এক মলাটে দুই বই উত্তরণ কৌশিক সম্ভবত প্রেমে পড়বার মতো ছেলে নয়। তার জীবনে বুনো পাহাড়ি ঝর্ণার জল যেভাবে উথালপাথাল বেয়ে চলে, প্রেম ঠিক তেমন করে আসেনি। প্রেম ধরা দিয়েছে খুব অলক্ষ্যে, শেষ বিকেলে আলো নিভে যাবার মতো ভীষণ অগোচরে। অন্তত সিঁথুনের প্রতি তার বেড়ে ওঠা মায়াকে এভাবেই সজ্ঞায়িত করা যায়। দীর্ঘ এক নৈসর্গিকতার পরশ আছে যে বন্ধুত্বে, তাতে যেন লালসার ছিটেফোঁটা না লাগে, সেই ভয়েই তো সারাক্ষণ কুঁকড়ে থেকেছে। সেখানে আবেদন ঠিক কতখানি? ক্রিকেট কৌশিকের জন্য বরাবরই এক সাংঘর্ষিক বিষয়। সিঁথুনের থেকে ওটাকে কতখানি গুরুত্ব বেশি দিলে উতরে যাবে জীবনের আলপথ বেয়ে, সেটাই যেন মুখচ্ছবির মতো আমাদের চোখে ভাসে। কিংবা খেলা ছেড়ে পুরুষত্বের মতো এক রঙিন আস্ফালনের ভেতর ডুব দেওয়াই বুঝি শ্রেয়? যেখানে প্রেম ও কামনার মিলমিশ হলেও হতে পারে! উত্তরণ এমনই এক সংকটের কিনারে দাঁড়িয়ে আমাদের প্রেমার্থ শেখায়। বিরাগবরেষু পাথুরে মৃত্তিকা ভেঙে শ্যামলিমা যেমন জেগে ওঠে, বিরাগবরেষু উপন্যাসটিও তেমনি। কিন্তু এখানে ভেঙেছে প্রথা। বর্ণিত হয়েছে ক্ষুদ্রতার মাঝে নিহিত প্রাণশক্তির এক উত্থান উপাখ্যান। প্রতিটি চরিত্র কুটোটি আঁকড়ে ধরে আরেকটু ভালোভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছে। তালুকদার ও সায়নের অবলম্বন শুধুই ক্রিকেট, সামান্তা তার সন্তানের মাঝে খুঁজে ফিরছেন জাগতিক মুক্তি, ভালোবাসার অদৃশ্য খাঁচায় তিন্নির আস্ফালন যেন দেখেও কেউ দেখে না। এসব টানাপোড়েন নিয়েই তো জীবন। অথচ সেইসব জীবনের আলেখ্য লেখা হয় ভাগ্যের খেয়ালি ডায়রিতে। সে ডায়রির কোনো এক পাতায় একদিন মিলে যায় সব কাঙ্ক্ষিত ঠিকানা। তবুও সে ঠিকানায় কি মেলে স্বস্তি? বিরাগবরেষু, জীবন মানে কি তবে কেবলই...