চিরায়ত বা ধ্রুপদী কাব্যতত্ত্ব বা সাহিত্যতত্ত্বের ধারা সুদীর্ঘ কালের। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব চারশত বছরের বেশি সময় ধরে এই ধারা প্রবহমান। গ্রিক পণ্ডিত এরিস্টটল রচিত ‘পোয়েটিকস’-কে ধরা হয় বিধিবদ্ধ সাহিত্যতত্ত্বলোচনার সূচনা। এরিস্টটলই প্রথম সাহিত্য বা কাব্যতত্তে¡র বিষয়-আশয় পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার করে লিখিতরূপে উপস্থাপন করেছেন। এরপর এই সাহিত্যতত্ত্বালোচনা গ্রিসের সীমানা অতিক্রম করে ইতালির সীমানায় পৌঁছেছে। ইতালির হোরেস ও লঙ্গিনাসের হাতে এই তত্ত্বালোচনার নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। সাহিত্যতত্ত্বালোচনার সূচনা ফলক এরিস্টটলের ‘পোয়েটিকস’। এরিস্টটল তাঁর ‘পোয়েটিকস’ গ্রন্থে কেবল গ্রিক সাহিত্য বা গ্রিক সাহিত্যের প্রকরণাদি নিয়েই আলোচনা করেননি, আলোচনা করেছেন বিশ্বসাহিত্যের চিরন্তন ও মৌলিক বিষয় নিয়ে। উত্তর খুঁজছেন এইসব বিষয় নিয়ে উত্থাপিত নানা প্রশ্নের। ফলে ‘পোয়েটিকস’ কেবল গ্রিক সাহিত্য এবং গ্রিক ভাষাভাষীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, হয়ে উঠেছে সর্বজনীন এবং সর্বকালের স্বীকৃত বিষয়। আর এরিস্টটলের ‘পোয়েটিকস’ হয়ে আছে নিয়মতান্ত্রিক সাহিত্যালোচনার প্রথম প্রদীপ। প্রদীপ জ্বালানোর আগে যে সলতে পাকানো, তেল ও তৈলাধার জোগান, তেমনি সাহিত্যতত্ত্ব আলোচনার পেছন ফিরে তাকাতে হয় এরিস্টটলের গুরু প্লেটো এবং প্লেটোর গুরু সক্রেটিসের দিকে। সন্ধান করতে হয় তাঁদের সাহিত্য-ভাবনা বা চিন্তা। সে হিসেবে পাশ্চাত্য সাহিত্যতত্ত্বালোচনায় একই সূত্রে গেঁথে নিতে হয় সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল, হোরেস, লঙ্গিনাসকে। এই পঞ্চ পণ্ডিতের সাহিত্যতত্ত্বালোচনার ধারা সন্ধান করলে যেমন খুঁজে পাওয়া যাবে এক অবিচ্ছিন্ন যোগসূত্র তেমনি পাওয়া যাবে গতিশীল ধারাবাহিকতা। সাহিত্য-শিক্ষার্থীদের জন্যে এ এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাহিত্যতত্ত্ব বিশেষ করে পাশ্চাত্য সাহিত্যতত্তে¡র ধারা সন্ধানে বর্তমান প্রয়াস গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে বলেই আমাদের দিবশ্বাস। ‘পাশ্চাত্য সাহিত্যতত্ত্ব’ প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১৫-এর জানুয়ারিতে। এরপর দীর্ঘদিন ‘পাশ্চাত্য সাহিত্যতত্ত্ব’-র কোনো সংস্করণ প্রকাশিত হয়নি। বর্তমানে গ্রন্থটির পরিমার্জিত সংস্করণ প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সাহিত্য-শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে। এটি প্রকাশে উদ্যোগ নেওয়ায় ঐতিহ্য’র সত্বাধিকারী আরিফুর রহমান নাইমকে ধন্যবাদ। এই গ্রন্থ সাহিত্য-শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন মেটাতে সহায়ক হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। বদিউর রহমান
অধ্যাপক ও সাংবাদিক। ১৯৬৮-তে বাংলা ভাষা-সাহিত্যের অধ্যাপনায় যোগদান। বরিশাল সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ ও ব্রজমোহন কলেজ এবং খুলনা ব্রজলাল কলেজে চাকরি শেষে অবসর গ্রহণ জানুয়ারি ২০০৪-এ। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখি ও সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে দৈনিক বাংলাদেশ সময়-এর নির্বাহী সম্পাদক। কাজ করেছেন সাহিত্য-তত্ত্ব নিয়ে। লিখেছেন সাহিত্য স্বরূপ, সাহিত্য-সংজ্ঞা, অভিধান, ছন্দ অলঙ্কার রস-তত্ত্ব। এই সূত্র ধরেই প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সাহিত্য-তত্ত্ব সন্ধান। অনুবাদ করেছেন প্লেটোর কাব্য-ভাবনা, এরিস্টটলের পোয়েটিকস, হোরেসের আর্স পোয়েটিকা এবং লঙ্গিনাসের সাহিত্য-তত্ত্ব। এই চার যুগন্ধর পণ্ডিতের সাহিত্য-তত্ত্ব সমন্বয়ে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ধ্র“পদী সাহিত্য-তত্ত্ব। আরও অনুবাদ করেছেন এম এন রায়ের ইসলামের ঐতিহাসিক ভূমিকা ও নয়া মানবতাবাদ; র্যালফ ফক্স-এর উপন্যাস ও জনগণ এবং ই এম ফরস্টারের উপন্যাসের যত বিষয়। সম্পাদনা করেছেন অশ্বিনীকুমারের রচনাসংগ্রহ, মুকুন্দদাসের যত লেখা, মুকুন্দদাসের দেশগান, চারণকবি মুকুন্দদাস প্রসঙ্গ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত-র প্রহসন, পরশুরাম ও তার গড্ডালিকা, সত্যেন সেন ধ্র“পদী গণ-কথাশিল্পী, অগ্রন্থিত রণেশ দাশগুপ্ত ইত্যাদি গ্রন্থ।