আমাদের অর্থব্যবস্থায় যাঁরা নীতিনির্ধারকের অবস্থানে আছেন, কোভিড-উত্তর সময়ে নীতির চেয়ে অনীতির প্রয়োগে তাঁদের বেশি উত্সাহী দেখা যায়। এতে বাংলাদেশের মতো একটি সম্ভাবনাময় ও উন্নয়নমুখী অর্থনীতিতে লাভ নাকি ক্ষতির পরিমাণ বেশি হচ্ছে? সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজা ও সরস বিশ্লেষণ রয়েছে এই বইয়ে। বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির দুই পাপ, যা ঠেকাতে সরকারি নীতিনির্ধারকেরা তাত্ত্বিক নিষ্ঠা কিংবা সদিচ্ছার পরিচয় দিতে পারেননি—বিশেষত কোভিড-উত্তর সময়ের বাংলাদেশে। চলমান নীতি আর অনীতির দ্বন্দ্বে অনীতির জয় হয়েছে। সংকটে পড়েছে অর্থনীতি। বেড়েছে মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বৃদ্ধি কাঙ্ক্ষিত গতি অর্জন করতে পারেনি। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে গিয়ে জাতিকে উত্কণ্ঠায় ফেলেছে। প্রবৃদ্ধিও গেছে নেমে। বাংলাদেশের মতো একটি বিপুল সম্ভাবনাময় আর উন্নয়নমুখী অর্থনীতির জন্য যা শুভ ইঙ্গিতবহ নয়। এ ব্যাপারে নীতিনির্ধারকদের অজুহাত বৈশ্বিক বিচারে গ্রহণযোগ্য নয়। বৈশ্বিক বাস্তবতা ও শাস্ত্রীয় অর্থনীতির আলোকে এর প্রতিকার জানতে চাওয়ার আগ্রহ আমাদের জন্য স্বাভাবিক। নীতি-অনীতির এই দ্বন্দ্ব্ব এবং প্রাসঙ্গিক সব প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে সাজানো হয়েছে এই বই।
বিরূপাক্ষ পাল নিছকই এক জীবনপুরের পথিক। জন্ম ১৯৬৩-এর বসন্তে। ১৯৭১-এ নালিতাবাড়ী থেকে শরণার্থী হয়ে মেঘালয় গেলেন। তখন থেকেই নিসর্গের সান্নিধ্যে পথচলার আনন্দ। মমতাময়ী মায়ের পাশে থেকে পাঠের অভ্যাস। শিক্ষক পিতার প্রেরণায় প্রথম লেখালেখির সূচনা। কনিষ্ঠ ভ্রাতা উৎপলাক্ষের অকাল মৃত্যু তাকে সবচেয়ে বেদনার্ত করে—আবার ক্লান্তিবিহীন এগিয়ে যাবার ডাক দিয়ে যায়।। বর্তমানে বিরূপাক্ষ পাল কোর্টল্যান্ডস্থ নিউ ইয়র্ক রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির স্নাতক বিরূপাক্ষের প্রথম পেশা গৃহশিক্ষকতা, তারপর ব্যাংকিং। আনন্দ পান নি অসৃজনী ব্যাংকিংয়ের ঘানি টানতে। ছেড়ে দিয়ে রাস্তায় নামেন। মুক্ত লেখালেখি, চুক্তিভিত্তিক গবেষণা, শেষতক সাংবাদিকতা। অস্ট্রেলিয়া গিয়ে এই বেকারের আবার পথচলা। সিডনিতে বৎসরাধিক সরকারি চাকরি। এমবিএ শেষ করেন সিডনির প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আবার ব্যাংকে। ভাল লাগেনি – তাই শিক্ষার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গমন দু’হাজার দশকের শুরুতে। নিউ ইয়র্কের বিংহামটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি শেষ করে অধ্যাপনার কাজে এতদিনে থিতু হয়েছেন। মাঝে তিন বছরের জন্য দেশে এসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অর্থনীতিবিদের কাজ করেছেন। অতিথি শিক্ষক হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ-তে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়িয়েছেন। বিআইডিএস-এ ভিজিটিং ফেলোও ছিলেন। বিরূপাক্ষ তার স্ত্রী তমা পাল ও তিন সন্তান নিয়ে সংসার পেতেছেন পাহাড়ঘেরা কোর্টল্যান্ড শহরে। অর্থনীতি, বিতর্ক, রম্য ও ভ্রমণ – এ চার বিষয়ে তিনি লিখেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ সহজ কথায় অর্থনীতি, মুক্তবাজার অর্থনীতি, ম্যাক্রোএকোনোমিক পলিসি অ্যান্ড ইনস্টিটিউশন্স ফর গ্রৌথ ইন বাংলাদেশ, বিতর্ক ভুবন, প্রথম বিতর্ক কথা, দ্বন্দ্বসূত্র, মশার জন্য ভালবাসা (রম্য), রম্যলোকের সৌম্যসভা ও সিডনির পথে পথে। তার প্রিয় শখ লেখালেখি, সঙ্গীত ও বক্তৃতা।