পাশাপাশি দুটি স্রোতে এবং কালে প্রবাহিত এই উপন্যাসে চরিত্র শুধু মানুষ নয়, প্রকৃতির অন্যান্যরাও। একদিকে মহাপ্রকৃতি যে পুরো মহাজগতকে শাসন করছে, আরেকদিকে মহাপ্রকৃতিরই দৃশ্যমান রূপ-আমাদেরকে ঘিরে থাকা ক্রমশ ক্ষীয়মান বৃক্ষ-তরুলতা-নদী-সমুদ্র-মাটি সমৃদ্ধ প্রকৃতি। একদিকে আমাদেরকে ঘিরে থাকা পরিচিত জনজীবন, অভিজ্ঞতা আর চরিত্র। অন্যদিকে একটি মানুষ আজন্ম চেনা আমাদের মেট্রোপলিটনে বাস করেই আস্বাদন করে এক তীব্র ঐন্দ্রজালিক জীবন যা তাকে দেখিয়ে দেয় জগতের কাঁচা সারসত্যকে। উন্মাদ হতে হতে বেঁচে গিয়ে সে ওই ঘিলু সেদ্ধ করা সত্যকে ভালোবাসতে শেখে কারণ সেটা প্রাকৃতিক। প্রতিটি মানুষই শৈশব-কৈশোরে নানানভাবে প্রকৃতির মুখোমুখি হয় আর সেইসব প্রভাব তার জীবন দর্শনে ভূমিকা রাখে হোক তা মনমেজাজ, প্রেম, খাদ্যরুচি, বা যৌনরুচি। এই আখ্যানে স্বরূপাকে শরীর চেনায় বেজি, আবার এই বেজিই বিপরীতভাবে গঠন করে লিও'র জীবন দর্শন। প্রান্তিক মানুষ সাত্তারের জীবনদর্শন গঠন করে সপরিবারে নদী ভেঙে শহরে এসে ঠেকা জীবন। সুক্ষ্মরুচির অখিল জীবন, প্রেম আর যৌনতার শিক্ষা পায় এই ঠাসবুনোট রাজধানীর মাঝেই এক চিলতে জমিতে জীর্ণ অস্তিত্ব ধরে রাখা একটি কুঁড়েঘরে, অবাস্তব এক নারীকে ভালোবেসে। বনে কাটানো একটি প্রযুক্তিহীন রাতের শেষে সে মোক্ষলাভের মতো খুঁজে পায় জীবনের মর্মার্থ। প্রকৃতি আর মানব-প্রকৃতি কি পরস্পর বিরোধী? জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাণিরা শুধু হেরে যায় না, খাপও খাইয়ে নেয়। স্বাভাবিক শীত বিপন্ন হয়ে উষ্ণতা বেড়ে গেলে পেঁচাও ক্রমশ বদলে ফেলে তার পালকের রঙ, নিশাচর প্রাণিরা দিবাচর হয় উঠতে শেখে, শহুরে ইঁদুররা ফাস্ট ফুডে অভ্যন্ত হতে গিয়ে পাকস্থলির গঠন প্রণালী বদলে নেয়। বিবর্তিত হয় মানুষও। লেখক এখানে প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ককে দেখেছেন প্রকৃতির উপর কোনো কাল্পনিক রোমান্টিকতা আরোপ না করে। বেসাতি ও বসতি প্রকৃতি আর প্রাণির অবিচ্ছেদ্যতা সম্পর্কে মানুষের মোহভঙ্গের কাহিনি, মোহমুক্ত হয়ে মহাকালের প্রেক্ষাপটে নিজেকে চেনার এক পরাবাস্তব আখ্যান।