১৯৯৫ সালে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বিশ^ নারী সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘নারীর চোখে বিশ^ দেখুন’। নারীর চোখে বিশ^ দেখার মানে কী? সে বেশি দেখে? নারী ও পুরুষের চোখ সমান এবং দুটোই। তবে তাদের দেখার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। পুরুষের দেখায় থাকে স্থূলতা—নারীর থাকে কোমলতা। নারী দ্রুতই ঘটনার গভীরে প্রবেশ করে মূল বিষয় অনুধাবন করতে পারে, পুরুষ সেখানে সময় নেয়, মোটা চোখে দেখে। তবে এটাই একমাত্র সত্য নয়, নয় স্থায়ী সিদ্ধান্ত; এটি একটি মূল্যায়ন মাত্র। শিক্ষাবিদ, কবি, প্রাবন্ধিক ও ভ্রামণিক ড. ডি. এম. ফিরোজ শাহ্-র আলোচিত গ্রন্থ অন্য চোখে বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একটি ভিন্নধারার রচনা। একবিংশ শতকে বঙ্গবন্ধু নিত্যনতুন বিষয় হিসেবে স্বমহিমায় উপস্থাপিত হচ্ছেন। প্রসারিত হচ্ছে তাঁকে নিয়ে লেখার পরিসর ও গভীরতা। তাঁর জীবনের এক-পঞ্চমাংশ সময় কেটেছে জেলখানায়। তাই সমাজের বৃহত্তর পরিসরে মেশার পরিসর কম হলেও পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক নারীর সাথে তাঁকে মতবিনিময় করতে হয়েছে। এসব নারীর মধ্যে যারা তাঁর জীবনকে আলোকিত-আলোড়িত করেছেন তাদের মূল্যায়নকে এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব নারীর মধ্যে অনেকে তাঁকে সরাসরি দেখেননি বা সান্নিধ্যে আসেননি, তবুও তারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে হৃদিক মন্তব্য করেছেন তাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা থেকে, যা ইতিহাসের এক অমূল্য দলিল। অন্য চোখে বঙ্গবন্ধু গ্রন্থটি পাঠকমহলে সমাদৃত হবে—এ আশাবাদ রইল।
ড. ডি. এম. ফিরোজ শাহ্, জন্ম ০১ আগস্ট ১৯৬৯, কুতুবপুর, শিবচর, মাদারীপুরে। স্বনামধন্য চিকিৎসক পিতা ডা. মমিন উদ্দিন আহমেদ এবং মা রহিমা বেগমের ষষ্ঠ সন্তান তিনি। পেশা অধ্যাপনা। বর্তমানে তিনি সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন। একজন শিক্ষক প্রশিক্ষক হিসেবে দেশব্যাপী সুখ্যাতি থাকলেও ভালো লাগে নজরুলের দুরন্তপনা, শরৎচন্দ্রের বোহেমিয়ান জীবন, বুদ্ধদেবের নিসর্গ আর সৈয়দ মুজতবা আলীর দেশ ভ্রমণ। এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বহু দেশসহ বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছেন। মধ্যরাতের সুনসান নিরবতা আকর্ষণ করে প্রবলভাবে, খরতাপে ভিজতে ভালো লাগে, পাহাড়ের উচ্চতা আশা জাগায়, সমুদ্রের গভীরতা ভাবতে শেখায়। নদী-নারী-প্রকৃতি এ নিয়ে তাঁর কৃতি। মানব-মন, দ্বন্দ্ব, সংঘাত, প্রেম, ঈর্ষা আর আশা এ সবের প্রতি নিগূঢ় ভালোবাসা। নানা ধরনের রচনার সংখ্যা প্রায় ৪০টি। ১৯৯৬ সাল থেকে একাডেমিক গ্রন্থ রচনায় নিয়োজিত রয়েছেন। তাঁর বই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্বদ্যিালয় ও সরকারের টিকিউআই প্রকল্প কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। মিতা ট্রেডার্স থেকে প্রকাশিত বিএড কর্মসূচির আলোচিত বইসমূহ হলো- ভূগোল শিক্ষণ, মাধ্যমিক শিক্ষা, শিখন-শেখানো দক্ষতা ও কৌশল, শিক্ষায় গবেষণা ইত্যাদি। আগামী প্রকাশনী থেকে ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয় আলোচিত গল্পগ্রন্থ হৃদয়ে রক্তক্ষরণ এবং ২০০৭ সালে ইরাবতী। ২০১৯ সালে তাঁর আলোচিত ভ্রমণ কাহিনী ফিলিপাইন: রহস্যঘেরা এক মায়াবী দ্বীপরাষ্ট্র, ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাসংক্রান্ত কর্ম নিয়ে গবেষণামূলক গ্রন্থ বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন, ২০২১ সালে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ দশ রাজনীতিবিদ, ২০২২ সালে উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও গারো পাহাড়ের খোঁজে (ভ্রমণ কাহিনি) আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়।