মানবজাতির পথচলা শুরু হয়েছিল নারী—পুরুষের যৌথ পদযাত্রায়। কিন্ত সময়ের পরিক্রমায় পুরুষ অধিষ্ঠিত হয়েছে সুবিধাজনক অবস্থানে আর নারী পড়েছে ক্রমশ পিছিয়ে। পুরুষের কণ্ঠস্বর যতই ধাবিত হয়েছে উঁচুগ্রামে ততই ক্ষীণ হতে শুরু করেছে নারীর স্বর। এক পর্যায়ে উভয়ের অধিকার ও দায়িত্বের মাঝেও সৃষ্টি হয়েছে বৈষম্য, নষ্ট হয়েছে ভারসাম্য। বৈষম্য সামগ্রিকভাবে মানবজাতির অগ্রগতির শত্রু, ভারসাম্য বিনষ্ট হলেও জীবন থেকে মুছে যায় শান্তির সুবর্ণরেখা। মানবজাতি যখন বৈষম্যের কোলাহলে পীড়িত ও ভারসাম্যহীনতার অপঘাতে বিচলিত; সেই দুযোর্গময় মুহূর্তে আবির্ভাব ঘটে কোরআনের। কোরআনের কণ্ঠে বাঙ্ময় হয়ে ওঠে বিশ্বমানবতার অব্যক্ত আকুতি। পৃথিবীর সকল মানুষকে সমতার পাটাতনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে কোরআন ঘোষণা করে নারী ও পুরুষ একবৃন্তে ফোটা দুটি ফুল। তারা একে অন্যের পরিপূরক ও সম্পূরক। ‘নারীরা তোমাদের পোশাক, তোমরা নারীদের।’ এ হলো কোরআনের ঘোষণা। তারা একে অন্যের সৌন্দর্য, একে অন্যের নিরাপত্তার আবরণ, একে অন্যের শান্তিদাতা ও দায়িনী। কোরআনে নারী : ইতিহাস, দর্শন ও বাস্তবতা বইতে নারীকে পুনঃমূল্যায়ন করা হয়েছে বিজ্ঞান, দর্শন, মনস্তত্ত্ব, সামাজিক ও ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে, তাতে জীর্ণ খোলসের মতো খসে পড়েছে পুরনো সংস্কার এবং স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে নারীর স্বতন্ত্র রূপ ও বৈশিষ্ট্য যা পাঠক মনকে করবে নতুন ভাবনায় ঋদ্ধ, সমৃদ্ধ, উদার ও সংস্কারমুক্ত।
ড. আনিসুর রহমান ফারুক, জন্ম বাংলাদেশে। পেশায় শিক্ষক। শিক্ষাজীবনে অসাধারণ সাফল্যের অধিকারী, রাষ্ট্রপতিপদকপ্রাপ্ত। তিনি বাংলাদেশে ব্যবসায় প্রশাসনে বিবিএ, এমবিএ সমাপ্ত করে জাপান সরকারের মর্যাদাপূর্ণ মনবুশো স্কলারশিপে হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে ‘উন্নয়ন অর্থনীতি’—তে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ডের ক্যানটারবারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ও ব্যবসায়’ বিষয়ে পিএইচডি ও ২০২১ সালে ফিনল্যান্ডের Lut University থেকে একই বিষয়ে তিনি দ্বিতীয় ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশের নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি ফিনল্যান্ডের University of Vaasa—তে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। গবেষণায় সর্বোচ্চ স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন বেশ কিছু অ্যাওয়ার্ড: European International Business Academy Best Paper Award 2017, Vaasa Conference on International Business Best Paper Award 2019। তিনি দুটি আন্তর্জাতিক জার্নালের সহযোগী সম্পাদক এবং বেশ কয়েকটি জার্নালের সম্পাদকীয় রিভিউ বোর্ডের সদস্য। আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতনামা জার্নালে তাঁর পঞ্চাশের অধিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রকাশনীর ব্যানারে আছে তাঁর বেশ কিছু ব্যতিক্রমী বই। শিক্ষা, শিক্ষকতা ও গবেষণায় সাফল্যের পর একধরনের দায়বোধ থেকেই তাঁর ধর্ম নিয়ে গবেষণা, লেখালেখির শুরু। কোরআন নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে এতোটাই আলোড়িত হোন যে, তিনি তাঁর অনুভূতি এবং উপলব্ধির কথা বাংলাভাষাভাষি মানুষের কাছে পৌঁছানোকে নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করেন। একজন বিজ্ঞানমনস্ক গবেষকের চোখ ও মন দিয়ে ধর্মকে বিবেচনা করেন বলে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি উদার।