰকাশিত ছোটগল্প গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ, উপন্যাস পঁচিশ এবং ভ্ৰমণ-কাহিনী ছয় । সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন অলক্ত পুরস্কার, মোহাম্মদ আকরম খাঁ বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। তাঁর লেখা উপন্যাস সুলতান ডাবলিন আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।